কেনাকাটার বিল পরিশোধে ব্যাংকের কার্ড এখন বড় ভরসা। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ব্যাংকগুলোও এখন এদিকে মনোযোগী হয়েছে। কার্ড লেনদেনে আগ্রহী করতে তাদের প্রচেষ্টা অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে কার্ড লেনদেন দ্রুত বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের পর লেনদেন বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেশে ও দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার গত ডিসেম্বরে অনেক বেড়েছে। অবশ্য রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে চলতি মাসে যে সর্বোচ্চ লেনদেন হবে, তা বলাই যায়।

ব্যাংকাররা জানান, করোনা মহামারি নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছিল। করোনার নানামুখী ধাক্কা সারাবিশ্ব আজও বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ডিজিটাল লেনদেনের আগ্রহ  করোনার কারণে বেড়েছে । করোনার পর থেকে ডিজিটাল লেনদেন দ্রুত বেড়েছে। কেবল ক্রেডিট কার্ড নয়; ডেবিট, প্রিপেইড কার্ডের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। ২০২০ সালের শুরুতে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে করোনার আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ে ওই বছরের মার্চে। এর পর লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংক শাখা বন্ধ ছিল। ওই সময় লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য বড় ভরসা হয়ে ওঠে কার্ড, অ্যাপ, এমএফএসসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এর পরই মূলত দ্রুত সেবার প্রসার ঘটেছে। ব্যাংকগুলোও এ ধরনের নানা সেবা এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ লাখ ৭৬ হাজার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ১৫ লাখ ২৪ হাজার। ওই বছরের জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে তা ৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় উঠেছে। কার্ড লেনদেনে আগ্রহী করতে ব্যাংকগুলো নানা প্রচার চালিয়ে আসছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়তি আকর্ষণের জন্য কেনাকাটার বিল পরিশোধে দেওয়া হচ্ছে মূল্যছাড় বা ক্যাশব্যাক অফার। সবচেয়ে বেশি অফার পেয়ে থাকেন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা।

ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ড দিয়েও সব ধরনের লেনদেন করা যায়। এমনকি অনেক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড থেকে বিদেশেও পরিশোধ করা যায়। ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ডে বিল পরিশোধেও মিলছে নানা ছাড়। গত পাঁচ বছরে কার্ডের সংখ্যা ১৪২ শতাংশ বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে ৪ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছেছে। ২০২০ সালে যা ছিল মাত্র ২ কোটি ৬ লাখের কম। আর ২০২০ সালের তুলনায় কার্ড লেনদেন ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কার্ডে মোট লেনদেন ছিল ১৬ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৪৪ হাজার ৬৯১ কোট টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ লেনদেন কমাতে বিভিন্নভাবে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের মোট লেনদেনের অন্তত ৭৫ শতাংশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবশ্য বিনিময়সহ যেসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর প্রচারণা চালানো হচ্ছিল, এরই মধ্যে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, কয়েক বছর আগে প্রচলিত ধারার হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ছিল। এখন অনেক ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোও এখন ক্রেডিট কার্ড সেবায় যুক্ত হয়েছে। আবার মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ও লেনদেন বাড়ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘লেস ক্যাশ’ সোসাইটির কথা বলছে। নগদ লেনদেন কমানোর জন্য কার্ড, অ্যাপভিত্তিক লেনদেন বাড়ানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন ক্রেডিট, ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি অ্যাপভিত্তিক অনেক ধরনের লেনদেন হচ্ছে।

দেশের এসব কার্ডের বড় একটি অংশ রয়েছে কয়েকটি ব্যাংকে। ক্রেডিট কার্ডে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংক। পর্যায়ক্রমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইউসিবিএল, ইস্টার্ন, ডাচ্‌-বাংলা, ন্যাশনাল, সাউথইস্ট ও ব্যাংক এশিয়া রয়েছে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায়। ডেবিট কার্ডে এখন শীর্ষে রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। পর্যায়ক্রমে ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি, সোনালী, ইউসিবিএল, ব্র্যাক, যমুনা, ট্রাস্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক রয়েছে তালিকায়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘ক্যাশলেস’ করার জন্য কার্ডভিত্তিক লেনদেন বাড়ানো খুব জরুরি। নগদ বহনের ঝামেলা না থাকায় এটি নিরাপদও। নিজের প্রয়োজনে কার্ডের প্রতি মানুষের ঝোঁক অনেক বেড়েছে। ব্যাংকগুলোও নানা অফার ও সুবিধার মাধ্যমে কার্ডের প্রতি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। এর পরও অনেকে এখনও কার্ড ব্যবহার করেন না। কার্ড ব্যবহারে সবাই উৎসাহ পায়, এমন আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে লেনদেন বাড়বে। 

তিনি বলেন, যে কোনো অঙ্কের ক্রেডিট কার্ডে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কার্ড লেনদেন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি প্রত্যাহার করে বরং দুই লাখ বা পাঁচ লাখ টাকার একটি সীমা দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করলে বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। কর ছাড় বা অন্য কোনো সুবিধা দিলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে। এখন ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকে ছোট ছোট ব্যবসা করছে। 

বেশি ব্যবহার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের বেশির ভাগই তিনটি ব্র্যান্ডের– ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং অ্যামেক্স ১০ শতাংশ। দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিল পরিশোধে। গত ডিসেম্বরে দেশের ভেতরে মোট ৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা লেনদেনের প্রায় ৪৯ শতাংশই হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। দেশের ভেতরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ গেছে খুচরা আউটলেট সেবার বিলে। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ নগদ উত্তোলন, কাপড়ের দোকানের বিল পরিশোধে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ওষুধে ৫ দশমিক ৪০, ট্রান্সপোর্টেশনে ৩ দশমিক ৩৫ এবং সরকারি সেবায় ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ব্যবসায়িক
সেবায় ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং পেশাদারি সেবায় ব্যয় হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এর পর গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তা কমে যায়। সরকার পরিবর্তনের পর গত সেপ্টেম্বর থেকে আবার বেড়েছে।

অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ডে দেশের বাইরে ৪৯২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ গেছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিল পরিশোধে। খুচরা আউটলেট সেবায় ব্যয় হয়েছে ১৭ শতাংশ। ওষুধে ১০ শতাংশ এবং ট্রান্সপোর্টেশনে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া কাপড়, ব্যবসায়িক সেবা, পেশাদারি সেবা, নগদ উত্তোলন, সরকারি সেবা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধে গেছে বাকি অর্থ।

গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। গত জুলাই পর্যন্ত বিদেশে ক্রেডির্ট কার্ড লেনদেনের ৩০ শতাংশের বেশি হতো ভারতে। এখন তা কমে ৮ শতাংশে নেমেছে। গত কয়েক মাস ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড। গত ডিসেম্বরে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে মোট ৪৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ ব্যয় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ খরচ হয়েছে থাইল্যান্ডে। এর পরের অবস্থানে থাকা সিঙ্গাপুরে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

গত ডিসেম্বরে চতুর্থ অবস্থানে নেমে আসা ভারতে খরচ হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ রয়েছে তালিকায়। ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখন ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অন্য দেশে যাচ্ছে। একইভাবে গত ডিসেম্বরে বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশে এসে ২৪১ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের খরচ ছিল ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। আর ভারতের নাগরিকদের খরচ হয়েছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া, মোজাম্বিক, কানাডা, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশ রয়েছে তালিকায়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব ল পর শ ধ ক র ড ল নদ ন ল নদ ন ব ড় ন ২০২০ স ল র ল নদ ন র র ল নদ ন ব যবহ র ন র পর র জন য পর য য় অন ক ব কর ন র ধরন র দশম ক সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।

এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।

এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন। 

এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।

কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।

সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা। 

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।

বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়। 

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন। 

সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন। 

জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।

ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন। 

এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা/তানিম/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’