Samakal:
2025-05-01@14:01:42 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

Published: 8th, March 2025 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয়গ্রহণকারী কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা খাদ্য সংকটের তীব্র ঝুঁকিতে পড়িতে যাইতেছে বলিয়া শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যেই আশঙ্কা প্রকাশিত হইয়াছে উহা সংগত। কেবল আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য নহে, খোদ বাংলাদেশের জন্যও উহা উদ্বেগজনক হইতে বাধ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে এক পত্রের মাধ্যমে জানাইয়াছে, রোহিঙ্গাদের জন্য সংস্থাটির খাদ্যসহায়তা এপ্রিল হইতে অর্ধেকেরও নিম্নে নামিয়া আসিবে। ইহার ফল হিসাবে রোহিঙ্গাপিছু ডব্লিউএফপির মাসিক বরাদ্দ এপ্রিল হইতে সাড়ে ১২ ডলারের পরিবর্তে ৬ ডলার হইবে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার যথার্থই বলিয়াছেন, ডব্লিউএফপির বাজেট কাটছাঁটের ফলস্বরূপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হইতে পারে। কারণ দিনে ২৪ টাকায় একজন মানুষের পক্ষে সুষম খাদ্য গ্রহণ দূরের কথা, ক্ষুধা নিবৃত্তিও সম্ভবপর নহে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংকটের পাশাপাশি শিবিরসমূহে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কা রহিয়াছে।

আমরা জানি, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লক্ষের অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রহিয়াছেন। অনিবন্ধিত রহিয়াছেন আরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। এখনও নানা কৌশলে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করিতেছেন। রোহিঙ্গাশিবিরে নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুদের যোগ করিলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লক্ষ ছাড়াইয়া যাইবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার হইতে অনেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়াইয়া পড়িয়াছেন বলিয়া জানা যায়। তাহাদের অনেকে পরিচয় গোপন করিয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট অবধি জোগাড় করিতেছেন। অন্যদিকে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহ ঘিরিয়া প্রায়ই রক্তপাত ও প্রাণহানি ঘটিতেছে। মাদক কারবার, অস্ত্র চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ লইয়া বিরোধে জড়াইতেছে নানা গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহে ১১টি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয়। ইহারা ডাকাতি, অপহরণ বাণিজ্যসহ নানাবিধ অপতৎপরতায় লিপ্ত, যাহার শিকার বাংলাদেশি নাগরিকও হইতেছেন। বৃহৎ শক্তিসমূহের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করিবার ঝুঁকি সম্পর্কেও সকলেই অবহিত। এই সকল কিছু মিলাইয়া দিন যতই যাইতেছে, ততই ভারী হইতেছে রোহিঙ্গা বোঝা। ‘গোদের উপর বিষফোড়া’ হইয়া উঠিতেছে বাজেট সংকট। 

ইহা সত্য, রোহিঙ্গা বাবদ ব্যয়ের সংকুলান লইয়া বাংলাদেশ সেই ২০১৭ সাল হইতেই হিমশিম খাইতেছে, যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন হইতে বাঁচিতে বাংলাদেশে এক ধাক্কায় কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেন। অদ্যাবধি কোনো বৎসরই আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুসারে সাহায্য মিলে নাই। এতদসত্ত্বেও ডব্লিউএফপির সহায়তা দিয়া কায়ক্লেশে হইলেও অন্তত রোহিঙ্গাদের খাদ্যচাহিদা পূরণ করা হইত, এপ্রিল হইতে যাহা সম্ভব হইবে না। আমরা জানি, ডব্লিউএফপির যেই বরাদ্দ, তাহার প্রায় ৮০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়া থাকে। সম্প্রতি দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের সহিত আন্তর্জাতিক সহায়তা নীতিও পরিবর্তন হইবার কারণে ডব্লিউএফপিকে উহার বরাদ্দ কাটছাঁট করিতে হইতেছে। কিন্তু ক্ষুধা তো আর এই সকল হিসাবনিকাশ শুনিবে না। তাই বিকল্প ব্যবস্থার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রথমত রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করিবার কার্যক্রম জোরদার করিতে হইবে। পাশাপাশি যৌথ সাড়াদান কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যেই সকল সদস্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতেছে, তাহাদের প্রতি সাহায্য বৃদ্ধির জন্য নূতন করিয়া আহ্বান রাখিতে হইবে। আগামী ১৩ মার্চ চার দিবসের সফরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ আসিতেছেন। তিনি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাইবেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনিবেন বলিয়া আমরা জানি। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের সংস্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে বিরাজমান সমস্যা সম্পর্কে তাহাকে বুঝাইতে পারিলেও কিছু সমাধান মিলিতে পারে বৈকি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ল হইত

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা

চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।

জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।

কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।

জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।

২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।

চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।

জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
  • বুয়েটের নতুন রিকশার অনুমোদন দেবে সরকার, ‘মাস্টার ট্রেইনার’ হবেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা