বিভিন্ন আবেদনের ফাইল ঢাকায় পাঠানোর সময়সীমা পার হওয়ার পরও ফাইলগুলো আটকে রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) ড. আলমগীর কবির। ঘুষ না দিলে তিনি ফাইলগুলো ছাড় করেন না। এমন ১৫১টি ফাইল তাঁর টেবিলেই আটকে ছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টিম অভিযান চালিয়ে ফাইলগুলো উদ্ধার করেছে। 
   
দুদকের কাছে অভিযোগ ছিল, টাকা ছাড়া ফাইল ছাড় করেন না ডিডি। গতকালের অভিযানে সেই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জানা যায়, এই ফাইলগুলো বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, কলেজের এরিয়া বিল, ছুটি এবং বিদেশ ভ্রমণের এনওসির আবেদন। সবচেয়ে বেশি ফাইল কলেজের এরিয়া বিলের। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মাউশিতে ফাইল পাঠানোর সময়সীমা ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। কিন্তু ফাইলগুলো পড়ে আছে ডিডির টেবিলেই।

গত ১০ মার্চ দুদকের হটলাইনে অভিযোগ যায়, ডিডি আলমগীর কবির চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নিয়ে ফাইল অনুমোদন করেন। এমপিওভুক্তি ও বদলির ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেন। ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। ছুটি কিংবা অনাপত্তিপত্র নিতে গেলেও ঘুষ দাবি করেন। অভিযোগের আগ পর্যন্ত তিনি ১৮৩টি ফাইল আটকে রেখে ঘুষ দাবিতে লিপ্ত আছেন।  

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফজলুল বারী একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে দেন। টিম লিডার করা হয় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে। সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন ও কোর্ট পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে সদস্য রাখা হয়। 

অভিযানের সময় দুদক দল দেখতে পায়, আলমগীর কবিরের টেবিলে আটকে আছে ১৫১টি ফাইল। এসব ফাইল প্রথমে পরিচালক মোহা.

আছাদুজ্জামানের কাছে দাখিল হয়েছে। তারপর তিনি সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান। আলমাস উদ্দিন তা উপপরিচালক আলমগীর কবিরের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আলমগীর কবির ফাইলগুলো আটকে রেখেছেন। তিনি ফাইল ছাড়লে পরিচালক তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকায় পাঠাতেন।

দুদক দলের কাছে আলমগীর কবির দাবি করেন, অসুস্থ অবস্থায় ছুটিতে থাকায় ও তিন দিন সার্ভার ডাউন থাকায় তিনি ফাইল ছাড়তে পারেননি। দুদক দল এ সময় তাঁর কাছে লিখিত বক্তব্য চায়। লিখিত বক্তব্য দিতে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নেন তিনি। 

এসব বিষয়ে কথা বলতে আলমগীর কবিরকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে ফাইল আসার পর আমি সর্বোচ্চ ১০ দিন রাখতে পারি। সহকারী পরিচালক সাত দিন এবং উপপরিচালক পাঁচ দিন রাখতে পারেন। কিন্তু উপপরিচালক যথাসময়ে ফাইল ছাড়েন না।’ তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যেই আমার কানে কথা আসে– যেসব ফাইল ডিডির টেবিলে আছে, সেগুলো সক্রিয় করতে ‘থার্ড পার্টি’র মাধ্যমে কলেজ শিক্ষকদের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়।”  

গত ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেন, ডিডির টেবিলে তাঁর কলেজের ৪৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ৯০ লাখ টাকা এরিয়া বিলের ফাইল আটকে আছে। এই ফাইল অনুমোদন করাতে ‘মাউশি থেকে বলছি’ জানিয়ে এক নারী তাঁকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন। আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যোগ দেন। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। 

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কোন তারিখে কোন ফাইল এসে আটকে আছে, সেগুলো দেখেছি। তাঁর কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জবাব আসার পর পর্যালোচনা করে আমরা ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাব।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল জ র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

গত বুধবার ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চক্র চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধ অংশ নিতে বাধ্য করে।

আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।
গত বুধবার গভীর রাতে ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন (৪০)। তাঁকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


গতকাল শুক্রবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাঁদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন। সুলতান তাঁদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাঁদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তাঁরা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তাঁরা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডি প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাঁদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।

সিআইডির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাঁদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে কলেজছাত্র নিহত
  • দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গেপ্তার ২
  • বিএনপির সঙ্গে চীনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
  • হবিগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
  • নাটক প্রকাশ নিয়ে নিলয়ের ক্ষোভ, যা জানাল দীপ্ত কর্তৃপক্ষ
  • শিল্পী-নির্মাতাকে না জানিয়ে ইউটিউবে নাটক প্রকাশ, নিলয়ের ক্ষোভ
  • শিল্পী-নির্মাতাকে না জানিয়ে নাটক রিলিজ, নিলয়ের ক্ষোভ
  • চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার
  • ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা: সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
  • ঈদ পুনর্মিলনীর নামে বিএনপির আয়োজনে আ.লীগের মিলনমেলার অভিযোগ