‘ঘুষের জন্য’ ১৫১ ফাইল আটকে রাখেন রাজশাহী মাউশির ডিডি
Published: 11th, March 2025 GMT
বিভিন্ন আবেদনের ফাইল ঢাকায় পাঠানোর সময়সীমা পার হওয়ার পরও ফাইলগুলো আটকে রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) ড. আলমগীর কবির। ঘুষ না দিলে তিনি ফাইলগুলো ছাড় করেন না। এমন ১৫১টি ফাইল তাঁর টেবিলেই আটকে ছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টিম অভিযান চালিয়ে ফাইলগুলো উদ্ধার করেছে।
দুদকের কাছে অভিযোগ ছিল, টাকা ছাড়া ফাইল ছাড় করেন না ডিডি। গতকালের অভিযানে সেই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জানা যায়, এই ফাইলগুলো বিভাগের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তির আবেদন, কলেজের এরিয়া বিল, ছুটি এবং বিদেশ ভ্রমণের এনওসির আবেদন। সবচেয়ে বেশি ফাইল কলেজের এরিয়া বিলের। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মাউশিতে ফাইল পাঠানোর সময়সীমা ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে। কিন্তু ফাইলগুলো পড়ে আছে ডিডির টেবিলেই।
গত ১০ মার্চ দুদকের হটলাইনে অভিযোগ যায়, ডিডি আলমগীর কবির চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষ নিয়ে ফাইল অনুমোদন করেন। এমপিওভুক্তি ও বদলির ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেন। ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। ছুটি কিংবা অনাপত্তিপত্র নিতে গেলেও ঘুষ দাবি করেন। অভিযোগের আগ পর্যন্ত তিনি ১৮৩টি ফাইল আটকে রেখে ঘুষ দাবিতে লিপ্ত আছেন।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফজলুল বারী একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে দেন। টিম লিডার করা হয় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেনকে। সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন ও কোর্ট পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে সদস্য রাখা হয়।
অভিযানের সময় দুদক দল দেখতে পায়, আলমগীর কবিরের টেবিলে আটকে আছে ১৫১টি ফাইল। এসব ফাইল প্রথমে পরিচালক মোহা.
দুদক দলের কাছে আলমগীর কবির দাবি করেন, অসুস্থ অবস্থায় ছুটিতে থাকায় ও তিন দিন সার্ভার ডাউন থাকায় তিনি ফাইল ছাড়তে পারেননি। দুদক দল এ সময় তাঁর কাছে লিখিত বক্তব্য চায়। লিখিত বক্তব্য দিতে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় নেন তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলতে আলমগীর কবিরকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে ফাইল আসার পর আমি সর্বোচ্চ ১০ দিন রাখতে পারি। সহকারী পরিচালক সাত দিন এবং উপপরিচালক পাঁচ দিন রাখতে পারেন। কিন্তু উপপরিচালক যথাসময়ে ফাইল ছাড়েন না।’ তিনি বলেন, “মাঝেমধ্যেই আমার কানে কথা আসে– যেসব ফাইল ডিডির টেবিলে আছে, সেগুলো সক্রিয় করতে ‘থার্ড পার্টি’র মাধ্যমে কলেজ শিক্ষকদের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়।”
গত ডিসেম্বরে রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আসলাম আলী মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেন, ডিডির টেবিলে তাঁর কলেজের ৪৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ৯০ লাখ টাকা এরিয়া বিলের ফাইল আটকে আছে। এই ফাইল অনুমোদন করাতে ‘মাউশি থেকে বলছি’ জানিয়ে এক নারী তাঁকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন। আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যোগ দেন। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম করে এমপিও দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘তিনি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কোন তারিখে কোন ফাইল এসে আটকে আছে, সেগুলো দেখেছি। তাঁর কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তিনি রোববার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। জবাব আসার পর পর্যালোচনা করে আমরা ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠাব।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্তির ৯১ ফাইল আটকে রেখেছেন ডিডি, দুদকের অভিযান
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে আবারও ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এবার এমপিওভুক্তির ৯১টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগে তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
আজ বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল এই অভিযান চালান। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, ডিডি আলমগীর কবির ঘুষ ছাড়া ফাইল অনুমোদন করেন না— এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
গত ১১ মার্চ একই অফিসে অভিযান চালিয়ে ডিডি আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ১৫১টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পেয়েছিল দুদক। এবার তার বিরুদ্ধে আরও ৯১টি ফাইল আটকে রাখার অভিযোগের সত্যতা মিলল।
আরো পড়ুন:
দেশজুড়ে এলজিইডি অফিসে দুদকের হানা, মিলেছে অনিয়মের তথ্য
রাজশাহী এলজিইডিতে দুদক: এক ঠিকাদারের কাজে অন্যজন
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য সম্প্রতি ১৫২টি আবেদন জমা পড়ে। এগুলো প্রথমে পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামানের দপ্তরে জমা হয়। ত্রুটিপূর্ণ ৪৭টি আবেদন বাতিল করে তিনি বাকি ১০৫টি ফাইল সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিনের কাছে পাঠান। পরবর্তীতে আলমাস উদ্দিন ফাইলগুলো ডিডি আলমগীর কবিরের কাছে পাঠান। কিন্তু তিনি ৯২টি ফাইল আর পরিচালকের কাছে পাঠাননি। এ সব ফাইল ঢাকায় পাঠানোর জন্য এখন আর মাত্র দুই দিন সময় রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায় করেন ডিডি আলমগীর কবির। অভিযান চালানোর সময় তিনি কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না। দুদকের কর্মকর্তারা পরিচালকের কাছ থেকেই প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করেন। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোহা. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফাইল পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিডি আলমগীর কবির নানা অজুহাতে তা করেননি। এর আগেও যখন তিনি ১৫১টি ফাইল আটকে রেখেছিলেন, তখন বহুবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। তার বিষয়ে অনেক কথাই কানে আসে।’’
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘‘ঘুষের জন্য ফাইল আটকে রাখার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এবার ৯২টি ফাইল আটকে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল