জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ প্রয়োজন
Published: 14th, March 2025 GMT
বেশির ভাগ বাসাবাড়ি ও দোকানে জ্বালানি সাশ্রয়ী এলইডি বাতির ব্যবহার দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, আগের তুলনায় দেশে জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বেড়েছে। আবার উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার ক্রমে বাড়লেও মানুষের মাঝে সাধারণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চেয়ে ব্যয়বহুল জ্বালানি সাশ্রয়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কেনার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষ মোটর ও বয়লার, এলইডি টিউব লাইট, ইন্সুলেশন, ভার্টিক্যাল রোলার মিল এবং জেনারেটর থেকে নির্গত তাপের ব্যবহার বেড়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং কার্বন নির্গমন হ্রাসের চাপ পোশাকশিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। বলে রাখা প্রয়োজন, সবুজ কারখানার সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ পৃথিবীতে শীর্ষস্থান দখল করেছে। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদিত নতুন টেকসই রূপরেখার ফলে পোশাকশিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
তিন বছর ধরে আমরা মূলত জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বারবার মূল্য সমন্বয় করার পরও আমদানি-নির্ভরতা এবং বিদ্যুৎ খাতে মাত্রাতিরিক্ত লোকসানের কারণে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। এবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমস্যা সমাধানে সরকার আশ্বস্ত করেছে। তবে বকেয়া বিল ও ডলার সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাত এ বছরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
এদিকে জ্বালানি সংকটের মাঝে বাংলাদেশ সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের দাম প্রায় আড়াই গুণ করার পরিকল্পনা করেছে। যদিও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভবিষ্যতে জ্বালানি আর আগের মতো সুলভ মূল্যে পাওয়া যাবে না। সঙ্গে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির দিকে তাকালে বোঝা যায়, সরকারকে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম আরও সমন্বয় করতে হবে। এ অবস্থায় খরচ বাঁচাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ সবার (বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন এবং কারখানা) জন্যই লাভজনক। আবার বিভিন্ন খাতে জ্বালানি সাশ্রয়ের সুযোগের পুরো সুবিধা আমরা নিতে পারিনি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিসিসের (আইইইএফএ) গবেষণায় দেখা যায়, শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ জেনারেটরের দক্ষতা আগের চেয়ে বাড়লেও তা এখনও ৩৫.
২০২০-২১ সালের দিকে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও তা অনেকটা স্তিমিত। এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রাখতে হবে, যাতে মানুষ জ্বালানি দক্ষ যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহী হয় এবং এর আর্থিক সাশ্রয় অনুধাবন করতে পারে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জ্বালানি দক্ষতার স্ট্যান্ডার্ড এবং লেভেল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে মানুষ জ্বালানি দক্ষ যন্ত্রপাতি কেনায় সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ বিষয়ে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) কাজ করে যাচ্ছে।
সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো জ্বালানি ব্যবহারে অপচয় রোধে মানুষকে উৎসাহিত করা এবং তাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা। উন্নত দেশগুলোয় এ ধরনের কার্যক্রম প্রায়ই পরিচালনা করা হয়। আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র যাতে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রেখে না ব্যবহার করা হয়, তা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। ভারতে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের সময় প্রতি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বাড়ানো হলে প্রায় ৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। এ ক্ষেত্রেও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
অন্যদিকে শিল্পকারখানায় জ্বালানি দক্ষতা আরও বাড়াতে হলে জ্বালানি নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি নিরীক্ষার প্রবণতা বেড়েছে মূলত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে। তবে পর্যাপ্ত অর্থায়নের সুযোগ না থাকায় অনেক শিল্পকারখানাতেই জ্বালানি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসা বিভিন্ন সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি কিংবা বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। স্রেডা এ পর্যন্ত ১৮৯ প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত ভোক্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্রেডা একটি ডেটাবেজ তৈরি করবে, যেখানে জ্বালানি ব্যবহার এবং সাশ্রয়ের সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত থাকবে। তবে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে মনোনীত ভোক্তাদের জ্বালানি ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু অর্জিত হলো কিংবা কোনো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কিনা, তা স্রেডাকে পর্যবেক্ষণ এবং সমাধানের পথ বের করতে হবে।
জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে নেওয়া প্রকল্পে যন্ত্রপাতি পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ পেলে প্রকল্পগুলো আর্থিকভাবে লাভজনক হয়। সবুজ প্রকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৫ শতাংশ সুদে প্রদেয় পুনঃঅর্থায়ন জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সচেতনতার অভাবে কিংবা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিলগুলোর ব্যবহারের হার অনেকটাই কম। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুনঃঅর্থায়নের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হলে তা দেশের জ্বালানি খাতের জন্য হবে মঙ্গলজনক।
জাইকার অর্থায়ন সুবিধায় বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) ঋণে বেশ কিছু কারখানায় জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া ইডকল কর্তৃক সবুজ জলবায়ু তহবিলের আওতায় গৃহীত প্রকল্প পোশাকশিল্প খাতে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা যায়।
পরিশেষে আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল এই দেশে জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংকুলান নিয়ে যত আলোচনা হয়, তার চেয়ে অনেক কম আলোচনা হয় জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে। সঙ্গে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও জ্বালানির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই । আর এতে
প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, অনুকূল নীতিমালা, অর্থায়ন এবং সব অংশীজনের সচেতনতা।
শফিকুল আলম: প্রকৌশলী ও পরিবেশ অর্থনীতিবিদ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবহ র ব যবহ র ক প রকল প সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা
দেশের উপকূলীয় এলাকায় সক্রিয় রয়েছে স্থানীয় মৌসুমী বায়ু। এর প্রভাবে চার সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার পূর্বভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
আজ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুরে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। একইসঙ্গে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারা দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এই দিন থেকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে, বিশেষ করে নদীতীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের। একইসঙ্গে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা ও কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে খুলনায় ৭৫ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নরসিংদীতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা