ওটা জন্টি রোডসই তো, নাকি!

টিভি কিংবা মুঠোফোনের স্ক্রিনে প্রথম দেখায় চেনা কঠিন। স্ট্রেট অঞ্চলে ওপর থেকে ক্যামেরা ধরায় মুখটা শুরুতে দেখা যায়নি। শেন ওয়াটসনের জোরালো শটে বল একবার বাউন্স খেয়ে সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই লং অফ থেকে দৌড়ের ওপর বাজপাখির মতো ডাইভ দিয়ে বল হাতে জমিয়ে ফেললেন ফিল্ডার। ডাইভ দেওয়ার ধরনটা পরিচিত।

আরও পড়ুনইংল্যান্ডের নাগরিক হয়ে আইপিএলে কোহলির দলে খেলতে চান আমির১ ঘণ্টা আগে

অতিরিক্ত কোনো ‘শো অফ’ নেই, রানওয়েতে বিমানের মসৃণ অবতরণের মতোই ডাইভের ল্যান্ডিং এবং তারপর বিমানের মতোই ট্যাক্সিং করতে করতে কিছুটা এগিয়েও গেলেন। একটু বয়স্কদের কাছে এই দৃশ্য হয়তো চেনা চেনা লেগেছে। আরে, রোডসের মতোই তো.

..হ্যাঁ, রোডসই! ক্যামেরা ধরার পর মুখটা পরিষ্কার দেখা গেল। ৫৫ বছর বয়সেও সেই একহারা শরীর, ক্ষিপ্রতা আগের মতো না হলেও যতটুকু দেখা গেল, যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর চোখের আরামের জন্য যথেষ্ট!

ঘটনাটা গতকাল ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স লিগে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে। রোডসের ডাইভ দিয়ে বাউন্ডারি ঠেকানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নব্বইয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা তা দেখে নিশ্চয়ই নস্টালজিক হয়েছেন? সেই সময়ে পয়েন্টে রোডসের স্রেফ একটি ডাইভ দেখার জন্যও কেউ কেউ হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার গোটা ম্যাচই দেখেছেন। ‘ফ্লাইং বার্ড’ হতাশ করেননি। তখন কেউ কেউ বলতেন, ‘পয়েন্টে জন্টির ডান দিকে ১০ হাত, বাঁ দিকে ১০ হাত—সেফ জোন।’ শুধু কী বল ঠেকানো কিংবা ক্যাচ নেওয়া? সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট কিংবা, দৌড়ে ব্যাটসম্যানের আগে স্টাম্পের কাছে গিয়ে বিমানের মতো ল্যান্ডিংয়ে সবকিছু ভেঙে ফেলা—আহ, কত সব স্মৃতি, আহ জন্টি!

ক্রিকেট যুগে যুগে দুর্দান্ত সব ফিল্ডার উপহার দিয়েছে। জন্টির সমসাময়িক এমন অনেকেই আছেন। রিকি পন্টিংয়ের কথাই ধরুন। শরীরটা বেশ মুটিয়ে গেছে। কিংবদন্তিদের ম্যাচেও তাঁকে দেখা যায় না। সেটাও অস্বাভাবিক কিছু না। অবসর নেওয়ার পর খেলোয়াড়েরা জীবনটাকে একটু বাজিয়ে দেখবেন, ফিটনেসে সেভাবে নজর দেবেন না, পছন্দের খাবারগুলো খাবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ৫৫ বছর বয়সী জন্টিকে দেখলে একটু অবাকই লাগে। এই বয়সেও কী ফিটনেস, ডাইভে কী ক্ষিপ্রতা ও সৌন্দর্য! মনের ডায়েরির পাতাগুলো ওলটাতে ওলটাতে পেছন ফিরে তাকিয়ে যদি স্মরণ করার চেষ্টা করা হয়, এই ক্ষিপ্রতার কথা ক্রিকেটবিশ্ব প্রথম জেনেছিল কবে?

আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে কোহলি যেসব মাইলফলকের সামনে২ ঘণ্টা আগে

জন্টি প্রথম কবে ডাইভ দিয়েছিলেন, সেটা তো আর জানার উপায় নেই। তবে একটি ম্যাচে তাঁর অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে ক্রিকেটবিশ্ব বুঝেছিল, ‘সামওয়ান হ্যাজ অ্যারাইভড!’ অর্থাৎ, ক্রিকেটে এমন কারও আবির্ভাব ঘটেছে ফিল্ডিংয়ে যে ‘স্পেশাল’—পরবর্তীতে তো এমন হয়ে উঠলেন যে শুধু ফিল্ডিংয়ের জন্যই যেকোনো দল তাঁকে লুফে নেবে! তো, সেটা কোন ম্যাচ, যেদিন লোকে প্রথম জন্টিকে চিনেছিল আলাদা করে?

১৯৯২ বিশ্বকাপ। ব্রিসবেনে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। সে বিশ্বকাপে জন্টির আন্তর্জাতিক অভিষেক। ব্রিসবেনের ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেললেও ফিল্ডার জন্টিকে সেভাবে চোখে লাগেনি। লাগল পাকিস্তান ম্যাচে। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২১১ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাড়া করতে নেমে ৩১তম ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ যখন ২ উইকেটে ১৩৫, ব্রায়ান ম্যাকমিলানের বলে লেগে খেলে বল ব্যাটে পাননি ইনজামাম-উল-হক। লেগ বাইয়ে রান নেওয়ার আশায় দৌড়ে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন। অপর প্রান্তে পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান শুরুতে কয়েক পা এগিয়ে গেলেও বিপদ বুঝে থেমে যান। ইনজামাম তখন ঘুরে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটুকু সময়ের মধ্যে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো নীল চোখের এক তরুণ বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়, শুধু ফিল্ডিং দিয়েই কীভাবে অমরত্ব পাওয়া যায়!

ক্যামেরায় রোডসের শরীরের অর্ধেকটুকু ধরা গিয়েছে। ইনজামাম ক্রিজে ফেরার আগেই শূন্যে থাকতেই স্টাম্প ভাঙেন রোডস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইনজ ম ম প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল কিশোরী, সাপের কামড়ে মৃত্যু

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় সাপের কামড়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই কিশোরীকে একটি বিষধর সাপ ছোবল দেয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় তার।

নিহত কিশোরীর নাম নাঈমা আকতার (১৩)। সে আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের সরেঙ্গা গ্রামের বক্সি মিয়াজিবাড়ির মোহাম্মদ হাসানের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নাঈমা। রাত তিনটার দিকে সাপের ছোবলে তার ঘুম ভাঙে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তাকে উদ্ধার করে রাতেই আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাঈমাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে নাঈমার চাচা কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘সাপে কামড় দিয়েছে জানার পর আমরা নাঈমাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপে কামড় দেওয়া এক কিশোরীকে হাসপাতালে আনা হয়ছিল। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ