ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ কবি জন কিটস। তিনি রোমান্টিক কবিদের অন্তর্ভুক্ত এবং ইতিহাসের স্বল্পায়ু প্রতিভাবানদের একজন। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে প্রয়াত এ কবি মৃত্যুর পর খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ক্রমশ তাঁর ব্যক্তিগত দিনলিপি ও চিঠিগুলো প্রকাশিত হতে থাকলে কবিতার পাশাপাশি উঠে আসতে থাকে তাঁর অনন্য গদ্যসম্ভার। প্রেমিকা ফ্যানি ব্রাউনিকে লেখা জন কিটসের তিনটি চিঠি অনুবাদ করেছেন ইমরান খান 

৩ মে, ১৮২০
মঙ্গলবার সকাল
প্রেয়সী আমার,
গতকাল তোমার মায়ের সাথে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে একখানা চিঠি লিখেছিলাম। আজ সেটা পাঠাচ্ছি। কাজটা যদিও স্বার্থপরের মতো হয়ে যাচ্ছে, তবু পাঠাচ্ছি। জানি, চিঠিটা তোমাকে বেশ কষ্ট দিতে পারে। তোমাকে ভালোবেসে আমি কতটা যন্ত্রণা ভোগ করছি, আমি চাই তুমি তা দেখো। আমি তোমাকে প্ররোচিত করতে চাই যাতে করে তুমি তোমার হৃদয়টা পুরোপুরি আমাকে সমর্পণ করো। তোমার হৃদয় আমার হৃদয় হয়ে যাক, আর আমার হৃদয়ের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ তোমার ওপর নির্ভরশীল। হয়তো তোমার কিছুই যায় আসে না। তোমার নির্বিকার চোখে হয়তো একটি পলকও পড়বে না। কিন্তু আমি তোমার প্রতি আসক্ত। আমি ছাড়া তোমার চিন্তাজগতে আর কিছুই থাকুক, আমি সহ্য করতে পারি না। আমি নেই, এমন অস্তিত্ব যেন তোমার না হয়। আমাকে ভুলে যেও না। কিন্তু তুমি আমাকে ভুলে যাবে, এমন কথাই-বা আমি বলার কে? হতে পারে তুমি সারাদিন আমাকেই ভাবো। আমি না থাকলে তুমি অসুখী হবে, এমন ইচ্ছে পোষণ করাও কি আমার সাজে? তোমার অসুখী জীবন কামনা করাও যে আমার অপরাধ। হায়, যদি জানতে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার তীব্রতা কতখানি, তবে আমার এই অপরাধ ক্ষমা করতে পারতে। আমার শুধু একটিই চাওয়া– আমি তোমাকে যেভাবে ভালোবাসি, তুমিও আমাকে ঠিক তেমনি ভালোবাসবে। আমাকে ছাড়া আর কাউকে চাইবে না। গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত একটি মধুময় অনুভব আমাকে ঘিরে রেখেছে। স্রেফ অনুভব নয়, দৃশ্য যেন। এই পুরো সময়টা রাখালবালিকার পোশাক পরা তোমাকে যেন চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছিলাম। এই দৃশ্য আমার সমগ্র চেতনাকে কীভাবে যে ছুঁয়ে গেল, বলে বোঝাতে পারব না। বিনীত পূজারির মতো এই তোমাকে আমি একটানা দেখে চলেছি। দেখতে দেখতে আমার পোড়া চোখ জলে ভরে উঠছে। আজ সত্যিই আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে শুদ্ধ ভালোবাসাই একমাত্র পারে বন্য একটি হৃদয়কে বশ মানাতে। যখন শুনলাম তুমি একাই শহরে গিয়েছ, আমি ধাক্কা খেয়েছি, যদিও সেটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কথা দাও, আমি যতদিন সুস্থ না হচ্ছি, এমনটি আর করবে না। চিঠির উত্তরে পাতা ভরে শুধু সুন্দর আর প্রিয় নামে আমাকে ডেকো। যদি মন থেকে তা করতে না পারো, তাহলে যা মন থেকে আসে তাই লিখো। যদি এই পার্থিব জগৎ তোমার হৃদয় জুড়ে থাকে, তো তাই লিখো। হয়তো তখন আরও দূরে সরে গিয়ে তোমাকে দেখব। হয়তো আর কাছে আসা হবে না। ধরো, তোমার প্রিয় পাখিকে যদি খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিতে হয়, তাহলে তোমার হৃদয়ে কেমন ব্যথা বাজবে? পাখিটা উড়তে উড়তে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার পরেও বহুক্ষণ তোমার চোখ ভেজা থাকবে, তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোমার চোখ ব্যথা করবে, তবু না তাকিয়ে পারবে না। আমাকে জানিও, আমার পাশাপাশি আর কী কী তোমার জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ। সত্য জেনেই হয়তো সুখী হবো। দ্বিধান্বিত থাকার চেয়ে সত্যই বাঞ্ছনীয়। তুমি হয়তো অবাক হয়ে বলবে, আমি কত স্বার্থপর, কত নিষ্ঠুর যে তোমাকে যৌবন উপভোগ করতে দিচ্ছি না, তোমার দুঃখ কামনা করছি। যদি তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে আমি ছাড়া তোমার দুঃখীই হওয়ার কথা। তুমি ছাড়া আর কোনো কিছুই আমাকে পূর্ণ করতে পারবে না। যদি তুমি পার্টিতে গিয়ে আনন্দ করতে পারো, মানুষের সাথে হাসাহাসি করতে পারো, আর তাদের কাছ থেকে তোমার সৌন্দর্যের প্রশংসা আশা করো, তাহলে তুমি কখনোই আমাকে ভালোবাসনি। জীবনে তোমার প্রেমের নিশ্চয়তা না থাকলে আর কিছুই আমি চাই না। আমাকে বোঝাও যে তুমি আমাকে ভালোবাস। নইলে হয়তো আমি মনঃকষ্টেই মারা যাব। যদি আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি, তাহলে অবশ্যই আমরা অন্য নারী-পুরুষের মতো জীবন কাটাব না। সং সেজে ঘোরা আর তোষামোদি-গল্পগুজব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাস, তাহলে আমি না থাকলে তুমি মৃত্যুযন্ত্রণায় তড়পাবে। আমি দাবি করছি না যে অন্যদের চেয়ে আমি বেশি ভালোবাসতে জানি। আমার অনুরোধ থাকবে, তুমি আমার চিঠিগুলো পড়ো এবং ভেবে দেখো তোমার দেওয়া অনিশ্চয়তা আর কতদিন আমি সহ্য করতে পারব। তুমি যেন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করার জন্যই বিশেষভাবে সৃষ্ট হয়েছ। রোগমুক্তি কোনোভাবেই আমার জন্য কল্যাণকর হবে না যদি তুমি আমার না হও। ঈশ্বরের দোহাই, আমাকে প্রাণভিক্ষা দাও। অথবা বলো যে আমার এই তীব্র আবেগ তোমার কাছে ঘৃণ্য। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।
জন কিটস 

২.


কলেজ স্ট্রিট
প্রেয়সী আমার,
আমি বসবাস করছি আজকে, অথচ ডুবে আছি গতকালের স্মৃতিতে। সারাদিন বিভোর কেটে গেল। তোমার করুণার ওপরই যেন আমার বেঁচে থাকা নির্ভর করছে। এই চিঠির উত্তরে নিজেকে (আমার জন্য) লেখো যে তুমি আমাকে কখনও গতকালের চেয়ে কম ভালোবাসবে না। তুমি আমাকে বিমোহিত করেছ। তোমার মতো উজ্জ্বল আর কোমল এই জগতে আর কিছু নেই। ব্রাউন যখন একটা বানানো গল্পকে সত্যের মতো সাজিয়ে বলতে শুরু করল, আমার মনে হচ্ছিল তুমি যদি ওই গল্প বিশ্বাস করো, তাহলে আমি মরেই যাব। ভাগ্যিস সে নিজের কথা ফিরিয়ে নিয়েছিল। নইলে আমার মতো হতভাগা আর কে হতো? আবার কবে একান্তে সময় কাটাব আমরা? তোমার জন্য কয়েক হাজার চুমু জমিয়ে রেখেছি। পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু আছে, আমি জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ। যদি কখনও আমাকে অস্বীকার করো, ছেড়ে যাও, তাহলে প্রমাণ হবে যে পৃথিবী একটি দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। তখন আমাকে প্রমাণ করতে হবে যে আমি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি। যদি গতকাল তুমি আমাকে ভুল বুঝে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে, বিশ্বাস করো, আমি কোনো আত্ম-অহমিকায় ভুগতাম না। আত্মসমর্থনও করতে পারতাম না। আমি সত্যিকার অর্থেই ভেতর থেকে শেষ হয়ে যেতাম। ওই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। সকালে মিসেস ডাইকের সাথে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যে কোনো দিন তিনি আমার সাথে যেতে পারবেন।

তোমারই
জন কিটস

৩.
গ্রেট স্মিথ স্ট্রিট
মঙ্গলবার সকাল
ফ্যানি, প্রিয়তমা,
তিন দিনের স্বপ্নের পর জেগে উঠলাম, দেখলাম আমি কতটা অলস আর অবিবেচক। গত রাতে আমার অবস্থা ছিল করুণ। সকালে অবশ্য ভালোই লাগল। আমাকে ব্যস্ত থাকতে হবে, অন্তত ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। আগামীকাল সকালের ব্যাপারটা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলা খুব জরুরি। আমার মনে হয়, মিসেস ডাইক তোমাকে বলবেন যে আমি হ্যাম্পস্টেডে বাস করার পরিকল্পনা ফেঁদেছি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার জন্য খুব জরুরি। এ ছাড়া আমাকে দিয়ে কোনো কাজই হবে না। বাঁচলে ভালোবাসার জন্যই বাঁচতে হবে। নইলে মৃত্যুই শ্রেয়। এর বাইরে আর কিছু করারই আমার প্রবৃত্তি নেই। আমার কেবলই মনে হয় তুমি হয়তো একদিন আমাকে আর ভালোবাসবে না, আমার প্রতি নিষ্ঠুর হবে। জানি মাঝেমধ্যে তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করেই এসব কথা বলো, তবু আমার বুক কেঁপে ওঠে। আসলে জানিই না আমি কী লিখছি তোমাকে কী বা লেখা যায়।

চিরদিনের তোমার
জন কিটস v

#

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র জন য ব স কর আর ক ছ আম র স আম র প গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

কালিয়াকৈরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। রবিবার (১৫ জুন) সকালে উপজেলার সাহেববাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, গত ১৪ জুন কালিয়াকৈর উপজেলা, পৌরসভাসহ জেলার আটটি ইউনিটের কমিটি বাতিল করে গাজীপুর জেলা বিএনপি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। পরে শনিবার (১৪) সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভার কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সিকদার, সদস্য সচিব করা হয়েছে এম আনোয়ার হোসেনকে। কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে মামুদ সরকার ও সদস্য সচিব করা হয়েছে মহসিন উজ্জামানকে। 

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ গ্রুপ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন । আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে শনিবার (১৪ জুন) রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পারভেজ গ্রুপের কর্মীরা।

একই দাবিতে রবিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পারভেজ আহমেদের পক্ষ নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময়ে নতুন কমিটির পক্ষ থেকে আরেকটি মিছিল বের হলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়। 

পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সকাল থেকে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া হলেও এখনো পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। 
 

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ