কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচতলার বারান্দায় থাকা অরক্ষিত অতিরিক্ত বেড থেকে পড়ে ওসমান গনি (৪৭) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, সার্জারি বিভাগের পাঁচতলার বারান্দায় থাকা অতিরিক্ত বেড থেকে পড়ে গিয়ে ওসমান গনির মৃত্যু হয়। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান গনির স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, শুক্রবার রাতে ওসমান গনির শরীর খারাপ লাগছিল। ঘুম না আসায় বেডের সঙ্গে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন তিনি। বেড বারান্দায় থাকায় পাশে কোনো লোহার গ্রিল বা সুরক্ষা ছিল না। বেড থেকে সামান্য উঁচুতে কোমরসমান দেয়ালের রেলিং ছিল। পরের অংশটুকু খোলা অরক্ষিত। রাত প্রায় ১২টার দিকে হেলান দেওয়া অবস্থায় মাথা ঝোঁকার কারণে হঠাৎ নিচে পড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তাঁর পা কোহিনুরের শরীরে লাগে। তিনি তাঁর পা জাপটে ধরে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পারেননি।

নিহত ব্যক্তির পরিবার ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে হাতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে আসেন ওসমান গনি। হাসপাতালের শয্যা খালি না থাকায় শয্যা পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু মূল শয্যা না পেয়ে দালালের মাধ্যমে ৫০০ টাকার বিনিময়ে বারান্দায় থাকা অরক্ষিত ওই অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করে ভর্তি হন তিনি।

হাসপাতালে থাকা কয়েকজন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ তাঁরা একটি বিকট শব্দ শোনার পর নিচে গিয়ে গনি মিয়াকে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার পর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা দ্রুত চলে যান। হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড মাস্টার ওই বেডটি দ্রুত সরিয়ে নেন।

ওসমান গনির স্ত্রী কোহিনুর বেগম অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?’

ঘটনার পর আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এসব বিষয়ে জানতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ পারভেজ, উপপরিচালক মো.

শাহজাহান, সার্জারি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তাঁরা কোনো সাড়া দেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫০০টি। এর মধ্যে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ১ হাজার ২০০–এর বেশি। বেড–সংকটের কারণে রোগীদের বারান্দাসহ মেঝেতে স্থান দিতে হচ্ছে। রোগীর অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার সকালে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে রাত ১২টার দিকে। আমরা খবর পেয়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাউকে পাইনি। ঘটনার পরপরই মরদেহ বাড়ি নিয়ে গেছেন স্বজনেরা। পরে আমি নিহত রোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। স্বজনেরা এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। তাঁদের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয়নি।’

ওসি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। তবে রোগীর স্বজনেরা যদি পরবর্তী সময়ে কোনো অভিযোগ করেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজন র ঘটন র প ন র পর

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪

কুমিল্লায় চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ বলেন, “গত দুইদিনে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ শনিবার আরো একজনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।”

তিনি বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কুমিল্লা নগরের, কেউ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সবার নমুনা কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছিল।”

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রামে আরো ১ জনের করোনা শনাক্ত 

কিট সংকটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ

ডা. বশির আহমেদ বলেন, “আক্রান্তদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। দুইজন ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কুমিল্লায় নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন নগরবাসী। হঠাৎ একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জনমনে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই মাস্ক পরছেন এবং সাবধানতা অবলম্বনের চেষ্টা করছেন। তবে, গণপরিবহন, বাজার কিংবা ওষুধের দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা দেখা যায়নি।

কুমিল্লা শহরের বাসিন্দা আমেনা আক্তার বলেন, “আবার যেন সেই দিনগুলো ফিরে আসছে। দোকান-বাজারে মাস্ক ছাড়া মানুষ চলাফেরা করছে। আমরা তো আরেক দফা লকডাউনের ভয়ে আছি।”

সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রচার অভিযান চালানো হবে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডাক্তার সানজিদুর রহমান বলেন , “করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা অবহেলার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অবস্থা জটিল হতে পারে।”

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কুশ  বড়ুয়া বলেন, “করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ১
  • রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি
  • গুম করা হতো তিনটি ধাপে 
  • এক মৃত্যুপথযাত্রী পিতার থেকে ২০টি শিক্ষা
  • রেনু বেগমের ‘বুকভাসা চোখের পানি’ কেন
  • ইরান অনড়, ইসরায়েল কঠোর
  • ইরানে নিরাপদে আছেন ৬৬ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  • নীরব ভালোবাসার আরেক নাম
  • নারীবাদের ছদ্মবেশে ভারত যখন যুদ্ধ চালায়
  • কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪