বছরের পর বছর সীমান্তজুড়ে উত্তেজনার পরও ভারত ও চীন ধীরে ধীরে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে এগোচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও দুই দেশের সামনেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, পারস্পরিক সন্দেহের বিষয়টিও এখনো রয়ে গেছে।

গত মাসের শেষ দিকে ভারতের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা চীন সফর করেন। এটিকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জুনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) বৈঠকের অংশ হিসেবে আলাদাভাবে চীন সফর করেন। রাজনাথের এ সফর ছিল গত পাঁচ বছরে চীনে কোনো জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তার প্রথম সফর।

এসসিও ১০ সদস্যের একটি ইউরেশীয় নিরাপত্তা জোট। ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তানও এই জোটের সদস্য।

ভারত-চীন উত্তেজনার মূল কারণ

ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত নয় এমন ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্ত। সীমান্তজুড়ে নদী, হ্রদ ও তুষারাবৃত পাহাড় থাকায় সীমান্তরেখা প্রায়ই স্থানান্তরিত হয়। এতে অনেক জায়গায় ভারত ও চীনের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে, যা থেকে কখনো কখনো সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘাতের পর সংকট চরমে ওঠে। এটি ছিল ১৯৭৫ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রথম প্রাণঘাতী সংঘর্ষ। এতে অন্তত ২০ ভারতীয় ও ৪ চীনা সেনা নিহত হন।

গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে দেশ দুটির সেনাদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান বা অচলাবস্থা দেখা দেয়।

জুনে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) বৈঠকের অংশ হিসেবে আলাদাভাবে চীন সফর করেন। রাজনাথের এ সফর ছিল গত পাঁচ বছরে চীনে কোনো জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তার প্রথম সফর।

তবে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাস্তব পরিস্থিতি দুপক্ষকে কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে উৎসাহিত করছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছরের শেষের দিকে দুই দেশ লাদাখের বিবাদপূর্ণ স্থানগুলোর বিষয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।

এ ছাড়া এ বছর জানুয়ারিতে দিল্লি ও বেইজিং সরাসরি বিমান চলাচল পুনঃস্থাপন করেছে। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর আরোপিত ভিসা বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়েও একমত হয়েছে তারা।

ওই মাসেই ছয় বছর পর ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতে অবস্থিত কৈলাস পর্বত এবং ধর্মীয়ভাবে পবিত্র বলে বিবেচিত একটি হ্রদ দর্শনের অনুমতি পেয়েছিলেন।

এরপরও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন।

২০১৮ সালে চীন সফরে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ন সফর স ঘর ষ র জন থ

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত অন্তত ১৭

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে কাবুল। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই পক্ষই জানায়, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে রাজি তারা।

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রথম দফার বৈঠক করেছে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।

এদিকে গতকাল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। এটা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে উদ্বেগজনক।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আফগান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ নবি ওমরি। তিনি বলেছেন, কাবুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। এসব গোষ্ঠীকে সমর্থনও করে না।

আফগানিস্তানে তিন স্থানে হামলা

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল জানায়, দেশটির পাকতিকা প্রদেশের পৃথক তিন স্থানে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি বলেন, পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন বারমাল, উরগুন ও খানাদার এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।

পাকতিকার প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলায় স্থানীয় তিন ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাত জানান, হামলায় নিহত সেই তিন ক্রিকেটার একটি ম্যাচ শেষে উরগুনে ফিরছিলেন।

গতকাল আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে কাবুল। তবে শান্তি আলোচনার বিষয়টি ভেবেই তাদের বাহিনীকে পাল্টা হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান বলছে ‘জঙ্গি আস্তানা’

এর আগে গতকাল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আফগান সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি সাত সেনা নিহত হয়েছেন।

আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা ইরফান আলী।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলাটি চালায় পাকিস্তানের নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ। এর জবাব দিতেই আফগানিস্তানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা নিশানা করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।

দোহায় শান্তি আলোচনা

গতকাল দোহায় প্রথম ধাপের বৈঠকের পর ইসলামাবাদ বা কাবুল এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল রাতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে।

একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। আজ সকালে আবার দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে।

পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আরও রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।

বৈঠক শুরুর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনায় মূলত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসান এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ