‘কাইল বরের সাজে গেল আর আইজ সাদা কাপড়ে শ্মশানে ছেলেটা’
Published: 6th, March 2025 GMT
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সন্তোষ গৌড় মুন্না (২৭) চা-বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন। গতকাল বুধবার রাতে তাঁর বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। বরযাত্রী কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি মারা যান। তাঁর এমন মৃত্যুতে এলাকায় মাতম চলছে।
সন্তোষ গৌড় জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের রাজকি চা-বাগানের বাসিন্দা আশুক গৌড়ের ছেলে। এক ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে সন্তোষ বড় ছিলেন। দুই সন্তানকে ছোট রেখে তাঁদের মা মারা যান। পাশের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি চা–বাগানের এক শ্রমিকের মেয়ের সঙ্গে সন্তোষের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সন্তোষদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেয়ালঘেরা ছোট ঘরের ভেতরে, উঠানে ও সামনের রাস্তা লোকে লোকারণ্য। উঠানের এক পাশে বাঁশের তৈরি খাটিয়ায় সাদা কাপড়ে মোড়ানো তাঁর লাশ। স্বজন, প্রতিবেশীদের কেউ হাউমাউ করে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। এ মৃত্যু তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। শেষবারের মতো সন্তোষকে দেখতে ছুটে এসেছেন কনে ও তাঁর স্বজনেরাও। সন্তোষদের ঘরের সামনে মাটিতে নির্বাক হয়ে বসে ছিলেন কনে। সঙ্গে আসা স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় শ্মশানঘাটে।
সন্তোষের ছোট বোন দীপ্তি গৌড় কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘একটা মাত্র ভাই (সন্তোষ) ছিল। আত্মীয়স্বজন সবাই বিয়েতে আইলো। সবাই আনন্দ-ফুর্তি করল। বিয়া করি আইজ (আজ) নতুন বউ বাড়িতে নিয়া আওয়ার কথা। সব শেষ। ভাইটা সবাইরে কাঁদাইয়া ফাঁকি দিয়া চলি গেল।’
স্বজনেরা বলেন, বুধবার বিকেল চারটার দিকে বাড়ি থেকে বরযাত্রীরা একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা সাতটায় বিয়ের লগ্ন ছিল। কনের বাড়িতে পৌঁছার আগেই সন্তোষের বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। পরে স্বজনেরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে (স্ট্রোকে) সন্তোষের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল রাতে সন্তোষের লাশ নিয়ে স্বজনেরা বাড়িতে ফেরেন। আক্ষেপ করে রাজকি চা-বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সন্তোষদের মামা সুবোধ চাষা বলেন, ‘কাইল বরের সাজে আর আইজ সাদা কাপড়ে শ্মশানে গেল ছেলেটা। মনটারে সান্ত্বনা দিতে পারি না। কেউ পারছে না। আগে এলাকায় এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
এমন মৃত্যুর খবর পেয়ে সন্তোষদের বাড়িতে ছুটে আসেন স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলীম। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছি না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বজন র
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।