নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রবাসীদের গাড়ীতে ডাকাতির ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ ৫ জনকে প্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (৮ মার্চ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত  রূপগঞ্জে পূর্বাচল ও রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্য, ১ নৌবাহিনীর সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া বিভিন্ন মালামাল। গ্রফতারকৃতরা হলো, বরাস্তকৃত পুলিশ কন্সটেবল কাজল ইসলাম, চাকুরিরত পুলিশ কন্সটেবল রুবেল, বরখাস্তকৃত নৌ সদস্য  রিয়াজুল জান্নাত, সিয়াদাত রাজ ও রহমত আলী।
প্রবাসী জসিমউদ্দিন জানান, তার বাড়ী কক্সবাজার এলাকায়।  দীর্ঘ দিন ধরে সে ও তার দুই বন্ধু সালাউদ্দিন ও শহীদ মিলে দুবাই থেকে বিভিন্ন মালামাল এনে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যবসা করে আসছে। গত ২ বছর পূর্বে দুবাইয়ে পরিচয় হয় মিরপুর এলাকার সজিব নামে একজনের সাথে। তাদের সাথে সেও ব্যবসায় যোগ দেন। 


এদিকে গত বৃহস্পতিবার ভোরে তারা একসাথে মালামাল নিয়ে ৪ জন দেশে ফিরেন। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ী যোগে ঢাকা নিউমার্কেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। নিউমার্কেট বাসার নিচে পৌছলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের সাথে আসা সজিবের সহযোগী একটি গাড়ীতে আসা ৮/৯ জন পুলিশ, নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদের কাছে অবৈধ মালামাল আছে এমন কথা বলে থানায় যেতে বলে। এনিয়ে প্রথমে তাদের সাথে কথাকাটাকাটির পর জোর পূর্বক তিন বন্ধু সালাউদ্দিন, জসিমউদ্দিন ও শহীদকে  বিদেশ থেকে আনা স্বর্নালংকারসহ বিভিন্ন মালামালসহ তাদের পুলিশের ব্যবহৃত ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ ও ১ টি প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। অন্য গাড়ীতে কৌশলে পালিয়ে যায় সজিব। কিন্তু তাদেরকে থানায় না নিয়ে একটি প্রাইভেটকার মিরপুর ও পুলিশের ব্যবহৃত ডাবল কেবিন পিকআপ পূর্বাচল তিনশো ফিট সড়কের এক জায়গায় এনে তাদের মুক্তিপন বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে  পূর্বাচল হাবিব নগর থেকে এলাকাবাসীর সহযোগীতায়  পুলিশের কন্সটেবল রুবেলসহ ২ জনকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে র‌্যাব-১ এর কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করে। উক্ত ঘটনার সূত্র ধরে র‌্যাব বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। রাজধানী মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া  বিভিন্ন মালামালসহ আটক করা হয় ৩ ডাকাত সদস্যকে। উদ্ধার করা হয় উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া  ১৬ ভরি স্বর্নালংকার, ৭ টি ল্যাপটপ, ২৮ টি মোবাইল ফোন, ৫৩ কার্টুন সিগারেট, ৫৯ কৌটা গুড়া দুধ, ৭৮ সেট থ্রী পিস, ৩৮৪ টি প্রসাধনী ক্রীম উদ্ধার।  জব্দ করা হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি পুলিশে ডাবল কেবিন পিকআপ, ১ টি প্রাইভেটকারসহ ১ টি হ্যান্ডকাপ, ১ টি ওয়াকিটকি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর পোশাক জব্দ।


এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র নিজেদের আইন শৃংখলার বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রাবাসীদের তুলে নিয়ে তাদের মালামাল লুটে নিয়ে যায়। পূর্বাচলের হাবিব নগর ও মিরপুর ক্যান্টমেন্ট এলাকা থেকে ডাকাত সদস্য একজন চাকুরিচুত্য পুলিশ সদস্য, একজন চাকুরিচূত নৌবাহিনীর সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া বেশীরভাগ মালামাল। ওসি আরো জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে কর্মরত পুলিশ কন্সটেবল রুবেল। সে গাড়ী চালাত। সে পুলিশের গাড়ী নিয়ে ডাকাতির কাজে অংশ গ্রহন করেন। এঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তার ও লুট হওয়া বাকি মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব হ ন র সদস য র পগঞ জ ল ট হওয় ট এল ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি