Samakal:
2025-09-18@07:36:41 GMT

যার কাজ তারে সাজে...

Published: 13th, March 2025 GMT

যার কাজ তারে সাজে...

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক জট খুলেও যেন খুলছে না। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে পরিচালিত দুটো জরিপে জনগণ যেখানে দ্রুত একটা নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন, সেখানে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ছাড়া আর কোনো অংশীজন, বিশেষত সরকারের বক্তব্যে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে না।

গত বছর ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পরিচালিত ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘পালস সার্ভে’র দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো পরিচালনা করবে বলে মনে করেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ ইনোভেশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপের ফলও বলছে, ৫৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোটার ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চান।

সম্ভবত এ জনআকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় নিয়েই সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না। দায়িত্ব গ্রহণের পর এ পর্যন্ত সিইসি আরও একাধিকবার একই কথা বলেছেন।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস এতদিন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেও বৃহস্পতিবার সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।’ (ডিডব্লিউ ডটকম) 

গত বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা একই কথা বলেছিলেন। তবে মাঝখানে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রতিনিধি দলকে তিনি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছিলেন। এর আগে ৬ জানুয়ারি জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি একই বক্তব্য দিয়েছিলেন। আবার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। (সমকাল) 

সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে গিয়ে সরকার যে কৌশল বেছে নিয়েছে, তাতেও নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা জেগেছে অনেকের মনে। এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে গঠিত কমিশনের অন্যতম সদস্য ডা. জাহেদুর রহমান জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে ৭ মার্চ বলেছেন, ‘আমরা যদি কনটেক্সটটা দেখি তাহলে তা ঘোলাটে। প্রধান উপদেষ্টা এর আগে বলেছেন, যদি ১০টা বিষয়ে সংস্কারে ঐকমত্য হয়, তাহলে ১০টা করব। যদি একটার ব্যাপারেও ঐকমত্য না হয়, তাহলে কোনো সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন দিয়ে দেব। কিন্তু এখন তাঁর ভাষার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলছেন, সংস্কার যত দ্রুত শেষ করা যায়, তার পর নির্বাচন করব। এখন সমাজে ও রাষ্ট্রে আবার এই ধরনের বয়ান তৈরি করা হচ্ছে।’ 

একই সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে কমিশনের যে আলোচনা শুরুর কথা ছিল, সেটা না করে তারা এখন আমাদের প্রশ্নপত্র পাঠাচ্ছে। ফলে আমার মনে হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার কালক্ষেপণ করতে চায়।’

প্রসঙ্গত, সংস্কার বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের সঙ্গে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ৩৪টি দলের বৈঠকও হয়েছে। কথা ছিল, আরেক দফা বৈঠক করে সংস্কার নিয়ে দলগুলোর মনোভাব জেনে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হবে। কিন্তু সরকার এখন এমসিকিউ পদ্ধতির একগুচ্ছ প্রশ্ন পাঠিয়ে দলগুলোকে বলছে টিক দিতে। উপরন্তু, ঐকমত্য কমিশনের উপপ্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ১০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সেই সময় থেকেই আলোচনার শুরু হবে’ (বাংলা ট্রিবিউন)। তিনি এও বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত জানার জন্য শিগগিরই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হবে। স্পষ্ট– ঐকমত্য তৈরি প্রক্রিয়াটা বেশ লম্বা ও সময়সাপেক্ষ। 

গত বুধবার রয়টার্স প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি এবং এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে।’ তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে সরকারের নির্বাচন ভাবনার যোগসূত্র আছে বলে অনেকেই মনে করেন। যেমন, জাহেদুর রহমান ডিডব্লিউর কাছে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং নতুন দল এনসিপির আহ্বায়কের কথার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সও মনে করেন, ‘প্রফেসর ইউনূস যে ডিসেম্বরের নির্বাচন থেকে শিফট করার চেষ্টা করছেন, সেটা নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে চেয়ে। ওই দলটির সঙ্গে তিনি সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। নতুন দলের প্রধানের সঙ্গে তাই তাঁর কথার মিল পাওয়া যায়।’

অন্যদিকে, বিএনপি এ মাসেই নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে (ডিডব্লিউতে প্রকাশিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য)। প্রধান বাম দলগুলোর নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় দাবি করেছে। এ মুহূর্তে অন্যতম প্রধান দল জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন পেছানোর পক্ষে কথা বললেও, বরারবই বিভিন্ন জাতীয় প্রশ্নে সুবিধাবাদী অবস্থান গ্রহণকারী দলটি ‘দ্রুত’ সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথাও বলে।

সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার সুযোগ নিয়ে ডিসেম্বরের পরও ক্ষমতায় থাকতে চায়, তা দেশের জন্য শুভ হবে বলে মনে হয় না। দেশের অর্থনীতি নিয়ে সরকারের কেউ কেউ গত কিছুদিন যাবৎ একটা গোলাপি চিত্র আঁকতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার দায়িত্ব গ্রহণের পরপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর; গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে (সমকাল)। 

আইনশৃঙ্খলার অবস্থাও তথৈবচ। ৫ আগস্টের পর থেকে যে মব সন্ত্রাস চলছে, তা প্রতি সপ্তাহেই নতুন মাত্রা ও রূপ নিচ্ছে। বিশেষত নারী এবং সমাজের ভিন্ন চিন্তা ও সংস্কৃতির মানুষ যেভাবে এর শিকার হয়ে চলেছেন, তা নজিরবিহীন।  

বিলম্বিত নির্বাচন যে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে, তারও একটা ইঙ্গিত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ দিয়েছেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রশ্নমালার ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘ওই ধরনের টিক মার্কওয়ালা প্রশ্নের আমাদের দরকার নাই। আমাদের নিজস্ব সংস্কার পরিকল্পনা এবং প্রস্তাব আছে। এটা আমরা অনেক আগেই করেছি। সরকারকেও সেটা দিয়েছি।’ তিনি বলেছেন, ‘সময় নষ্ট না করে দ্রুত নির্বাচন দরকার। তা না হলে দেশে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তা আরও খারাপ হবে। তাই সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দল যেন মোটিভেটেড হয়ে কোনো বক্তব্য না দেয়’ (ডিডব্লিউ)।

বাংলায় প্রবাদ আছে– যার কাজ তারে সাজে, অন্য লোকের লাঠি বাজে। এর মর্ম সরকারের কর্তাব্যক্তিদের না বোঝার কথা নয়।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড স ম বর র সরক র র দলগ ল র ঐকমত য আম দ র পর চ ল বল ছ ন অবস থ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল