হৃদয়ের মতো ‘লাখো ছেলেদের আইডল’ মুশফিক
Published: 6th, March 2025 GMT
মুশফিকুর রহিম গতকাল রাতে ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁকে বিদায়ী বার্তা দিয়েছেন জাতীয় দলের সতীর্থরা। সৌম্য সরকার বাংলাদেশ ক্রিকেটকে দীর্ঘদিন ‘সার্ভিস’ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান মুশফিককে। তাওহিদ হৃদয় বলেছেন, মুশফিক তাঁর মতো লাখো ছেলেদের আইডল।
জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান সৌম্যর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল রাতে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের স্মৃতিগুলো স্মরণ করব। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।’
আরও পড়ুনমুশফিকের বিদায়বেলায় আবেগী মাশরাফি৪ ঘণ্টা আগে১৯ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭৪ ম্যাচ খেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী মুশফিক। ৩৬.
তাঁর প্রতি বিদায়ী বার্তায় জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘বগুড়া স্টেডিয়ামে আপনি প্র্যাক্টিস করছেন শুনে ছোটবেলায় আপনাকে দেখার আশায় স্টেডিয়ামের গেটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে শুরু করে, ওডিআইয়ের আন্তর্জাতিক ক্যাপ আপনার হাত থেকে গ্রহণ করা এবং একই ড্রেসিং রুম শেয়ার করা—আমার কাছে রূপকথার গল্পের থেকে কম নয়!! এ রকম লাখো ছেলেদের আইডল আপনি, যার জন্য আমার মতন অনেকেই আপনাকে একবার দেখবে বলে কত দিন অপেক্ষা করেছে। আপনি আমার আইডল, কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি, তা হয়তো বুঝতেও পারবেন না।’
আরও পড়ুন২৭৪ ম্যাচ, ১৮ বছরের ক্যারিয়ার..., যত রেকর্ড নিয়ে ওয়ানডে ছাড়লেন মুশফিক৪ ঘণ্টা আগেএকই পোস্টের নিচে ইংরেজিতেও কয়েকটি কথা লেখা হয়। বাংলায় অর্থটা এমন, ‘যদিও আমি ভাষাহীন ও স্তম্ভিত, অবসর সুখের হোক আমার আইডল মুশফিকুর রহিম। যে কারও থেকে, যেকোনো কিছুর চেয়ে আমি আপনাকে বেশি মিস করব।’
জাতীয় দলের আরেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘খুব মিস করব ভাই।’ জাতীয় দলের ওপেনার তানজিদ হাসানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘ক্রিকেটের প্রতি আপনার আবেগ, নিষ্ঠা ও লড়াকু মনমানসিকতা শুধু আমার জন্য নয়, বরং দেশের প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্যই অনুপ্রেরণার। শৈশবে টিভি স্ক্রিনে আপনাকে দেখে বড় হওয়া, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জন্মানো এবং পরবর্তী সময় আপনার সাথেই জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম শেয়ার করা আমার জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ প্রিয় মুশফিকুর রহিম ভাই।’
আরও পড়ুনওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা মুশফিকের১৫ ঘণ্টা আগেমুশফিক ওয়ানডে ছেড়ে দেওয়ায় একটি যুগের অবসান দেখছেন জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদ, ‘একটি যুগের অবসান! মুশি ভাই, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট কল্পনা করা কঠিন। আপনার প্যাশন, নিবেদন এবং লড়াকু মানসিকতা আমাদের জন্য প্রেরণার। আপনার সঙ্গে খেলা এবং আপনার কাছ থেকে শেখা আমার জন্য সম্মানের। পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা। আপনার লিগ্যাসী চিরকালীন।’
জাতীয় দলের আরেক পেসার শরীফুল ইসলামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখা হয়, ‘শুভ অবসর মুশফিকুর রহিম ভাই...আপনি আমার কাছে একজন অনুপ্রেরণার নাম। আমি যখন বোলিং প্রান্তে থাকি আপনি কিপিং প্রান্তে, সেই মুহূর্তটা মিস করব, সেই সময় যেভাবে সাপোর্ট করতেন ভালো ডেলিভারি করার জন্য সেটা অসাধারণ। আমার কাছে আপনি সব সময়ই সেরা। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এত সুন্দর সময় উপহার দেওয়ার জন্য। আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ভ র ফ য় ড ফ সব ক প জ জ ত য় দল র র জন য আপন ক আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁরা স্বাক্ষর করেছেন জুলাই সনদে।
কিন্তু ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ জমা দিয়েছে, সেখানে অনেক কিছুই বদলে গেছে। যেমন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট নেই।
এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, সব দল মিলে একমত হয়েছিল—এমন বিষয়ও নাকি কমিশনের সুপারিশে বদলে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, অফিস-আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রাখার বিধানটি বিলুপ্ত করার বিষয়ে সব দল একমত হয়েছিল।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে০১ নভেম্বর ২০২৫কিন্তু পরবর্তী সময়ে কমিশনের সুপারিশে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর বিধানটি বিলুপ্ত করার বিষয় সনদে রাখা হয়নি।
শুধু তা-ই নয়, এমন আরও অনেক বিষয় কমিশনের সুপারিশে যুক্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়নি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে পরবর্তী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।ঐকমত্য স্থাপন করতে গিয়ে এখন কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে কমিশন।
অভিযোগ উঠেছে, তারাই অনৈক্য স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কমিশন মূলত কালক্ষেপণ করেছে সংস্কারের নামে।
আদতে তাদের সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে তারা নতুন কোনো সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেননি, যা আসলেই কার্যকর করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ যেন ব্যর্থ না হয়৩০ অক্টোবর ২০২৫কমিশনে যেসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে তার বেশির ভাগই বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে আছে।
যেমন বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন করার প্রস্তাবনা বিএনপির ৩১ দফাতেই ছিল।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার পরিকল্পনা বিএনপি আগেই প্রচার করেছে।
নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পর্ক পুরোপুরি আলাদা করা ও ভারসাম্য আনার বিষয়ে বিএনপি একাধিকবার আলাপ করেছে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, কমিশন তেমন নতুন কোনো আলাপ সামনে আনতে পারেনি। ভবিষ্যতে যে নির্বাচিত সরকার আসবে, তাদের দুর্বল করতে নানা কৌশল বাস্তবায়নই যেন ছিল এই কমিশনের লক্ষ্য।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা। আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেওয়া যাবে না—এ যুক্তি দিয়ে কমিশন মূলত বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার নতুন অংশীদার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মধ্য দিয়ে।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে লুকোচুরি হলে ভালো হবে না২৭ অক্টোবর ২০২৫বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতার মুখে কমিশনে প্রস্তাবটি আর আলোচনায় রাখতে পারেনি। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যথেষ্ট অসংগতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নতুন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে।
চাইলেও আগামী জাতীয় সংসদ তাদের ইচ্ছেমতো সংবিধানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করতে পারবে না। এ থেকে পরিষ্কার, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম সংসদের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই সংবিধান পরিবর্তন বা সংস্কারে।
এর ফলে ভিন্নমতের অংশগ্রহণ, সংসদে আলোচনার গণতান্ত্রিক পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হতে হবে দেশকে। প্রকৃতপক্ষে সংবিধান বিষয়ে আগামীর নির্বাচিত সংসদকে ঠুঁটো জগন্নাথ-এ পরিণত করতে চাইছে কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করেছে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশনের শুরু থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করবে।
এই ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার সময় এটি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
যত দূর জানি, কমিশনে এ নিয়ে আলাপই করা হয়নি। তবে এই ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ও বাধ্য থাকবে হুবহু কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে। তাদের নিজস্ব কোনো মত, পরিবর্তন-পরিমার্জনের সুযোগ থাকছে না।
অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে একটি অনির্বাচিত প্রতিনিধিদল হিসেবে কার্যত ক্ষমতা ধারণ করবে।
কমিশন গণভোটের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে তাদের সুপারিশে। তারা এমনকি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা যায় বলে মত দিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্যযোগ্য এবং বাংলাদেশের বাস্তবতায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। গণধিক্কৃত দলে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে এখন নিষিদ্ধ। ইতিহাসের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে ইতিহাসের শিক্ষার কথা তাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।গণভোট আয়োজনে যেমন খরচের বিষয়টি আছে। তেমনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারসহ তার মিত্রদের ষড়যন্ত্রও থেমে নেই।
এ অবস্থায় গণভোট ব্যর্থ হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের বড় একটি দলকে নাখোশ রেখে গণভোট আয়োজন নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টিরই নামান্তর বলে মনে হচ্ছে।
কমিশনের আচরণে এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক যে কাউকে খুশি করতে এবং কাউকে রুষ্ট করতে এসব সুপারিশ আনা হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি গ্রহণযোগ্য, কার্যকর, বিভিন্ন মতের আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক সংসদ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
শুধু কাগজে-কলমে কিছু সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্নতি ঘটবে না। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট এবং কার্যকর সংসদ পারে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে।
কিন্তু সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা জাতীয় নির্বাচনকে নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। সরকার মুখে মুখে বলছে বটে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে; কিন্তু বাধাগুলো দূর করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে না।
দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। গণধিক্কৃত দলে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে এখন নিষিদ্ধ।
ইতিহাসের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে ইতিহাসের শিক্ষার কথা তাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক
*মতামত লেখকের নিজস্ব