ঢাকা জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ইউনিয়নে স্কুল নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২২ সালের ২২ জুন। প্রকল্পের সব ধাপের কাজ শেষ করে ঠিকাদার অর্থছাড়ের চেক নিতে গেলে সন্দেহ হয় একজন কর্মকর্তার। পরে তদন্তে উঠে আসে এ স্কুলের কোনো অস্তিত্ব নেই।

অভিনব এ ঘটনা ঘটেছে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কৈবর্তপাড়া এলাকায়। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সুপারিশে ‘কৈবর্তপাড়া স্কুল’ নামের ওই বিদ্যালয় নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করেছিল ঢাকা জেলা পরিষদ। নসরুল কেরানীগঞ্জ থেকে দলটির সংসদ সদস্য ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চলতি মার্চে কয়েকবার নসরুল হামিদের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে কৈবর্তপাড়ায় গিয়ে মার্চের ২ তারিখে এ প্রতিবেদক এলাকাবাসীর কাছে তাঁর অবস্থান সম্পর্ক জানতে চান। তাঁরা কেউ সেটি জানাতে পারেননি। গত ৫ আগস্টের পর নসরুলকে এলাকায় দেখা যায়নি বলে জানান তাঁরা।

সরেজমিনে কৈবর্তপাড়া

রাজধানীর সদরঘাট হয়ে বুড়িগঙ্গা পার হলেই শুভাঢ্যা ইউনিয়ন। এরপর রিকশা নিয়ে পূর্ব দিকে এগোলে কালিগঞ্জ বাজার। এটির ডান পাশে একটা গলির মুখ থেকেই শুরু কৈবর্তপাড়া। সংকীর্ণ গলি ধরে কিছুদূর গেলে রাস্তার বাঁ পাশে একটা মাঠ। এর দক্ষিণে এক ইটের একটি দেয়াল আর পূর্বে একটি টিনশেড ঘর। মাঠটি এলাকাবাসীর কাছে স্কুলমাঠ নামে পরিচিত।

মাঠের পাশে আবদুর রউফ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। প্রায় ২৫ বছর এ এলাকায় আছেন তিনি। মাঠের পাশে তাঁর একটি ওষুধের দোকান।

আবদুর রউফ বলেন, এলাকার সবাই জানে এখানে একটি স্কুল হওয়ার কথা ছিল কয়েক বছর আগে। আওয়ামী লীগের আমলে ঘটা করে একদিন দেখা গেল, শুভাঢ্যার চেয়ারম্যান ইকবাল ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিজান একটি দেয়াল নির্মাণের কাজ তদারক করছেন। ওইটুকু পর্যন্তই। এরপর আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

একই স্থানে বিএনপির আমলে একবার স্কুল করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বছর কয়েক আগে আমরা মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাদের আসা-যাওয়া দেখতাম। এলাকার লোকমুখে স্কুলের টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার কথা শুনেছি কয়েকবার। এসব নিয়ে তখন তো কথা বলা যেত না। —জামাল উদ্দিন, কৈবর্তপাড়ার বাসিন্দা

এ প্রসঙ্গে আবদুর রউফ বলেন, এই জায়গায় ২০০২ সালে একটি কেজি স্কুল (কিন্ডারগার্টেন) করার জন্য একটা টিনশেড স্থাপনা করা হয়েছিল। কিছু ছাত্র-ছাত্রীও ভর্তি হয়েছিল। এরপর আর এগোয়নি উদ্যোগটা। আওয়ামী লীগ আমলে নতুন স্কুল করার নাম দিয়ে ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।

কৈবর্তপাড়ার আরেক বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বছর কয়েক আগে আমরা মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাদের আসা–যাওয়া দেখতাম। এলাকার লোকমুখে স্কুলের টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার কথা শুনেছি কয়েকবার। এসব নিয়ে তখন তো কথা বলা যেত না।’

এই এলাকায় মোট চারটি মাদ্রাসা ও একটি বেসরকারি স্কুল দেখেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক।

দুই দফায় বরাদ্দ ১ কোটি ১০ লাখ টাকা

ঢাকা জেলা পরিষদ ২০২২–২৩ অর্থবছরে স্কুলটির জন্য বরাদ্দ দেয় ৭০ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আরও ৪০ লাখ মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।

এ–সংক্রান্ত নথি অনুযায়ী, স্কুল নির্মাণের কাজ পেয়েছে মেসার্স আওয়াল ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার ধামরাইয়ের বান্নাল এলাকার।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বছর আগে স্কুল নির্মাণের কার্যাদেশ পাই। পরে স্থানীয় একজন আমার লাইসেন্সের অধীনে নির্মাণের কাজটি নেয়। সেখানে একটা বাউন্ডারি, না কী একটা করেছে। আমি কোনো খবর নিইনি।’

চলতি মার্চে কয়েকবার নসরুল হামিদের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে কৈবর্তপাড়ায় গিয়ে মার্চের ২ তারিখে এ প্রতিবেদক এলাকাবাসীর কাছে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। তাঁরা কেউ সেটি জানাতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর নসরুলকে এলাকায় দেখা যায়নি বলে জানান তাঁরা।

কাজ না করলে বিল নিতে ঢাকা জেলা পরিষদে কেন গেছেন—জানতে চাইলে আওয়াল তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ঝামেলায় আছি। এক বছর ধরে এই এলাকায় যাই না। বিলও নিতে যাইনি।’

স্কুলটির বিষয়ে তদন্ত করেন কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কৈবর্তপাড়ায় সরকারি কোনো বৈধ স্কুল নেই।

রিনাত ফৌজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছরের ২৯ জানুয়ারি আমি তদন্তে যাই। গিয়ে স্কুলের কোনো অস্তিত্ব পাইনি। কৈবর্তপাড়া স্কুল করার জন্য ঢাকা জেলা পরিষদ থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। অর্থছাড়ের সময় সন্দেহ হলে জেলা পরিষদ থেকে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত সরকারি টাকা আত্মসাতের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।’

আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলএনজি ব্যবসায় চক্র, নেপথ্যে নসরুল হামিদ০৮ নভেম্বর ২০২৪প্রকল্প পরিদর্শন না করেই প্রাক্কলনের অভিযোগ

ঢাকা জেলা পরিষদের কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার আগে প্রকল্পের স্থান প্রকৌশলীদের পরিদর্শনের বিধান রয়েছে।

কিন্তু ওই প্রকল্পের স্থান পরিদর্শন না করে প্রকল্প প্রাক্কলন করায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী আবদুস ছামাদ পত্তনদার, সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী মো.

খলিলুর রহমান ও ফজলুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে পরিষদ।

প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনৈতিকতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে এটি একটি বহুমাত্রিক দুর্নীতির ঘটনা। যে কর্মকর্তা এ টাকা হস্তান্তর আটকে দিয়েছেন, তিনি সাধুবাদ পাওয়ার মতো কাজ করেছেন।—ইফতেখারুজ্জামান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক

আবদুস ছামাদ এখন গাজীপুরের শ্রীপুরের উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্প পরিদর্শন করার দায়িত্ব ছিল উপসহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের। এটা আমার দায়িত্ব ছিল না। আমি নোটিশের জবাব দেব।’

বর্তমানে ভোলার দৌলতখানে উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ডিও লেটারের ভিত্তিতে নেওয়া প্রকল্প। আমি যথাযথ নিয়ম মেনে প্রকল্পের সাইট পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছি। আমি জানি না, কেন তারা আমাকে নোটিশ দিয়েছে।’

প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনবনানীতে নসরুল হামিদের কার্যালয় ‘প্রিয়প্রাঙ্গণে’ অভিযান, এক কোটি টাকা জব্দ২১ আগস্ট ২০২৪

ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, কৈবর্তপাড়া স্কুল নির্মাণ প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদন, ই-টেন্ডারে ঠিকাদার নির্বাচন, কার্যাদেশ প্রদান ও সর্বশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অর্থছাড়ের সময় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তদন্তের জন্য বলি। জানতে পারি, কৈবর্তপাড়া নামে কোনো স্কুলের অস্তিত্ব নেই। এ ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা জেলা পরিষদের ষষ্ঠ সভার কার্যবিবরণীতে ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর সবই নেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সুপারিশ এবং অভিপ্রায়ে। ১৩টির মধ্যে ৯টি নেওয়া হয়েছিল সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অভিপ্রায়ে। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এমন প্রকল্পও আছে, যেমন ঢাকা-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামাল মজুমদারের সুপারিশে হাজী আলী হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণে নেওয়া প্রকল্পে ভবনটির নামকরণ হয়েছে তাঁর নিজের নামে।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনৈতিকতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে এটি একটি বহুমাত্রিক দুর্নীতির ঘটনা। যে কর্মকর্তা এ টাকা হস্তান্তর আটকে দিয়েছেন, তিনি সাধুবাদ পাওয়ার মতো কাজ করেছেন।’

কর্মকর্তা যে অর্থছাড় আটকে দিতে পেরেছেন, এটা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফল বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।

মন্ত্রীর ওই ধরনের সুপারিশ করার এখতিয়ার নেই বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, ‘মন্ত্রী বহুমাত্রিক দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট, সেটিকে সহায়তা করেছেন। মূল দায়টা মন্ত্রীর। ডিও লেটার ইস্যু করে এ ধরনের দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটাকে (এমন দুর্নীতিকে) মূলত স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তর করা হয়েছিল। তারই প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত এটি।’

যাঁরা ওই ঘটনায় জড়িত, তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করে যথাযথ উপায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

আরও পড়ুনসাবেক ৪১ মন্ত্রী–এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক১৯ আগস্ট ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত খ র জ জ ম ন নসর ল হ ম দ র প রকল প র স প রথম আল ক কর মকর ত র নসর ল হয় ছ ল ন ত কর র জন য বর দ দ এল ক র মন ত র এল ক য় সদস য আওয় ম সরক র উপজ ল তদন ত আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ