‘বিমান’ নামল স্টাম্পের ওপর, ধূলিসাৎ স্টাম্প থেকে ইনজামাম
Published: 8th, March 2025 GMT
ওটা জন্টি রোডসই তো, নাকি!
টিভি কিংবা মুঠোফোনের স্ক্রিনে প্রথম দেখায় চেনা কঠিন। স্ট্রেট অঞ্চলে ওপর থেকে ক্যামেরা ধরায় মুখটা শুরুতে দেখা যায়নি। শেন ওয়াটসনের জোরালো শটে বল একবার বাউন্স খেয়ে সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই লং অফ থেকে দৌড়ের ওপর বাজপাখির মতো ডাইভ দিয়ে বল হাতে জমিয়ে ফেললেন ফিল্ডার। ডাইভ দেওয়ার ধরনটা পরিচিত।
আরও পড়ুনইংল্যান্ডের নাগরিক হয়ে আইপিএলে কোহলির দলে খেলতে চান আমির১ ঘণ্টা আগেঅতিরিক্ত কোনো ‘শো অফ’ নেই, রানওয়েতে বিমানের মসৃণ অবতরণের মতোই ডাইভের ল্যান্ডিং এবং তারপর বিমানের মতোই ট্যাক্সিং করতে করতে কিছুটা এগিয়েও গেলেন। একটু বয়স্কদের কাছে এই দৃশ্য হয়তো চেনা চেনা লেগেছে। আরে, রোডসের মতোই তো.
ঘটনাটা গতকাল ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স লিগে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে। রোডসের ডাইভ দিয়ে বাউন্ডারি ঠেকানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নব্বইয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা তা দেখে নিশ্চয়ই নস্টালজিক হয়েছেন? সেই সময়ে পয়েন্টে রোডসের স্রেফ একটি ডাইভ দেখার জন্যও কেউ কেউ হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার গোটা ম্যাচই দেখেছেন। ‘ফ্লাইং বার্ড’ হতাশ করেননি। তখন কেউ কেউ বলতেন, ‘পয়েন্টে জন্টির ডান দিকে ১০ হাত, বাঁ দিকে ১০ হাত—সেফ জোন।’ শুধু কী বল ঠেকানো কিংবা ক্যাচ নেওয়া? সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট কিংবা, দৌড়ে ব্যাটসম্যানের আগে স্টাম্পের কাছে গিয়ে বিমানের মতো ল্যান্ডিংয়ে সবকিছু ভেঙে ফেলা—আহ, কত সব স্মৃতি, আহ জন্টি!
ক্রিকেট যুগে যুগে দুর্দান্ত সব ফিল্ডার উপহার দিয়েছে। জন্টির সমসাময়িক এমন অনেকেই আছেন। রিকি পন্টিংয়ের কথাই ধরুন। শরীরটা বেশ মুটিয়ে গেছে। কিংবদন্তিদের ম্যাচেও তাঁকে দেখা যায় না। সেটাও অস্বাভাবিক কিছু না। অবসর নেওয়ার পর খেলোয়াড়েরা জীবনটাকে একটু বাজিয়ে দেখবেন, ফিটনেসে সেভাবে নজর দেবেন না, পছন্দের খাবারগুলো খাবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ৫৫ বছর বয়সী জন্টিকে দেখলে একটু অবাকই লাগে। এই বয়সেও কী ফিটনেস, ডাইভে কী ক্ষিপ্রতা ও সৌন্দর্য! মনের ডায়েরির পাতাগুলো ওলটাতে ওলটাতে পেছন ফিরে তাকিয়ে যদি স্মরণ করার চেষ্টা করা হয়, এই ক্ষিপ্রতার কথা ক্রিকেটবিশ্ব প্রথম জেনেছিল কবে?
আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে কোহলি যেসব মাইলফলকের সামনে২ ঘণ্টা আগেজন্টি প্রথম কবে ডাইভ দিয়েছিলেন, সেটা তো আর জানার উপায় নেই। তবে একটি ম্যাচে তাঁর অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে ক্রিকেটবিশ্ব বুঝেছিল, ‘সামওয়ান হ্যাজ অ্যারাইভড!’ অর্থাৎ, ক্রিকেটে এমন কারও আবির্ভাব ঘটেছে ফিল্ডিংয়ে যে ‘স্পেশাল’—পরবর্তীতে তো এমন হয়ে উঠলেন যে শুধু ফিল্ডিংয়ের জন্যই যেকোনো দল তাঁকে লুফে নেবে! তো, সেটা কোন ম্যাচ, যেদিন লোকে প্রথম জন্টিকে চিনেছিল আলাদা করে?
১৯৯২ বিশ্বকাপ। ব্রিসবেনে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান। সে বিশ্বকাপে জন্টির আন্তর্জাতিক অভিষেক। ব্রিসবেনের ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে চার ম্যাচ খেললেও ফিল্ডার জন্টিকে সেভাবে চোখে লাগেনি। লাগল পাকিস্তান ম্যাচে। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২১১ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাড়া করতে নেমে ৩১তম ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ যখন ২ উইকেটে ১৩৫, ব্রায়ান ম্যাকমিলানের বলে লেগে খেলে বল ব্যাটে পাননি ইনজামাম-উল-হক। লেগ বাইয়ে রান নেওয়ার আশায় দৌড়ে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন। অপর প্রান্তে পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান শুরুতে কয়েক পা এগিয়ে গেলেও বিপদ বুঝে থেমে যান। ইনজামাম তখন ঘুরে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটুকু সময়ের মধ্যে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো নীল চোখের এক তরুণ বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়, শুধু ফিল্ডিং দিয়েই কীভাবে অমরত্ব পাওয়া যায়!
ক্যামেরায় রোডসের শরীরের অর্ধেকটুকু ধরা গিয়েছে। ইনজামাম ক্রিজে ফেরার আগেই শূন্যে থাকতেই স্টাম্প ভাঙেন রোডসউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।