ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে এখনো সংশয়ে বিএনপি
Published: 13th, March 2025 GMT
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো সংশয়ে আছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চলতি বছরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। খোদ সরকারের ভেতর থেকেই নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বকে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে তাঁর সরকার। নির্বাচন কমিশনও (সিইসি) সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবু ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বিএনপির নেতারা। গত সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় নেতাদের বক্তব্য-পর্যালোচনায় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা উঠে আসে।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কথা বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তিনি জাতির সামনে নির্বাচনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করবেন। এতে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য অনিশ্চয়তা কেটে যাবে, সর্বক্ষেত্রে স্বস্তি আসবে।’
সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দুটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় তিনি মনে করেন না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে। বিএনপির নেতারা এর মধ্যে ভিন্ন কিছুর আভাস দেখছেন। দলটির নেতারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য সরকারের প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা বা সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা দায়ী। এ অবস্থা চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হওয়ার লক্ষণ নেই। তাহলে কি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হলে নির্বাচন হবে না?
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির নেতারা শুরু থেকেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আসছেন। অন্যদিকে সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। দলগুলোকে চিঠি দিয়ে সংস্কারের বিষয়ে ‘ছক’ পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার মতামত পাঠানোর শেষ দিন।
বিএনপি আজ মতামত দিচ্ছে নাবিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো ছকে টিকচিহ্ন দিয়ে বিএনপি এখনই মতামত পাঠাচ্ছে না। তারা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের আলোকে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে দলীয় মতামত জানাবে। এ জন্য তারা কমিশনের কাছে সময় চেয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু ছকে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে গেলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা ছকের পাশাপাশি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে মতামত জানাব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়েও বিএনপিতে প্রশ্ন আছে। সংলাপ কাদের সঙ্গে হবে, শুধু নিবন্ধিত দল নাকি অনিবন্ধিত দলেরও হবে। নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে হলে জামায়াত ও তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা নয়। বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। কারণ, অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ হলে আরও অনেক দলকে আমন্ত্রণ জানাতে হয়।
কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি এবং সমালোচনা অব্যাহত রাখলেও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না বিএনপি। সরকারকে আস্থায় রেখেই নির্বাচনী সড়কে ওঠার দিকেই বিএনপির লক্ষ্য। তাই সরকার বিগড়ে যেতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বিএনপি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত মত মত জ ন ড স ম বর সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আগামীকাল বুধবার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা শুরু হবে। আজ মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছিল কমিশন। মতৈক্য না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ৩০টি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। গত রোববারও দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হয়। ওই দিনের আলোচনায় কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে মতৈক্য হয়নি।
এর আগে দুই পর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছে। সেখানে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এই সনদের খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
গত জুলাই মাসে এই সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল। তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সনদ আটকে আছে। অবশ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে আলাদা সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।
বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক–অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামতও নেওয়া হয়েছে।
সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায়। এর বাইরে বেশ কিছু দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে।