শুধু একজন ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, এটি আইন করে রোধ করাই কি শুধু সংস্কার? এ প্রশ্ন তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শুধু জাতীয় নির্বাচনের সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা করতে হবে, অবশ্যই করতে হবে। তবে সেটিই কি শুধু সংস্কার? বাজারব্যবস্থা, চিকিৎসাব্যবস্থা কি সংস্কার নয়? একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি, এটিও সংস্কার।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান।

রাজনীতিবিদ ও নাগরিকদের সম্মানে এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, ‘২০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশের মানুষের একটি প্রাইমারি প্রয়োজন হচ্ছে মিনিমাম চিকিৎসাব্যবস্থা। আমরা কীভাবে আমাদের দেশের মানুষের ন্যূনতম চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করব, সে বিষয়গুলো কেন তুলে ধরছি না? সেটি কি সংস্কার নয়? আমি যে বাজারব্যবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থার কথা বলেছি, সেটি কি সংস্কার নয়?’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সংস্কার আরও হতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা যদি সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম না হই, তাহলে কি করে আমাদের পক্ষে সম্ভব এ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? কী করে সম্ভব একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে তোলা? অবশ্যই আমাদের এ বিষয়ে বিতর্ক থাকা উচিত। প্রতিটি দলের কর্মপরিকল্পনা থাকা উচিত।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে না পারলে দেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তারেক রহমান। অন্যান্য বিষয়ে সংস্কারের পাশাপাশি মানুষের সমস্যা নিয়েও সমান আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পরিবেশদূষণ রোধে সংস্কার প্রস্তাব জরুরি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, পরিবেশদূষণ অত্যন্ত তীব্র মাত্রায় হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতির সামনে পরিবেশের ব্যাপারে সংস্কার উপস্থাপন করতে হবে। কারণ, দূষণের কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ, শিশু অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শারীরিকভাবে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ থেকে রাজধানীসহ গোটা দেশকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, এ ব্যাপারে পরিকল্পনা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

ইফতার অনুষ্ঠানে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ইফতারপূর্ব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন অন ষ ঠ ন ব যবস থ আম দ র পর ব শ র জন ত ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে