সমকাল : বাজারে আপনাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা কেমন?

আবেদ-উর-রহমান : মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আমরা কার্ডটি এমনভাবে ডিজাইন করেছি, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়ে এবং গ্রাহকরা দেশব্যাপী সর্বোত্তম সুবিধা পেতে পারেন। মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ‘অ্যাড মানি’ ফ্রি রাখা হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা সহজেই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করতে পারছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পয়েন্ট অব সেলস মেশিনের ব্যবহার অত্যন্ত কম। কিন্তু এমএফএস ব্যবহারের সহজলভ্যতা রয়েছে। আমরা এমনভাবে মিডল্যান্ড অনলাইন অ্যাপ তৈরি করেছি, যেখানে সর্বাধিক ব্যবহৃত সব এমএফএস প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের জন্য একটি সহজ, সুবিধাজনক এবং নিরাপদ লেনদেনের অভিজ্ঞতা প্রদান করা।

সমকাল : গ্রাহকদের জন্য আপনাদের কত ধরনের ক্রেডিট কার্ড আছে?

আবেদ-উর-রহমান : আমাদের দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে– গোল্ড ও প্ল্যাটিনাম। কার্ডগুলো গ্রাহকদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন সুবিধা দেয়। যেমন– বিনামূল্যে এমএফএসে অর্থ যোগ করার সুযোগ, ইএমআইর পণ্য ক্রয়, ডিসকাউন্ট প্রাপ্তি, তাৎক্ষণিক নগদ প্রয়োজন মেটানো, কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ, প্রতিবার ক্রয়ের বিপরীতে রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রাপ্তি যা খরচ করা এবং আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ডিজিটাল অভিজ্ঞতা
উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহকরা ঘরে বসেই সহজে কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন শহরে ক্লাব সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি, যা আমাদের কার্ডের প্রচারে সহায়ক হবে। বিভিন্ন পেশায় সহজে কার্ড প্রাপ্তির সুবিধা তো রয়েছেই।

সমকাল : সুদহার বেড়ে যাওয়ার কোনো বিরূপ প্রভাব রয়েছে?

আবেদ-উর-রহমান: সুদহার বৃদ্ধির কারণে কিছু গ্রাহক দ্বিধায় পড়তে পারেন। তবে আমরা এই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, শাখাগুলোতে নিয়মিত  আর্থিক সাক্ষরতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছি। ব্যক্তিগত আর্থিক আচরণ পরিচালনার জন্য ৫০-৩০-২০ মডেল অনুসরণ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মাসিক আয়ের ৫০ শতাংশ খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা, ৩০ শতাংশ বিনোদন, ভ্রমণসহ ঐচ্ছিক চাহিদা  এবং ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করার  ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। মধ্যবয়সী মানুষের জন্য ২০ শতাংশ সঞ্চয় আদর্শ হলেও প্রাথমিক কর্মজীবনে ১০ শতাংশ সঞ্চয় শুরু করা যেতে পারে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার। কেননা, এটি তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে, বিলাসিতার জন্য নয়।

সমকাল: ডিজিটাল লেনদেন আরও বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?

আবেদ-উর-রহমান : ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে মানুষ নগদ লেনদেনের ক্ষতিকর দিক এবং ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবে। সহজে ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষকে ক্যাশলেস লেনদেনে উৎসাহিত করা সম্ভব। সরকারি প্রণোদনা এবং সঠিক নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন করা ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে সহায়ক হবে। নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, সরকার যদি ডিজিটাল লেনদেনের ওপর করছাড় দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত হবেন। ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে উৎসাহিত করা জরুরি। সামাজিক মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রচারণা চালানো এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে আলোচনা করা ডিজিটাল পেমেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো, ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়। 

সমকাল: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

আবেদ-উর-রহমান: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার ঘোষণা করেছি। একটির সঙ্গে এক বা দুটি ইফতার ফ্রি এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি গহনা ও লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধা দিচ্ছি। এই বিশেষ সময়কে সামনে রেখে আমরা গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছি, যা তাদের কেনাকাটাকে আরও সুবিধাজনক করে তুলবে। অন্যদিকে, বিভিন্ন গ্রোসারি শপে ৭ গুণ রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা পুরো মাসজুড়ে কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া, আমরা বিভিন্ন লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধাও দিচ্ছি,যাতে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন এবং ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এ ছাড়া সব ধরনের রিটেইল কেনাকাটার জন্য রিওয়ার্ড পয়েন্ট তো রয়েছেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড জ ট ল ল নদ ন র ল নদ ন র প ন র জন য ব যবহ র গ র হকর আর থ ক আম দ র র ওপর সমক ল ধরন র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে বিকাশের মুনাফা বেড়ে ৩০৮ কোটি টাকা

মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর এই মুনাফা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ চলতি বছরের অর্ধবর্ষ (জানুয়ারি–জুন) শেষে যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশ ৩ হাজার ২০৬ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশের ব্যবসা বেড়েছে ৭৪৪ কোটি টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ। আয়ে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও মুনাফা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিকাশ মুনাফা করেছে ৩০৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত বছরই প্রথমবারের মতো বিকাশের মুনাফা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। এবার ৬ মাসেই ৩০০ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর গত বছরই ৩০০ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছিল বিকাশ। তার আগে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২৩ সালে, ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। গত বছরের শেষে তা এক লাফে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। আর চলতি বছরের প্রথমার্ধেই ৩০৮ কোটি টাকার মুনাফা করেছে বিকাশ। বছর শেষে তা ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

২০১১ সালে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি বিকাশে রয়েছে বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জানুয়ারি-জুন ছয় মাসে বিকাশের মুনাফা বেড়ে ৩০৮ কোটি টাকা