রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানেরা আইয়ামে বিয ও আশুরার রোজা রাখতেন। তবে সেটি তাদের ওপর ফরজ ছিল না, ছিল সুন্নত। আইয়ামে বিয বা প্রতিমাসের মাঝখানের তিন দিন রোজা ইসলামপূর্ব সময়ের মতো করে রাখা হতো। মদিনায় হিজরতের পরে ইহুদিদের আশুরার রোজা পালন দেখে মহররম মাসে মুসলিমগণ তাদের চেয়েও একদিন বেশি রোজা রাখা শুরু করে। কিন্তু এসবই ছিল ঐচ্ছিক, রাখার জন্য বাধ্য-বাধকতা ছিল না। (শারহুন নাবাবি আলাল মুসলিম, হাদিস: ১১২৫)
তবে রোজা এক বিধানে একযোগে ফরজ করা হয়নি, বরং ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে ফরজ করা হয়।
ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস যখন মুসলমানদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে গেল, নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা বৃদ্ধি পেতে পেতে ভালোবাসার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাল এবং তাদের মধ্যে শরিয়তের হুকুম-আহকাম ও আল্লাহর নির্দেশ পালন করার এমন এক মন ও মেজাজ সৃষ্টি হয়ে গেল যে, মনে হচ্ছিল তারা যেন সে-সব হুকুম-আহকামের অপেক্ষায় থাকেন, তখন আল্লাহ তাআলা রোজার হুকুম নাজিল করলেন।
আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫এটি হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষের ঘটনা। অর্থাৎ নবুওয়াতের পনেরোতম বছরে এসে রোজার বিধান অবতীর্ণ হয়। প্রথমে নাজিল হয় এই আয়াত, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)
তবে প্রথমেই মাসব্যাপী রোজা ফরজ হয় নি। বরং হাতেগোনা কয়েক দিন রোজা ফরজ ছিল, যেন তা কঠিন মনে না হয়। (তাফসিরে তাবারি, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির, ৪১৩)
দ্বিতীয় পর্যায়ে এ আয়াত নাজিল হয়, ‘গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
আরও পড়ুনরমজানে ৬টি অভ্যাস১০ মার্চ ২০২৫তবে ফরজ হলেও রোজা না রেখে তার বদলে মিসকিনদের খাওয়ানোর স্বাধীনতা তখনো ছিল।
মাআজ ইবনে জাবাল (রা.
আয়াত নাজিল করে রোজা সকলের জন্য আবশ্যিক করে প্রদত্ত স্বাধীনতাকে রহিত করা হয়েছে। উম্মাহের সকল ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এ-আয়াত প্রমাণ করে, রমজান মাসের রোজা ফরজ। যদি কোনো ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা রাখা না-রাখে, তাহলে সে কবিরা গুনাহ তথা মহাপাপের ভাগীদার হবে।
আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫খ্যাতিমান ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) তার নবিয়ে রহমত গ্রন্থে বলেন, এভাবে ধাপে ধাপে রোজা ফরজ করার হিকমত হচ্ছে, বিধান প্রবর্তনের উম্মতের প্রতি সহজীকরণ ও ক্রমান্বয়িক নীতি পরিগ্রহণ। কারণ সিয়াম একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। মুসলমানরা আগে থেকে এ ব্যাপারে খুব একটা অভ্যস্ত ছিলেন না। যদি সূচনাতেই এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে ব্যাপারটি তাদের জন্য কঠিন হয়ে যেতো। তাই প্রথমে রোজা ও ফিদিয়ার মাঝে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আস্তে আস্তে তাদের একিন মজবুত হয়েছে, মানসিক অবস্থা স্থিরতা লাভ করেছে এবং ধীরে ধীরে রোজার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তখন স্বাধীনতা উঠিয়ে নিয়ে কেবল রোজাকে আবশ্যিক করা হয়েছে। কঠিন ও কষ্টসাধ্য বিধি-বিধানের ব্যাপারে ইসলামে এর বহু নজির বিদ্যমান। একে পরিভাষায় ক্রমান্বয়ে প্রবর্তন বলা হয়।
আরও পড়ুনতারাবি কত রাকাত পড়বেন১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য দ র ওপর ইসল ম রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা, ৩১ জুলাই ভোটগ্রহণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। একই দিনে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
বুধবার রাত পৌনে ১টার দিকে এই তপশিল ঘোষণা করেন জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান।
এর আগে রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তপশিল ঘোষণার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। তিনি বলেন, জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৮-এর (খ) ধারা অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং হল সংসদ নির্বাচন একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে।
দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে জাকসু না থাকায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ। উপেক্ষিত হয়ে আসছে শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া৷ তবে এবার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সেই অধিকার ফিরে পাবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে সিনেটে ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আসে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ গতকাল পরিবেশ পরিষদের একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে, সেখানে একটি সুন্দর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্রীড়াশীল সংগঠন, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি।’
রাত পৌনে ১টার দিকে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, ‘তফশিল অনুযায়ী ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে৷ ২১ মে খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ ও আচরণবিধি মতামত গ্রহণ, ৩০ জুন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে।’
আগামী ১ জুলাই থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে মনোনয়ন সংগ্রহ করা এবং ৭ জুলাই মনোনয়ন জমাদানের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে৷ ৯ জুলাই মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই ও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ শেষে ১১ জুলাই পর্যন্ত মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এছাড়া ১৪ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ও ১৫ জুলাই প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং ১৬ জুলাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে৷ একই দিন থেকে ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা করা যাবে।