ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ও চোরাচালানের মাধ্যমে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি পোশাক দেশে আসছে—এমনটাই বলছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। তারা বলছে, স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁত শাড়ি বিক্রি হয়, সে তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। মূলত আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বা চোরাচালানের মাধ্যমে এসব পণ্যের একটি বড় অংশ দেশীয় বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে।

বিদেশি কাপড় ও পোশাক আমদানিতে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তাঁত ও জামদানি শাড়ি, থ্রি–পিসসহ অন্যান্য পোশাকের বাজার সংরক্ষণ করা যায়। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে এমন কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে পাঠিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে কাপড়ের চাহিদা প্রায় ৮০০ কোটি মিটার। কাপড়ের এই চাহিদার একটি অংশ দেশীয় তাঁত, হস্তশিল্প ও পাওয়ারলুমের মাধ্যমে পূরণ হয়। তবে বিদেশ থেকে বৈধ ও অবৈধভাবে (শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালান) প্রবেশ করা কাপড় ও পোশাকের একটি বড় অংশ দেশীয় চাহিদা মেটায়।

ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে সাধারণত ভারত, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, হংকং, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে কাপড় আমদানি হয়। গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৩ হাজার কোটি ও ১৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে আসে যথাক্রমে ২৮২ ও ২৫৮ কোটি টাকার শাড়ি। এ ছাড়া গত ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উল্লিখিত দেশগুলো থেকে যথাক্রমে ২ হাজার ১৭৯ কোটি ও ১ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি পোশাক আমদানি হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানি হয় যথাক্রমে ১১৬ ও ৭৬ কোটি টাকার পোশাক।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার শাড়ি আমদানি হয়েছে। তার মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১০৬ কোটি টাকার শাড়ি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৫৮ কোটি টাকার টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ইত্যাদি পোশাক আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছে ১৭ কোটি টাকার পণ্য।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁত শাড়ি বিক্রি হয়, সে তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে যে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ঘোষণা করা হয়, তা বাজারজাত করা মূল্যের তুলনায় অনেক কম।

স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ হচ্ছে টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, শাড়িসহ সব ধরনের কাপড় ও পোশাক আমদানিতে বা ব্যাগেজ রুলসে আনা এসব পণ্যে ব্যবহৃত এইচএস কোডে যথাযথ শুল্কায়নের জন্য এনবিআর আমদানি–সংশ্লিষ্ট সব শুল্কস্টেশনকে বিশেষ নির্দেশনা দিতে পারে। এসব পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা পরিহারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শুল্ক ভবন বা স্টেশন দিয়ে আমদানি করা সব ধরনের কাপড় ও পোশাকের শুল্কায়নকালে সংশ্লিষ্ট পণ্য পরীক্ষাকারী কাস্টমস কর্মকর্তার পাশাপাশি তৃতীয় কোনো এজেন্সির (শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর) উপস্থিতিতে শতভাগ পণ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প শ ক আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে নিহতের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩৮৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬২ জনে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে অবরুদ্ধ নগরীতে আহতের সংখ্যা এখন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জনে পৌঁছেছে।

আরো পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

বিদেশে অবস্থানরত হামাস নেতাদের ওপর আরো হামলার ইঙ্গিত নেতানিয়াহুর

মন্ত্রণালয়ের আরো জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে ৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। এতে করে গত ২৭ মে থেকে মার্কিন সমর্থিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা ২ হাজার ৫০৪ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরো ১৮ হাজার ৩৮১ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গাজা উপত্যকায় সব ধরনের আন্তর্জাতিক জরুরি সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। যা গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দুর্ভিক্ষ, ব্যাপক রোগব্যাধি দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ৪৩২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৪৬ জন শিশু রয়েছে।  

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। 

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জুড়ীর জাম্বুরা’, নামেই যার পরিচয়
  • দক্ষিণ সিটির রাজস্ব আদায়ে ধস, আন্দোলনের ক্ষত এখনো কাটেনি
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • কীভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়, সুপার ফোর উঠতে বাংলাদেশের হিসাব কী
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন