কুমিল্লা মেডিকেলের বারান্দার বেড থেকে পড়ে রোগীর মৃত্যু
Published: 8th, March 2025 GMT
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচতলার বারান্দায় থাকা অরক্ষিত অতিরিক্ত বেড থেকে পড়ে ওসমান গনি (৪৭) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, সার্জারি বিভাগের পাঁচতলার বারান্দায় থাকা অতিরিক্ত বেড থেকে পড়ে গিয়ে ওসমান গনির মৃত্যু হয়। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান গনির স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, শুক্রবার রাতে ওসমান গনির শরীর খারাপ লাগছিল। ঘুম না আসায় বেডের সঙ্গে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন তিনি। বেড বারান্দায় থাকায় পাশে কোনো লোহার গ্রিল বা সুরক্ষা ছিল না। বেড থেকে সামান্য উঁচুতে কোমরসমান দেয়ালের রেলিং ছিল। পরের অংশটুকু খোলা অরক্ষিত। রাত প্রায় ১২টার দিকে হেলান দেওয়া অবস্থায় মাথা ঝোঁকার কারণে হঠাৎ নিচে পড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তাঁর পা কোহিনুরের শরীরে লাগে। তিনি তাঁর পা জাপটে ধরে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি।
নিহত ব্যক্তির পরিবার ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে হাতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে আসেন ওসমান গনি। হাসপাতালের শয্যা খালি না থাকায় শয্যা পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু মূল শয্যা না পেয়ে দালালের মাধ্যমে ৫০০ টাকার বিনিময়ে বারান্দায় থাকা অরক্ষিত ওই অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করে ভর্তি হন তিনি।
হাসপাতালে থাকা কয়েকজন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ তাঁরা একটি বিকট শব্দ শোনার পর নিচে গিয়ে গনি মিয়াকে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার পর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা দ্রুত চলে যান। হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড মাস্টার ওই বেডটি দ্রুত সরিয়ে নেন।
ওসমান গনির স্ত্রী কোহিনুর বেগম অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?’
ঘটনার পর আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব বিষয়ে জানতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ পারভেজ, উপপরিচালক মো.
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫০০টি। এর মধ্যে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ১ হাজার ২০০–এর বেশি। বেড–সংকটের কারণে রোগীদের বারান্দাসহ মেঝেতে স্থান দিতে হচ্ছে। রোগীর অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকালে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে রাত ১২টার দিকে। আমরা খবর পেয়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকে পাইনি। ঘটনার পরপরই মরদেহ বাড়ি নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। পরে আমি নিহত রোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। স্বজনেরা এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। তাঁদের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয়নি।’
ওসি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। তবে রোগীর স্বজনেরা যদি পরবর্তী সময়ে কোনো অভিযোগ করেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বজন র ঘটন র প ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে