ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন। তবে কোন পদ্ধতিতে তাদের ভোট নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হবে দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে। সম্প্রতি কয়েক দফা বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, “গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নিশ্চিত করতে চাই। আশ্বাস নয়, বাস্তবায়ন করতে চাই। এই আলোকে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করে, যে একটা প্রস্তাব দেওয়ান জন্য বলে। ডাক বিভাগ, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হয় ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবও বিশ্লেষণ করা হয়। আমরা দেখেছি চার ধরনের ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন। ৩৪ দেশে ৪৪টি মিশন অফিসে আমরা তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম। প্রবাসীদের সংখ্যা, মিশনগুলো সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট দেশে কী ব্যবস্থা রয়েছে। তারা অনলাইন ভোট, সশরীরের ভোট ও পোস্টাল ব্যালটে কথা বলেছে।”

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের বিপক্ষে না খেলে, আইপিএল খেলবেন স্যান্টনার-রাচিনরা

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা একাদশে ভারতের ৫, নিউ জিল্যান্ডের ৪, আফগানিস্তানের ২

তিনি বলেন, “পোস্টাল ব্যালট অচল ভোট ব্যবস্থা। গত সংসদ নির্বাচনে দেশের ভেতরে ৪৩৩টি ভোট হয়েছে। প্রবাসীরা কেউ ভোট দিতে পারেনি। কেন না, এতে ৪০ দিনের মতো লাগে। আর প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর সময় থাকে ১৫ দিনের মতো। আমাদের কমিটি তিনটি পদ্ধতি সুপারিশ করেছে৷ একটি হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং; তবে অনলাইন ভোটিং তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি, আমরা চারটা দেশে দেখেছি। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিনস, এস্তোনিয়া এবং মেক্সিকো। পাশাপাশি আমাদের উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশে পাইলটিং হিসেবে অনলাইন সিস্টেমে করছে। তারপর ইউএনডিপির সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। তারা বলেছে, এটা অনেকেই সফল হতে পারেনি। ফলে পূর্বের নিয়মে তারা ফিরে গেছে।”

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আরেকটি প্রস্তাব হলো প্রক্সি ভোট। অর্থাৎ একজন প্রবাসী বাংলাদেশির হয়ে কেউ একজন তার এলাকায় ভোটটা দিয়ে দেওয়া। আমাদের কমিটির কাছে বিষয় ছিল ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, ভোটের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা; প্রোপার ট্রেইল, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন পদ্ধতি হতে হবে; যাতে করে সব ধরনের প্রবাসী ভোটটা দিতে পারেন। সব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতি ডেভেলপ করে ট্রায়ালের জন্য সাজেস্ট করেছে, যাতে করে টেস্ট করে দেখা যায় কোনটি বাস্তবায়নযোগ্য।পাশাপাশি তারা এটাও সাজেস্ট করেছে যদি আগামী নির্বাচনে সত্যিকার অর্থেই প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই তবে প্রক্সি ভোটিংয়ে যেতে হবে।বর্তমানে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন পরিসরে প্রক্সি ভোটিং প্রচলিত আছে। তার মধ্যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। আর ভারতে শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য এই ভোটিং সিস্টেম প্রচলিত।”

তিনি আরো বলেন, “প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির সুবিধা হলো, এটা প্রচলিত আছে, পাওয়ার অ্যাটর্নির মাধ্যমে তো জমিজমাও বিক্রি করে থাকি, তাহলে ভোটও তো অধিকার, যদি সেটাকে আমরা এভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তবে একটা ফলাফল আসবে। বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধীদের ভোট আরেকজন দিতে পারে, যদিও এটা প্রক্সি ভোটের সঙ্গে মেলানো যাবে না। তবে আমরা বলছি একটি সুযোগ রযেছে। এটাই খুব কম সময়ে রিয়েল টাইমে করা সম্ভব।”

এজন্য আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে একটা কর্মশালা হবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইএসটিকে সম্পৃক্ত করা হবে। এর বাইরেও কোনো প্রতিষ্ঠান যদি সহায়তা করতে পারে, সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞকেও আমন্ত্রণ জানাব। নির্বাচন কমিশনের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও এনজিওকেও আমন্ত্রণ জানাব।”

আবুল ফজল বলেন, “আমরা একটা সিস্টেম আর্কিটেকচার ডেভেলপ করতে চাই। এই তিন পদ্ধতির তিনটা। এরপর আমরা দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এরপর যদি দেখি এইটা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে তখন সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে যাব। পরে টেস্টিং ও অডিটিংয়ে যেতে হবে। এরপর আমাদের আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। ফাইনালি ট্রায়াল রানে যাব। আমরা আশা করছি, যদিও এটা কন্ডিশনাল ব্যাপার, সব যদি করতে পারি প্রক্সি ভোটটা মোটামুটি পরিসরে আর বাকিগুলো ট্রায়াল বেসিসে বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আমাদের ধারণা।”

তিনি বলেন, “প্রবাসী ভোটার প্রকৃত তথ্য যদিও নেই। তবে যে ৪৪ মিশন থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি সেখানে এক কোটি ৩২ লাখের মতো তথ্য রয়েছেন। যদি ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধরে নিই, তবে ভোটার তো এক কোটি। যাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে তারাই কেবল প্রক্সি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য ৪০টি দেশে আমরা ভোটার কার্যক্রম চালাব, তবে আগামী নির্বাচনের আগে কতটুকু পারব জানি না। একটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গ্লোবালি একসেপ্টেড কোনো সিস্টেম আমাদের হাতে নেই। এরকম যদি থাকতো তাহলে সেটাই করতাম। এখন নতুন একটি সিস্টেম ডিভাইস করতে হচ্ছে। আশা করি সফল হব। নির্বাচন সংস্কার কমিশনও একটা পদ্ধতি সাজেস্ট করেছে। আশা করি কার্যকর পদ্ধতি বের করতে পারব। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষজ্ঞরাই আসলে বলতে পারবেন কতদিন লাগবে। তবে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে আমরা বলতে পারব কত সময় লাগবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, “একজন ইনডিভিজ্যুয়াল ভোটারকে তার আস্থার ব্যক্তিকেই নির্বাচন করতে হবে। কেন না, তার প্রক্সি হবে সে যদি অন্য কাউকে ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আস্থার ঘাটতি, বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে একজন ব্যক্তিকে অন্তত আস্থায় রাখতে হবে। প্রবাসী নিজেই পছন্দ করবেন কে তার ভোটটি দিয়ে দেবেন।”

ঢাকা/হাসান/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র স ট কর প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার