বোনের টিউশনির টাকায় জিপিএ–৫ পেয়ে এসএসসি পাস, অর্থাভাবে বিজ্ঞান থেকে মানবিকে
Published: 8th, March 2025 GMT
বাবা পড়ালেখার খরচ দিতে পারেননি। বড় বোন টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি বোন মুনিয়া খাতুনের পড়ার খরচ দিয়েছেন। এরপরও সব সময় প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় সম্ভব হয়নি। কষ্টে পড়ালেখা করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছে মুনিয়া। তবে পরিবারের আশঙ্কা, মাঝপথে টাকার অভাবে তার পড়ালেখা যেন না বন্ধ হয়ে যায়।
মুনিয়া খাতুন (১৭) ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের দয়াপুর গ্রামের আবদুল মোতালেব ও শাহানাজ বেগমের মেয়ে। সে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ভাতঘরা–দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী হলেও অর্থাভাবে প্রাইভেট পড়ার খরচের ভয়ে উচ্চমাধ্যমিকে সে বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে।
মুনিয়ার বাবা আবদুল মোতালেব জানান, তাঁর তিন মেয়ে। বড় মেয়ে মনিরা যশোর মহিলা কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। ছোট মেয়ে তমা দশম শ্রেণির ছাত্রী। মুনিয়া এবার কালীগঞ্জের সরকারি মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে সংসার চলে। সব দিন কাজও পান না। মাঠে চাষযোগ্য জমিও নেই। মাত্র দুই শতক জমির ওপর টিনের বেড়ার দুই কক্ষের ঘরে তাঁদের বসবাস। মেয়েদের পড়ালেখার খরচ দিতে পারেন না। বড় মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে মেজ মেয়ের পড়ার খরচ দেন।
মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর তিন মেয়েই মেধাবী ও পড়ার প্রতি আগ্রহী। কখনো পড়তে বসতে বলতে হয় না। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় তিনি খরচ দিতে পারেন না। বড় মেয়ের পড়ালেখা প্রায় শেষ। এখন চিন্তা কীভাবে মুনিয়ার পড়ার খরচ জোগাড় হবে।
মুনিয়া জানায়, এসএসসি পরীক্ষার আগে চার বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হয়েছে। শিক্ষকেরা তার অবস্থার কথা ভেবে টাকা কিছুটা কম নিতেন। অনেক সময় টাকা দিতে দেরি হলে পড়তে যেতে লজ্জা করত। অর্থাভাবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে সে। তার খুব ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হবে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত বদলে সরকারি কর্মকর্তা হতে চায় সে।
মুনিয়ার মা শাহানাজ বেগম বলেন, মেয়ের এখন ইচ্ছা এইচএসসিতে ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হবে। তার এই আশা পূরণে প্রয়োজনীয় অর্থ তাঁদের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তিনি এ ব্যাপারে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ভাতঘরা–দয়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসিমা সুলতানা বলেন, মেয়েটি খুবই মেধাবী। কিন্তু তাকে পড়ালেখা করানোর সক্ষমতা পরিবারের নেই। স্কুল পর্যায়ে তারা যেটুকু পেরেছে, সহায়তা করেছে। একটু সহযোগিতা পেলে সে ভালো কিছু করতে পারবে। একদিন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সেবা করতে পারবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ভর্তির দরকারি তারিখ—১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।
২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।
৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।
ভর্তির যোগ্যতা—১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।
২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd
ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।
২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।
৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।
প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—১. দুই কপি ছবি।
২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
ভর্তি ও অন্যান্য ফি—অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,
রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,
কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,
একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,
ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,
পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,
প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,
মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।
বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।
দরকারি তথ্য—১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।
২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।
৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।
# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট