Prothomalo:
2025-07-31@07:23:36 GMT

ইসলামে যেভাবে রোজা এল

Published: 14th, March 2025 GMT

রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানেরা আইয়ামে বিয ও আশুরার রোজা রাখতেন। তবে সেটি তাদের ওপর ফরজ ছিল না, ছিল সুন্নত। আইয়ামে বিয বা প্রতিমাসের মাঝখানের তিন দিন রোজা ইসলামপূর্ব সময়ের মতো করে রাখা হতো। মদিনায় হিজরতের পরে ইহুদিদের আশুরার রোজা পালন দেখে মহররম মাসে মুসলিমগণ তাদের চেয়েও একদিন বেশি রোজা রাখা শুরু করে। কিন্তু এসবই ছিল ঐচ্ছিক, রাখার জন্য বাধ্য-বাধকতা ছিল না। (শারহুন নাবাবি আলাল মুসলিম, হাদিস: ১১২৫)

তবে রোজা এক বিধানে একযোগে ফরজ করা হয়নি, বরং ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে ফরজ করা হয়।

ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস যখন মুসলমানদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে গেল, নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা বৃদ্ধি পেতে পেতে ভালোবাসার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাল এবং তাদের মধ্যে শরিয়তের হুকুম-আহকাম ও আল্লাহর নির্দেশ পালন করার এমন এক মন ও মেজাজ সৃষ্টি হয়ে গেল যে, মনে হচ্ছিল তারা যেন সে-সব হুকুম-আহকামের অপেক্ষায় থাকেন, তখন আল্লাহ তাআলা রোজার হুকুম নাজিল করলেন।

আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১০ মার্চ ২০২৫

এটি হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষের ঘটনা। অর্থাৎ নবুওয়াতের পনেরোতম বছরে এসে রোজার বিধান অবতীর্ণ হয়। প্রথমে নাজিল হয় এই আয়াত, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যে রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

তবে প্রথমেই মাসব্যাপী রোজা ফরজ হয় নি। বরং হাতেগোনা কয়েক দিন রোজা ফরজ ছিল, যেন তা কঠিন মনে না হয়। (তাফসিরে তাবারি, সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসির, ৪১৩)

দ্বিতীয় পর্যায়ে এ আয়াত নাজিল হয়, ‘গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

আরও পড়ুনরমজানে ৬টি অভ্যাস১০ মার্চ ২০২৫

তবে ফরজ হলেও রোজা না রেখে তার বদলে মিসকিনদের খাওয়ানোর স্বাধীনতা তখনো ছিল।

মাআজ ইবনে জাবাল (রা.

) বলেন, প্রথমদিকে যার ইচ্ছা রাখত, যার ইচ্ছা না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করত। পরে এই সুযোগ রহিত হয়ে যায়। এরপরে নাজিল হয় রমজানে রোজা রাখার অপরিহার্য বিধান, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

আয়াত নাজিল করে রোজা সকলের জন্য আবশ্যিক করে প্রদত্ত স্বাধীনতাকে রহিত করা হয়েছে। উম্মাহের সকল ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এ-আয়াত প্রমাণ করে, রমজান মাসের রোজা ফরজ। যদি কোনো ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা রাখা না-রাখে, তাহলে সে কবিরা গুনাহ তথা মহাপাপের ভাগীদার হবে।

আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫

খ্যাতিমান ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) তার নবিয়ে রহমত গ্রন্থে বলেন, এভাবে ধাপে ধাপে রোজা ফরজ করার হিকমত হচ্ছে, বিধান প্রবর্তনের উম্মতের প্রতি সহজীকরণ ও ক্রমান্বয়িক নীতি পরিগ্রহণ। কারণ সিয়াম একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। মুসলমানরা আগে থেকে এ ব্যাপারে খুব একটা অভ্যস্ত ছিলেন না। যদি সূচনাতেই এটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে ব্যাপারটি তাদের জন্য কঠিন হয়ে যেতো। তাই প্রথমে রোজা ও ফিদিয়ার মাঝে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আস্তে আস্তে তাদের একিন মজবুত হয়েছে, মানসিক অবস্থা স্থিরতা লাভ করেছে এবং ধীরে ধীরে রোজার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তখন স্বাধীনতা উঠিয়ে নিয়ে কেবল রোজাকে আবশ্যিক করা হয়েছে। কঠিন ও কষ্টসাধ্য বিধি-বিধানের ব্যাপারে ইসলামে এর বহু নজির বিদ্যমান। একে পরিভাষায় ক্রমান্বয়ে প্রবর্তন বলা হয়।

আরও পড়ুনতারাবি কত রাকাত পড়বেন১০ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য দ র ওপর ইসল ম রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ