আজিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও জাতিসংঘ স্বীকৃত দিবসটি উদযাপিত হইতেছে। রমজানের কারণে অন্যান্য বৎসরের ন্যায় আড়ম্বর না থাকিলেও এই বৎসর দিবসটি উদযাপনের গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নহে। বিশেষ করিয়া একদিকে যখন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই বার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করিয়াছে–‘অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন/ নারী ও কন্যার উন্নয়ন’ এবং অন্যদিকে অনেকাংশে সরকারেরই জোরদার ভূমিকার অনুপস্থিতে শহরে-গ্রামে নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার সহিংসতা চলিতেছে, তখন নারী দিবস চিরাচরিত আনুষ্ঠানিকতার ঊর্ধ্বে উঠিয়া আমাদের নিকট বিশেষ তাৎপর্য লইয়া হাজির হয়। আমাদের জানাইয়া দেয় সংবিধানস্বীকৃত নারীর অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করিবার জন্য এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হইবে।
সন্দেহ নাই, এই দেশে বিশেষত গত তিন দশকে রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি বিশ্বের সমপর্যায়ের তো বটেই, আর্থিক বা অন্যান্য বিবেচনায় অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রেরও নিকট রীতিমতো ঈর্ষার বিষয়। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃস্থানীয় ভূমিকাও লক্ষণীয়। প্রশাসনের সর্বস্তরে নারীর উপস্থিতি উক্ত সময়ে উত্তরোত্তর বাড়িয়াছে। সেবা খাতসহ অন্যান্য চাকুরিতেও তাহারা আগাইয়া যাইতেছে। আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বলিতে গেলে নারীরই উপর দাঁড়াইয়া আছে। কৃষিতেও নারীর অংশগ্রহণ অতীতের যে কোনো সময় অপেক্ষা বেশি। প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ কন্যাশিশুর অংশগ্রহণ ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাইয়াছে। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে নারী শিক্ষার্থীরা সাফল্য দেখাইতেছে। ছেলেদের পাশাপাশি নারীরা খেলাধুলায় যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখিতেছে উহাও বিশ্বে অন্যতম আলোচনার বিষয়। কিন্তু ইদানীং খোদ রাজধানীতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় ধর্মীয় বিভ্রান্তির শিকার মহল কর্তৃক নারীরা যেই সকল বাধা ও নিপীড়নমূলক ঘটনার শিকার হইতেছে, ইহাতে এই সন্দেহ পোষণ অমূলক নহে যে, নারীর অগ্রগতি বুঝি অচিরেই থামিয়া যাইবে, এমনকি নারী বুঝি সেই শত বৎসর পূর্বের পুরুষতন্ত্রের সৃষ্ট ঘেরাটোপেই আটকা পড়িবে। দেশে গত কয়েকদিন যাবৎ বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক নারীকেন্দ্রিক আয়োজন বন্ধ হইবার ঘটনা ঘটিয়াছে। কথিত তৌহিদি জনতা নামক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জয়পুরহাট, দিনাজপুরসহ বহু স্থানে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। অতি সম্প্রতি অনুরূপ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে ঢাকা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে বিনোদন জগতের নারীরা তাহাদের নির্ধারিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইতে পারেন নাই। প্রতিষ্ঠার পর হইতে জাতির বাতিঘর রূপে অভিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় প্রতিষ্ঠানেও নারী শিক্ষার্থীর পোশাক পছন্দের স্বাধীনতা ওই একই গোষ্ঠীর দ্বারা লঙ্ঘিত হইয়াছে।
নারী অধীকার খর্ব করিবার এহেন ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন স্বাধীনতার ৫৪ বৎসর পরও নারীদের রাষ্ট্র ও সমাজের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যজাত নানাপ্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে হইতেছে। ২০২২ সালে ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নারীদের অপুষ্টির দুষ্টচক্রে আটকা পড়িবার কথা জানাইয়াছিল। ইহাতে উন্নতি ঘটিয়াছে বলিয়া কোনো তথ্য নাই। সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার প্রশ্নেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নাই। বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে এবং এমনকি ফুটবল ও ক্রিকেটের ন্যায় ক্রীড়াক্ষেত্রেও সতীর্থ পুরুষ খেলোয়াড়দের তুলনায় নারীর বেতন কম। বিশেষত নগরীতে নারীর জন্য নিরাপদ শৌচাগারের ব্যবস্থা নাই, ট্রেনে-বাসে নারী ও কন্যাশিশুদের ধর্ষণের ঘটনা কম নহে। স্কুল-কলেজ বা কর্মস্থলগামী নারীর জন্য গণপরিবহন যেন এক আতঙ্কের নাম। বাল্যবিবাহের ব্যাপকতাও উদ্বেগ ছড়াইয়া যাইতেছে।
অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন প্রায় সকল সরকারই অন্তত মৌখিকভাবে স্বীকার করিয়াছে, নারীর জন্য বিনিয়োগ কার্যত দেশ ও জাতির জন্য বিনিয়োগ। উপরন্তু, প্রতি বৎসর ৮ মার্চের আলোচনা সভায়ও সকল স্থানে নারীর নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। তাই প্রত্যাশা, এই বারের নারী দিবসে কথার ফুলঝুরির পরিবর্তে দিবসটির প্রতিপাদ্য কার্যকর হউক।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন য ন য র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল কিশোরী, সাপের কামড়ে মৃত্যু
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সাপের কামড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে একটি বিষধর সাপ ছোবল দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।
নিহত কিশোরীর নাম নাঈমা আকতার (১৩)। সে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামের বক্সি মিয়াজিবাড়ির মোহাম্মদ হাসানের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নাঈমা। রাত তিনটার দিকে সাপের ছোবলে তার ঘুম ভাঙে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তাকে উদ্ধার করে রাতেই আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাঈমাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে নাঈমার চাচা কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘সাপে কামড় দিয়েছে জানার পর আমরা নাঈমাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপে কামড় দেওয়া এক কিশোরীকে হাসপাতালে আনা হয়ছিল। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।