উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কিং রিয়াল মাদ্রিদ। আর সেই চ্যাম্পিয়ন মাদ্রিদকেই বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে ভীষণ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ম্যাচজুড়ে এলোমেলো পারফরম্যান্স করা রিয়াল অবশ্য দিনশেষে বিজয়ীর হাসি হেসেছে। টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় নাটকীয়ভাবে ৪-২ ব্যবধানে জিতে আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।

প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠে ২-১ গোলে হার মানা অ্যাটলেটিকো এদিন ঘরের মাঠ পেয়ে জ্বলে উঠে। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কনর গালাহারের অসাধারণ এক গোলে লিড নিয়ে নেয় তারা। সেই লিড নিয়ে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা।

প্রথমার্ধে এলোমেলো পারফরম্যান্স করা রিয়াল অবশ্য বিরতির পর গোল করে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে অ্যাটলেটিকোর ল্যাংলেট বক্সের মধ্যে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। দুর্ভাগ্য বলতে হবে রিয়ালের, দুর্ভাগ্য বলতে হবে ভিনিসিউস জুনিয়রের। তার নেওয়া পেনাল্টি শট দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাতে অ্যাটলেটিকো ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ করে।

আরো পড়ুন:

অ্যাতলেটিকোর ঘরের মাঠে রিয়ালের সুযোগ আছে?

জয়ের পর আনচেলত্তি জানালেন, নজর কেবল ‘তিন পয়েন্টে’

তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। সুযোগ আর গোল মিসের মহড়া। তাতে ১২০ মিনিটও শেষ হয় ২-২ সমতায়। এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায়। যে পরীক্ষায় অ্যাটলেটিকো হেরে যায়, রিয়াল বীরের বেশে মেট্রোপলিটানো থেকে বার্নাব্যুতে ফেরে।

টাইব্রেকারে রিয়াল আগে কিক নেওয়ার সুযোগ পায়। তাদের তারকা এমবাপ্পে প্রথম শটেই গোল করেন। অ্যাটলেটিকোর আলেক্সজান্ডার সোরলোথও যথারীতি লক্ষ্যভেদ করেন। রিয়ালের জুদ বেলিংহ্যামও বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়ে বসেন অ্যাটলেটিকোর জুলিয়ান আলভারেজ। তিনি কিক নিতে গিয়ে পা পিছলে যান। তারপরও বল জালে পাঠান। কিন্তু পিছলে গিয়ে তার দুই পায়ের স্পর্শ লাগে বলে। নিয়ম অনুযায়ী তাতে তার গোলটি বাতিল হয়। রিয়াল এগিয়ে যায়।

এরপর রিয়ালের ফেদেরিকো ভালভার্দে ও অ্যাটলেটিকোর অ্যাঞ্জেল কোরেরা গোল করেন। কিন্তু রিয়ালের লুকাস ভাসকেজের নেওয়া চতুর্থ শট রুখে দেন অ্যাটলেটিকোর গোলরক্ষক জান ওব্লাক। তাতে সম্ভাবনা তৈরি হয় তাদেরও। কিন্তু রিয়ালের থিবাউট কোর্তোয়া অ্যাটলেটিকোর মার্কোস লরেন্তের নেওয়া চতুর্থ শটটি রুখে দিয়ে এগিয়ে রাখেন দলকে। আর অ্যান্তোনিও রুদিগারের নেওয়া পঞ্চম শটটি ওব্লাকের হাত ছুঁয়ে জালে ঢুকে গেলে মেট্রোপলিটানোতে রিয়ালের আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়ে যায়। ৪-২ ব্যবধানে টাইব্রেকার জিতে শেষ আটে জায়গা করে নেয় কার্লো আনচেলোত্তির শিষ্যরা।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।

অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’

অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান

এনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।

জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’

আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।

এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগে

এনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’

আরও পড়ুনঅনুশীলনে বলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের মৃত্যু২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’
  • খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
  • বোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানেরা ডোবান—আজ কী করবে বাংলাদেশ