যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে সিলেটের মানুষের অবদান খুবই মূল্যবান: হাইকমিশনার সারাহ কুক
Published: 13th, March 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে সিলেট অঞ্চলের মানুষের অবদান খুবই মূল্যবান বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহযোগী। সিলেটের কারণে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক দিন দিন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
সিলেটের বিমানবন্দর এলাকার পাঁচ তারকা গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য হাইকমিশন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সারাহ কুক। অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়টি উল্লেখ করে সারাহ কুক বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের সাহসিকতা ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সম্মান জানাই। এ ধারাবাহিকতায় নিশ্চয়ই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সুশাসন এবং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করেন সারাহ কুক। তিনি জানান, সিলেটে গত প্রলয়ংকরী বন্যায় ব্রিটিশ সরকার সাড়ে সাত কোটি টাকা অনুদান এবং ৫০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সরকারকে অর্থায়ন করেছে ব্রিটিশ সরকার। যুক্তরাজ্য ও সিলেট কীভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে, এর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইফতার মাহফিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো.
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ও সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, আইনজীবী সৈয়দা শিরিন আক্তার, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।