উইলিয়ামসন মানেই কি ওয়ানডে ফাইনালে ব্যর্থতা
Published: 9th, March 2025 GMT
কে জানে এই আফসোসটা নিয়েই ওয়ানডেকে বিদায় বলতে হয় কিনা তাঁর! ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে একদিনের ক্রিকেট খেলছেন কেইন উইলিয়ামসন।
এই সময়ে তিনটি আইসিসির ফাইনালে অংশ নিয়েছেন তিনি। যেখানে সর্বোচ্চ ইনিংস মোটে ৩০ রানের; ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন এই কিউই ব্যাটার। আজ দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালেও ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী উইলিয়ামসন। ১১ রান করতেই কুলদীপের ঘূর্ণিতে হয়েছেন আউট।
এবারের পর ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এরপর ২০২৯ সালে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দশম আসর। তত দিনে উইলিয়ামসনের বয়স হবে ৩৯ এর কাছাকাছি। সেই বয়সে তাঁকে আর ৫০ ওভারের এই টুর্নামেন্টে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফাইনালে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে উইলিয়ামসন বেরোনোর আর সুযোগ পান কিনা সন্দেহ।
২০১০ সালে ডাম্বুলায় এই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল উইলিয়ামসনের। এরপর এই ফরম্যাটে প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেন ২০১৫ সালে। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হওয়া সেই ফাইনালে বাজেভাবে হেরে যায় কিউইরা। আর তিনে ব্যাট হাতে নেমে ৩৩ বলে মাত্র ১২ রান করেন উইলিয়ামসন।
সেই যে শুরু। এরপর ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার ফাইনালে করেন ৩০ রান। অথচ ফাইনালের আগ পর্যন্ত তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৫৪৮ রান। টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কারও উঠে উইলিয়ামসনের হাতে।
এবারও একই অবস্থা। পাকিস্তান ও দুবাইয়ে হওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে এসে পুরোপুরি ব্যর্থ উইলিয়ামসন। কিন্তু আগের ম্যাচে সেমিফাইনালে ভিন্ন এক উইলিয়ামসনকে দেখা যায়। লাহোরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি। তার আগের ম্যাচে দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৮১ রানের ঝলমলে ইনিংস।
আইসিসির টুর্নামেন্টের এই তিন ফাইনালে সর্বোচ্চ ৩০ রান করা উইলিয়ামসন দেশের হয়ে আরেকটি ওয়ানডে ফাইনাল খেলেও আলো ছড়াতে পারেননি। রেকর্ড বলছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে করেছিলেন ৩৪ রান।
আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টি ও টেস্টের ফাইনালে অবশ্য উজ্জ্বল উইলিয়ামসন। এখন পর্যন্ত দুই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের একটিতে অপরাজিত ৫২ আরেকটিতে ৪৯ রান করেছেন তিনি। আর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে নিউজিল্যান্ড পায় ৮৫ রান।
ফাইনালের চেয়ে সেমিফাইনাল এবং কোয়ার্টার ফাইনালে উইলিয়ামসনের ব্যাটিং গড়ও ভালো। এখন পর্যন্ত ওয়ানডের চার ফাইনালে (তিনটি আইসিসির টুর্নামেন্ট) ২১.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইল য় মসন র ট র ফ ইন ল আইস স র র ন কর
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।