ডিজিটাল অভিজ্ঞতা উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি
Published: 13th, March 2025 GMT
সমকাল : বাজারে আপনাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা কেমন?
আবেদ-উর-রহমান : মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আমরা কার্ডটি এমনভাবে ডিজাইন করেছি, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়ে এবং গ্রাহকরা দেশব্যাপী সর্বোত্তম সুবিধা পেতে পারেন। মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ‘অ্যাড মানি’ ফ্রি রাখা হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা সহজেই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করতে পারছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পয়েন্ট অব সেলস মেশিনের ব্যবহার অত্যন্ত কম। কিন্তু এমএফএস ব্যবহারের সহজলভ্যতা রয়েছে। আমরা এমনভাবে মিডল্যান্ড অনলাইন অ্যাপ তৈরি করেছি, যেখানে সর্বাধিক ব্যবহৃত সব এমএফএস প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের জন্য একটি সহজ, সুবিধাজনক এবং নিরাপদ লেনদেনের অভিজ্ঞতা প্রদান করা।
সমকাল : গ্রাহকদের জন্য আপনাদের কত ধরনের ক্রেডিট কার্ড আছে?
আবেদ-উর-রহমান : আমাদের দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে– গোল্ড ও প্ল্যাটিনাম। কার্ডগুলো গ্রাহকদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন সুবিধা দেয়। যেমন– বিনামূল্যে এমএফএসে অর্থ যোগ করার সুযোগ, ইএমআইর পণ্য ক্রয়, ডিসকাউন্ট প্রাপ্তি, তাৎক্ষণিক নগদ প্রয়োজন মেটানো, কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ, প্রতিবার ক্রয়ের বিপরীতে রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রাপ্তি যা খরচ করা এবং আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ডিজিটাল অভিজ্ঞতা
উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহকরা ঘরে বসেই সহজে কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন শহরে ক্লাব সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি, যা আমাদের কার্ডের প্রচারে সহায়ক হবে। বিভিন্ন পেশায় সহজে কার্ড প্রাপ্তির সুবিধা তো রয়েছেই।
সমকাল : সুদহার বেড়ে যাওয়ার কোনো বিরূপ প্রভাব রয়েছে?
আবেদ-উর-রহমান: সুদহার বৃদ্ধির কারণে কিছু গ্রাহক দ্বিধায় পড়তে পারেন। তবে আমরা এই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, শাখাগুলোতে নিয়মিত আর্থিক সাক্ষরতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছি। ব্যক্তিগত আর্থিক আচরণ পরিচালনার জন্য ৫০-৩০-২০ মডেল অনুসরণ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মাসিক আয়ের ৫০ শতাংশ খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা, ৩০ শতাংশ বিনোদন, ভ্রমণসহ ঐচ্ছিক চাহিদা এবং ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। মধ্যবয়সী মানুষের জন্য ২০ শতাংশ সঞ্চয় আদর্শ হলেও প্রাথমিক কর্মজীবনে ১০ শতাংশ সঞ্চয় শুরু করা যেতে পারে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার। কেননা, এটি তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে, বিলাসিতার জন্য নয়।
সমকাল: ডিজিটাল লেনদেন আরও বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
আবেদ-উর-রহমান : ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে মানুষ নগদ লেনদেনের ক্ষতিকর দিক এবং ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবে। সহজে ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষকে ক্যাশলেস লেনদেনে উৎসাহিত করা সম্ভব। সরকারি প্রণোদনা এবং সঠিক নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন করা ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে সহায়ক হবে। নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সরকার যদি ডিজিটাল লেনদেনের ওপর করছাড় দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত হবেন। ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে উৎসাহিত করা জরুরি। সামাজিক মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রচারণা চালানো এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে আলোচনা করা ডিজিটাল পেমেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো, ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়।
সমকাল: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
আবেদ-উর-রহমান: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার ঘোষণা করেছি। একটির সঙ্গে এক বা দুটি ইফতার ফ্রি এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি গহনা ও লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধা দিচ্ছি। এই বিশেষ সময়কে সামনে রেখে আমরা গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছি, যা তাদের কেনাকাটাকে আরও সুবিধাজনক করে তুলবে। অন্যদিকে, বিভিন্ন গ্রোসারি শপে ৭ গুণ রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা পুরো মাসজুড়ে কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া, আমরা বিভিন্ন লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধাও দিচ্ছি,যাতে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন এবং ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এ ছাড়া সব ধরনের রিটেইল কেনাকাটার জন্য রিওয়ার্ড পয়েন্ট তো রয়েছেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড জ ট ল ল নদ ন র ল নদ ন র প ন র জন য ব যবহ র গ র হকর আর থ ক আম দ র র ওপর সমক ল ধরন র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এমএফএস-ব্যাংক আন্তলেনদেন চালু হয়েছে, শুরু করতে পারেনি বিকাশ ও নগদ
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর (পিএসপি) মধ্যে আন্তলেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবা আজ শনিবার চালু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ এই সেবা চালু করতে পারেনি। এমনকি রকেটও সেবাটি চালু করতে পারেনি। ফলে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে সেবাটি চালুর জন্য। যেকোনো সময় গ্রাহকেরা সেবাটি পাবেন। অন্যদিকে নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সেবা চালু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে চালু করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেবাটি চালু করতে বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স না থাকায় নগদকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই সেবাটি চালু করেছে। আশা করছি শিগগির সবাই সেবাটি চালু করতে পারবে।’
এর আগে গত মাসের শুরুতে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করবে।
কারা চালু করতে পেরেছেআজ থেকে কারা এই সুবিধা চালু করতে পেরেছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা চালু করেছে। এই তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, রকেট ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট এই সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের টাকা জমা সুবিধা চালু হয়েছে। তবে এসব হিসাব থেকে টাকা পাঠানো সুবিধা চালু হয়নি। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান জমা ও পাঠানো দুটো সুবিধা চালু করেছে।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম এক লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তলেনদেন সেবা চালুর উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছে এবং সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এই সেবার সর্বশেষ সংস্করণে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। তবে আন্তলেনদেনের কার্যকারিতা এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত অন্য অংশীজনদের ওপরও নির্ভর করে। তাই এই মুহূর্তে আমরা শক্তিশালী অথেনটিকেশন এবং স্তরভিত্তিক (লেয়ারড) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং এ-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ (ডিসপিউট) দেখা দিলে তা সমাধান করা যায়। সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আমরা আশা করি খুব দ্রুতই গ্রাহকেরা পূর্ণাঙ্গভাবে সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
নগদের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও মাশুল নির্ধারণ, কারিগরি কমিটিসহ এ-সংক্রান্ত সব সেবায় নগদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপরও সংযোগ না পাওয়ায় সেবাটি চালু করা যায়নি।
এদিকে রকেটের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ছুটির দিনের কারণে এখনো সেবাটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি রোববার থেকে শুরু হবে।’
খরচ কতনতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।
বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা।