অস্ত্র, মাদক, হত্যাসহ ৪৮ মামলার এক আসামিকে মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে নানামুখী জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রথমে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করা হেরোইনের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন গায়েব করে দেওয়া হয়। তারপর উদ্ধার করা বস্তু হেরোইন নয় উল্লেখ করে জাল প্রতিবেদন বানিয়ে নথিতে সংযুক্ত করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে আর পরীক্ষার সুযোগ না থাকে, সে জন্য থানায় রক্ষিত আলামত লুট হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এ দাবির পক্ষে তারিখবিহীন যে জিডির বরাত দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

রাজধানীর দারুস সালাম থানার একটি মামলার তদন্ত নিয়ে এত সব কর্মকাণ্ড ঘটে গেলেও তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, ‘তিনি কোনো কিছু না বুঝে’ এবং ‘সরল বিশ্বাসে’ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত নিয়েই তিনি এটা করেছেন।

যদিও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললেন, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। জালিয়াতির বিষয়টি তাঁদের ‘নলেজে’ আসেনি।

পটেটো রুবেল নামে পরিচিত এই আসামি মিরপুর এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী। কল্যাণপুর–দারুস সালাম এলাকায় তাঁর একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, যারা এলাকায় কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত।পুলিশের মিরপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা

আলোচিত এই মামলা [মামলা নং ৮ (৭)২৪] রাজধানীর মিরপুর অঞ্চলের দারুস সালাম থানায় করা হয় গত বছরের ৭ জুলাই। ওই দিন মিরপুরের টোলারবাগ এলাকা থেকে ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি শান্তনুর হোসেন ওরফে পটেটো রুবেলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার দাস মামলা করেন। সেই থেকে এই আসামি কারাগারে আছেন।

মামলার পর নিয়মানুযায়ী উদ্ধার করা হেরোইনের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষার পর সিআইডি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আলামতে হেরোইনের অস্তিত্ব মিলেছে। মামলার নথিতে (কেস ডকেট) এসব বর্ণনার উল্লেখ রয়েছে।

পরবর্তী সময়ে সিআইডির এই প্রতিবেদন গায়েব করে দিয়ে একটি জাল প্রতিবেদন নথিতে সংযুক্ত করা হয়। যাতে বলা হয়, আলামতে হেরোইনের অস্তিত্ব মেলেনি। এরপর আসামি শান্তনুর হোসেন ওরফে পটেটো রুবেলকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠায় দারুস সালাম থানা পুলিশ।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পটেটো রুবেল নামে পরিচিত এই আসামি মিরপুর এলাকার একজন চিহ্নিত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী। কল্যাণপুর–দারুস সালাম এলাকায় তাঁর একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে, যারা এলাকায় কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত। রুবেলের বিরুদ্ধে দুটি খুনের মামলাও রয়েছে। ২০২৩ সালের মে মাসে দারুস সালাম এলাকায় সিয়াম খান নামের এক কিশোরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার নেতৃত্বে ছিলেন এই রুবেল।

এমন কনক্লুসিভ (চূড়ান্ত) কিছু যদি হয়, সেটা আমরা দেখতে পারি। আমাদের নলেজে এলে আমরা দেখব। এমন কিছু আমাদের নলেজে নেই। আর যদি অস্তিত্বই (মাদকের) না থাকে, আমরা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারি না।ডিসি মাকছুদের রহমান

ওই কর্মকর্তার মতে, এমন একজন পেশাদার অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে যেভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে, তাতে এটা প্রতীয়মান হয় যে এর নেপথ্যে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। কেবল এসআই পদমর্যাদার একজন তদন্ত কর্মকর্তার একার পক্ষে এত কিছু করা সম্ভব নয়। আরও কারও না কারও যোগসাজশ থাকার সম্ভাবনা বেশি।

জানা গেছে, পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাকছুদের রহমান এই মামলার তদারকি করেন। তিনি দাবি করেন, সিআইডির রাসায়নিক প্রতিবেদন দেখে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, রাসায়নিক পরীক্ষায় অস্তিত্ব না পেলে হেরোইন হোক আর যা–ই হোক, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া যায় না।

কিন্তু যে রাসায়নিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেটি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে, সিআইডিও সেটি নিশ্চিত করেছে। এই জালিয়াতির জন্য আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মাকছুদের রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এমন কিছু তাঁর নলেজে নেই। তিনি বলেন, ‘এমন কনক্লুসিভ (চূড়ান্ত) কিছু যদি হয়, সেটা আমরা দেখতে পারি। আমাদের নলেজে এলে আমরা দেখব। এমন কিছু আমাদের নলেজে নেই। আর যদি অস্তিত্বই (মাদকের) না থাকে, আমরা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারি না।’

জাল প্রতিবেদন ও ‘সরল’ বিশ্বাস

মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি পটেটো রুবেলের বিরুদ্ধে করা এই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন দারুস সালাম থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জুয়েল আহাম্মদ। তিনি গত বছরের ১৭ জুলাই ২ গ্রাম আলামত (হেরোইন) পরীক্ষার জন্য সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠান। ৩১ জুলাই সিআইডি রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দারুস সালাম থানায় পাঠায়। থানার সেরেস্তারের মাধ্যমে ১৩ আগস্ট সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষার এই প্রতিবেদন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা জুয়েল আহাম্মদের কাছে আসে। সেই প্রতিবেদনে (সিআইডির প্রতিবেদন নম্বর ১৩৭৬০) উল্লেখ করা হয়, আলামতে হেরোইনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

গত বছরের ১৫ অক্টোবর জুয়েল আহাম্মদ খাগড়াছড়িতে বদলি হন। ১৬ অক্টোবর মামলাটির তদন্তভার পান এসআই মিরাজুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডির রাসায়নিক প্রতিবেদন মামলার নথিপত্র (কেস ডকেট) থেকে গায়েব হয়ে যায়।

নথিতে ২৩ নভেম্বর এসআই মিরাজুল ইসলাম নোট লেখেন যে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন তিনি পাননি। তাই প্রতিবেদন পেতে তিনি সিআইডিতে নতুন করে আবেদন করেছেন। পরে ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছেন মর্মে ১৩ ডিসেম্বর কেস ডকেটে আবার নোট লেখেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। তাঁর সংযুক্ত করা এই প্রতিবেদনে বলা হয়, আলামত রাসায়নিক পরীক্ষা করে হেরোইন পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী সময়ে এই জাল প্রতিবেদন ব্যবহার করে শান্তনুর হোসেন ওরফে পটেটো রুবেলকে অব্যাহতি দিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতে পাঠানো নথিতে সংযুক্ত প্রতিবেদনটির অনুলিপি নিয়ে গত বুধবার সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে যাচাই করতে যায় এই প্রতিবেদক। সেখানকার কর্মকর্তারা প্রতিবেদনটি দেখেই নিশ্চিত করেন যে এটা জাল প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনটিতে কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষর এমনভাবে জাল করা হয়েছে, সেটি দেখে তাঁরা বিস্মিত হন। একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতিবেদন দেখে বোঝার উপায় নেই এটি জাল করা হয়েছে। তবে খুব ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, জাল প্রতিবেদনটিতে কোনো নম্বর নেই। যদিও তাঁদের প্রতিটি প্রতিবেদনের একটি রিপোর্ট নম্বর থাকে।

এ ছাড়া আলামতে মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে রাসায়নিক প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘পাওয়া যায় নাই’; কিন্তু উল্লিখিত জাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পাওয়া যায়নি’। পরে একজন কর্মকর্তা উল্লিখিত মামলার নম্বর ধরে সিআইডির মূল প্রতিবেদন বের করেন। সেটি দেখিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যে প্রতিবেদন দিয়েছি, সেটিতে হেরোইন পাওয়া গিয়াছে’ উল্লেখ আছে। এই প্রতিবেদন পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এটি ডেটাবেজে ইনপুট (সংযুক্ত) করা হয়েছে।

সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান পরীক্ষক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দেওয়া প্রতিটি প্রতিবেদনেই একটি স্বতন্ত্র নম্বর থাকে।

এ ছাড়া বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নতুন করে প্রতিবেদনের জন্য আবেদন করেছেন মর্মে নথিতে নোট লিখেছিলেন; কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো আবেদন সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আসেনি বলেও নিশ্চিত করে পরীক্ষাগার কর্তৃপক্ষ।

আদালতে জমা দেওয়া নথিতে সংযুক্ত প্রতিবেদনটিতে রাসায়নিক পরীক্ষাগার থেকে প্রদানের তারিখ লেখা রয়েছে ৩১ জুলাই, ২০২৪। অথচ সিআইডির কাছে প্রতিবেদন চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তা চিঠি দিয়েছিলেন ২৩ নভেম্বর, ২০২৪। চিঠি দেওয়ার প্রায় চার মাস আগে কী করে প্রতিবেদনে সই হয়, সেটা যেমন একটা বড় প্রশ্ন। ইংরেজিতে লেখা ওই (জাল) প্রতিবেদনে চারটি বানান ভুল। সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিটি প্রতিবেদনেই একটি ‘রিপোর্ট নম্বর’ থাকে; কিন্তু আদালতে সংযুক্ত করা রাসায়নিক প্রতিবেদনটিতে কোনো নম্বরই নেই।

এসব অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রতিবেদনটি যাচাই করেননি। এতে যে বানান ভুল, রিপোর্ট নম্বর ছিল না; সেসব তিনি খেয়াল করেননি। মামলা তদারকির দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাঁকে কিছু বলেননি।

মিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, নম্বরবিহীন প্রতিবেদনটি তিনি সিআইডি থেকে ডাকযোগে পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি ‘পাজলড’ হন। কারণ, ‘হেরোইন পাওয়া যায়নি’ এমন প্রতিবেদন সাধারণত আসে না। ফলে তিনি দারুস সালাম থানার ওসি (রকিব-উল-হোসেন) ও মিরপুরের ডিসির (মাকছুদের রহমান) কাছে মতামত চান। তাঁদের মতামত নিয়েই আসামি পটেটো রুবেলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছু না বুঝে এবং ‘সরল বিশ্বাসে’ তিনি মামলার তদন্ত শেষ করেছেন।

হেরোইনসহ ‘ভুল বুঝে’ গ্রেপ্তার

আসামি রুবেলকে হেরোইনের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদনসহ দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিআইডির রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইন পাওয়া যায়নি বলে মতামত এসেছে। এ কারণে রুবেলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত হেরোইন মনে করে ‘ভুল বুঝে’ এবং থানায় ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে মামলা করেছেন এসআই সুব্রত কুমার দাস। প্রকৃতপক্ষে রুবেলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তু হেরোইন নয়। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে মিরপুরের ডিসির (মাকছুদের রহমান) অনুমতি নিয়ে ‘তথ্যগত ভুল’ উল্লেখ করে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে কথা হয় এসআই সুব্রত কুমার দাসের সঙ্গে। তিনি এখন খুলনায় কর্মরত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ‘ভুল বুঝে’ বা ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে মামলা করেননি। তিনি মাদকহসহ রুবেলকে গ্রেপ্তার করে মামলা করেছেন। রসায়নিক পরীক্ষায় কী এসেছে সেটি তিনি জানেন না। তবে তাঁর সঙ্গে তদন্ত কমকর্তা কোনো যোগাযোগ করেননি।

জিডি নিয়েও ভুল তথ্য

আসামি রুবেলকে অব্যাহতি দিতে ৫ আগস্ট থানায় আলামত লুটের ঘটনার কথাও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ। আদালতে পাঠানো চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিরাজুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দারুস সালাম থানায় দুষ্কৃতকারীরা হামলা করেছে। এ সময় এই মামলার আলামত লুট হয়েছে। এ বিষয়ে আগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জুয়েল আহাম্মদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়।

যদিও জুয়েল আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলার আলামত লুট হয়েছে, এমন কোনো জিডি তিনি করেননি।

দারুস সালাম থানার একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, পটেটো রুবেল একজন পেশাদার অপরাধী হওয়ার কারণে তাঁকে অব্যাহতি দিলে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমনকি আদালত নতুন করে আলামত পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। এ জন্য কৌশলে একটি পুরোনো তারিখে করা জিডির কথা বলা হয়েছে। আদালতে দেওয়া ওই জিডির কপিতে কোনো তারিখও উল্লেখ নেই।

এমন ঘটনা ঘটে থাকলে মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদাঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারেন না

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশকে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে একটি মাদক মামলার আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার নিয়ে পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের মধ্যেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানান।

একজন মাদক কারবারিকে মামলা থেকে রেহাই দিতে এতসব কাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, প্রতিবেদন জালিয়াতির ঘটনাটি ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ভুয়া প্রতিবেদন পরীক্ষা না করে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকলে, তাঁদেরও গাফিলতি আছে। তাঁরাও দায় এড়াতে পারেন না। এক্ষেত্রে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আর জালিয়াতির ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এসআই ম র জ ল ইসল ম কর মকর ত দ র কর মকর ত র প রথম আল ক স য ক ত কর হ র ইন র র একজন হ ম মদ কর ত র র জন য এল ক য় কর ছ ন ক রব র পর চ ত এমন ক অপর ধ র একট আগস ট মত মত

এছাড়াও পড়ুন:

বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 

দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি হওয়ার পর সেগুলো বিভিন্ন লাইটার জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ঘাট হয়ে গুদামজাত হয়। এরপর সেখান থেকে যায় বিভিন্ন বাজারে। লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করেন। তারপরও কষ্টে চলে তাদের সংসার।

চট্টগ্রাম মহানগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় ১৭টি ঘাটে আমদানি পণ্য খালাস হয়। আর এসব খালাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৪ হাজার ঘাট শ্রমিক। এই শ্রমিকরা পালাক্রমে কাজ করেন ঘাটে। দিন-রাত হাড় ভাঙা খাটুনির পরও দিন যায় কষ্টে। সময়ের সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্য বাড়লেও তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।

চট্টগ্রাম গুদাম ও ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল খালেক রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রতি বছর মে দিবসে অনেকেই আমাদের স্মরণ করেন। কিন্তু বছর জুড়ে আমাদের অবহেলা আর বঞ্ছনার জীবন। সারা দিন কাজ করে ঘাট শ্রমিকরা ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকে। কিন্তু এর বিনিময়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভারী বস্তা বহন করে শ্রম দিতে হয়। কখনো কখনো এই পারিশ্রমিকও জোটে না। আবার সব শ্রমিকের প্রতিদিন কাজও জোটে না।” 

ঘাট শ্রমিক আবদুল মতিন জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, গম, সার, চিনি, সাদা মটর, পাথর, কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, বল ক্লে, লাইম স্টোন, জিপসাম, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী পণ্য। এসব পণ্য মাদার ভেসের থেকে লাইটার জাহাজে খালাসের পর মাঝিরঘাটের বিভিন্ন গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে শ্রমিকরা খালাস করে বিভিন্ন ট্রাকে লোড করেন, আবার ট্রাক থেকে বিভিন্ন গুদামে মজুদের জন্য আনলোড করেন। প্রতিদিন একজন শ্রমিক একশ’ দেড়শো বস্তা পর্যন্ত পণ্য বহন করেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ভারী পণ্য বহনের এসব কাজ করেন। এতে তাদের দৈনিক মজুরি মিলে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।

মনিরুল মোল্লা নামে আরেক শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা দিনে হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবার সন্তানদের জন্য মাসে এক দুই বার মাছ মাংস খাওয়া সম্ভব হয় না।”

আবদুল সবুর নামের অপর একজন ঘাট শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের শ্রমে-ঘামে দেশের আমদানি রপ্তানি বড় কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামে। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবার জোটে না। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।”

ঘাট শ্রমিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, “৪ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন যা আয় করি তার অর্ধেক চলে যায় ব্যক্তিগত খরচে। বাকি অর্ধেক দিয়ে পুরো সংসার চালাতে হয়। জিনিসপত্রের যা দাম অর্ধেক আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিন বেলা খাওয়াও কষ্ট।”

সফি মোল্লা নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, “ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। অনেকেই কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে অনেক সময় ঘাট বন্ধ থাকে। তখন কাজ থাকে না। এতে আমাদের অভাবের শেষ থাকে না।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • শান্তিনগরে বাসের ধাক্কায় নারীর মৃত্যু
  • এক লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ, ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে নালিশি
  • গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও এক নারীর মৃত্যু
  • গৌরনদী থানার ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা
  • পুলিশের ওপর হামলা করে আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিল জনতা, গ্রেপ্তার ৩
  • শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
  • দুই দিনের রিমান্ডে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত