সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন।

দেশটিতে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে শুক্রবার এবং শনিবার নিরাপত্তা বাহিনী এবং মিত্র গোষ্ঠীগুলো আলাউইতদের লক্ষ্য করে প্রায় ৩০টি অভিযানে ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

রবিবার (৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

ফের উত্তাল সিরিয়া, নিহত ৩১১

আহমেদ আল শারাকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এমন এলাকাগুলোতে আসাদের প্রতি অনুগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষে চলছে। আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

এসওএইচআর জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে গত তিন দিনে সিরিয়ায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশটিতে গত ডিসেম্বরে বাশার আল আসাদের পতনের পর এটিই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা।

নিহতদের এই সংখ্যায় কয়েক ডজন সরকারি সেনা এবং আসাদের অনুগত যোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত, যারা বৃহস্পতিবার থেকে উপকূলীয় লাতাকিয়া এবং তারতুস প্রদেশে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে।

এসওএইচআর-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সহিংসতায় সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ১২৫ জন সদস্য এবং আসাদপন্থি ১৪৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

এর আগে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি একটি সতর্কবার্তা জারি করেন।

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ খুনি এবং অপরাধীদের রক্ষায় পালিয়ে যাওয়ার ও মৃত্যুর জন্য জোর দিচ্ছে। পছন্দটি স্পষ্ট; আপনার অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন।

এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এই অঞ্চলটি একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে আলাউইত সম্প্রদায়ের কর্মীরা বলছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায় সহিংসতা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে, হোমস ও লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলো এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।

অপরদিকে আলাউইতের বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা ও আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রচারিত এক বক্তব্যে শারা বলেন, আপনারা সিরীয় নাগরিকদের ওপর আক্রমণ এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। আপনাদের অস্ত্রগুলো জমা দিন এবং দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করুন।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দেশটির সানা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর ‘বিশ্বাসঘাতক হামলার’ ঘটনার পর, সরকার পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

আলাউইত সম্প্রদায়ের একজন কর্মী জানিয়েছেন, এই সহিংসতার ফলে আলাউইট সম্প্রদায় ‘ভয়ঙ্কর অবস্থায়’ পড়েছে, শত শত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

রয়টার্স সংবাদ সংস্থা অনুসারে, লাতাকিয়ার হামেইমিমে অবস্থিত একটি রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটিতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, কয়েক ডজন পরিবার প্রতিবেশী লেবাননে পালিয়ে গেছে।

সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বলেছেন, সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ‘বেসামরিক হতাহতের অত্যন্ত উদ্বেগজনক প্রতিবেদন’ দেখে তিনি ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

তিনি সকল পক্ষকে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যা দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করতে পারে এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক উত্তরণ’কে বিপন্ন করতে পারে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন