লংকারচর বালুমহাল। দরপত্র বেচা হয় ১৯টি। জমা পড়ে একটি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘটনা এটি। এতে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও তা আমলে নিচ্ছেন না জেলা প্রশাসক (ডিসি)।

জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি বালুমহালের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ডিসি। এগুলো বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গায়। লংকারচর মহালের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৮ টাকা। ঘোষপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর এ মহালের আয়তন ৭৪ হাজার ১৪৭ একর।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে দরপত্র বেচার শেষ দিন ছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল জমার শেষ দিন। দরপত্র কেনেন ১৯ জন। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জমা পড়ে একটি। এটি জমা দেন বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের কান্দাকুল গ্রামের বাসিন্দা ও মেসার্স রবিউল ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম। প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বেশি হওয়ায় তাঁকে ইজারা দেওয়া হয়।

এদিকে দরপত্র জমা দিতে হুমকি-ধমকি পান ঠিকাদাররা। বাধাও পান। তাদের অভিযোগ, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম হুমকি-ধমকি দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। তিনি ফরিদপুর-১ (মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী) আসনের সাবেক এমপি। এ কারণে অন্য ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেননি। রবিউলকে ইজারা পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেন নাসিরুল।

জানা যায়, রবিউল ইসলাম বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের সদস্য। ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনও।

এ নিয়ে সম্প্রতি ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মেসার্স মোহনা ট্রেডার্সের মালিক শেখ আজিজুল হক। এতে ১০ ঠিকাদার সই করেন। আজিজুল সমকালকে বলেন, ‘জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতার উপস্থিতিতে ডিসির হাতে অভিযোগপত্র তুলে দিয়েছি।’
অভিযোগে উল্লেখ করেন, রবিউল-নাসিরুল মিলে তাদের ভয়ভীতি দেখান। দরপত্র জমা না দিতে বলেন। এ অবস্থায় দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হন তারা। বাহিনী দিয়ে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ না করতে হত্যার হুমকিও দেয়।

আজিজুল বলেন, ‘নাসিরুলের সঙ্গে আমাদের কথা ছিল, আওয়ামী লীগের কোনো লোক ইজারা নিতে পারবে না। নাসিরুলের ঘনিষ্ঠ রিপনকে দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু বেশি টাকার বিনিময়ে যুবলীগ নেতাকে দেওয়া হয়েছে। আমরা যারা দরপত্র কিনেছিলাম, প্রত্যেককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঠিকাদার মৃত্যঞ্জয়কে তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে ভয়ভীতি দেখায়।’

তিনি আরও জানান, গতবার সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী ওই যুবলীগ নেতাকে বালুমহাল পাইয়ে দেন। এবার নাসিরের মাধ্যমে পেলেন।

যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘এই বালুমহাল আমার। বিগত দিন, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মালিক আমি। সরকারকে রাজস্ব বেশি দিয়েছি। তাহলে আমাকে দেবে না, কাকে দেবে?’

অভিযোগ অস্বীকার করেন ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমি তো বালুর ব্যবসা করি না। আমি কেন বাধা দিতে যাব? আমি বাধা দিয়েছি– কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন? যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনএমের লোক। ষড়যন্ত্র করে শিডিউল কিনে আমাকে হয়রানি করছে।’ তিনি সমকাল প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি আগেও আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছেন। সবাই আমাকে ভয় পায়, আপনি ভয় পান না কেন?’

খন্দকার নাসিরুলের বিরুদ্ধে সমকালে ‘কৃষক দল নেতা নাসিরুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ফরিদপুরের ডিসি মো.

কামরুল হাসান মোল্যা সমকালকে বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসেনি। আর এলেও আমলে নেওয়ার কিছু নেই। শিডিউল কিনে কেউ যদি ডিসি, ইউএনও অফিসে জমা না দিতে পারে জানাবে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি। তারা যদি আমার দপ্তরে এসে বাধা পেয়ে জানাত, তাহলে আমি দেখতাম কোন সেই পাওয়ারফুল লোক, কে সেই মাস্তান? বাইরে থেকে কেউ যদি বাধা সৃষ্টি করে, সে বিষয় তো আমার মাথাব্যথার না। জমা দেওয়ার পরে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়, তাহলে আমার দেখার বিষয়।’

তিনি জানান, বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম রয়েছে, সরকারি মূল্যের চেয়ে যদি বেশি হয় এবং একক কেউ থাকে, তাহলে তাকে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়নি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য বল গ ন ত র স ব ক এমপ য বল গ ন ত ল ইসল ম সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ