Prothomalo:
2025-04-30@20:20:22 GMT

যেভাবে এল ফ্যান

Published: 15th, March 2025 GMT

বৈদ্যুতিক পাখার আবির্ভাবের আগে, মানুষ নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করত। প্রাচীন মিসরে বড় বড় তালপাতা হাতে চালিত পাখা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। চীনে হান রাজবংশের (২০৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-২২০ খ্রিষ্টাব্দ) সময়ে মানুষের প্রচেষ্টায় যান্ত্রিক ঘূর্ণমান পাখার খোঁজ পাওয়া যায়। সতেরো ও আঠারো শতাব্দীতে উষ্ণ জলবায়ুর বিভিন্ন দেশে বাতাস সঞ্চালনের জন্য বিভিন্ন ভবনে হাতপাখা ও পানিচালিত বায়ু চলাচল ব্যবস্থার ব্যবহার দেখা যায়। ১৮৪৯ সালে উইলিয়াম ব্রানটন সাউথ ওয়েলসে বাষ্পচালিত ফ্যান তৈরি করেন। ১৮৫১ সালে তা প্রদর্শন করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বৈদ্যুতিক পাখার বিকাশ দেখা যায়।

আরও পড়ুনফ্যান ঠিকঠাক চার্জ করতে কী কী নিয়ম মানা জরুরি২২ মে ২০২৪বৈদ্যুতিক পাখার জন্ম

বৈদ্যুতিক পাখার আবিষ্কার ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। বৈদ্যুতিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের সঙ্গে ফ্যানের আবিষ্কার দেখা যায়। ১৮৮২ সালে ক্রোকার অ্যান্ড কার্টিস ইলেকট্রিক মোটর কোম্পানির একজন মার্কিন প্রকৌশলী শুইলার স্ক্যাটস হুইলার প্রথম বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি করেন। হুইলারের নকশায় দুটি ধাতব ব্লেড ছিল, যা একটি বৈদ্যুতিক মোটরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই ফ্যান ঘরের ভেতরে বায়ু সঞ্চালনে বিপ্লব এনেছিল। তাঁর আবিষ্কার ছিল যান্ত্রিকভাবে শীতল বাতাসের খোঁজে প্রথম পদক্ষেপ।

১৮৮৬ সালে জার্মান-মার্কিন প্রকৌশলী ফিলিপ ডাইহল একটি বৈদ্যুতিক পাখাকে একটি সিলিং কাঠামোতে যুক্ত করে সিলিং ফ্যান তৈরি করেন। ডাইহলের পাখায় স্বয়ংসম্পূর্ণ মোটর ছিল। ১৮৮০ দশকের শেষের দিকে ডাইহলের কোম্পানি সিলিং ফ্যান উৎপাদন শুরু করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। বেশ কয়েকটি কোম্পানি ব্যাপকভাবে ফ্যান উৎপাদন শুরু করে। জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি ও ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক করপোরেশন প্রথম বৃহৎ পরিসরে বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি শুরু করে। ওই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যান একটি সাধারণ গৃহস্থালি ও অফিসের যন্ত্র হয়ে ওঠে।

১৮৯০ সালে জন ওয়েসলি এমারসন এমারসন ইলেকট্রিক প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান ফ্যান প্রযুক্তির উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯০৯ সালে জাপানের কেডিকে গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে বৈদ্যুতিক ফ্যান উদ্ভাবন করে। ১৯২০ ও ১৯৩০ দশকে ফ্যানের বিভিন্ন নকশা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা যায়। ১৯৪০ দশকে ভারতের ক্রম্পটন গ্রিভস বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যান প্রস্তুতকারক হিসেবে আবির্ভূত হয়।

১৯৮০ দশকে প্যানাসনিক ও মিৎসুবিশির মতো জাপানি প্রতিষ্ঠান ফ্যানের বাজারে প্রবেশ করে কমপ্যাক্ট ও উন্নত মডেল প্রবর্তন করে। রিমোট–নিয়ন্ত্রিত ফ্যান ও আয়নাইজিং প্রযুক্তির মতো উদ্ভাবন দেখা যায় তখন। ১৯৯০ দশকে ডাইসন ও হানিওয়েলের মতো ব্র্যান্ড ফ্যান প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে। ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে ডাইসন ব্লেডলেস ফ্যান তৈরি করে চমক দেয়। এখন বাজারে ডাইসন, শাওমি ও ফিলিপসের মতো কোম্পানির ফ্যানে ওয়াই-ফাই ও ভয়েস-নিয়ন্ত্রিত দেখা যায়। এসব ফ্যান স্মার্টফোন ও স্মার্ট হোম অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

আরও পড়ুনএখনই কেন এসি সার্ভিসিং করাবেন১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ভারতীয় উপমহাদেশে ফ্যান

উনিশ শতকের শেষের দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যুৎ চালু হয়। ১৯০০ সালের দিকে ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক পাখা আসে। তখন ব্রিটিশরা সরকারি ভবন, রেলস্টেশনে তা ব্যবহার শুরু করে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্যান আমদানি করা হতো। জেনারেল ইলেকট্রিক ও ওয়েস্টিংহাউসের মতো কোম্পানি ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও ধনী ভারতীয় পরিবারে ফ্যান সরবরাহ করত। ১৯২০ ও ১৯৩০ দশকে ভারতীয় উপমহাদেশে রেলস্টেশন, হোটেল ও সরকারি অফিসে সিলিং ফ্যান দেখা যায়। কলকাতা, বোম্বে ও ঢাকার মতো প্রধান শহরের ব্রিটিশ অফিসে ফ্যান দেখা যায়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া ও ফ্যান মিউজিয়াম

আরও পড়ুনফ্যানের বাতাস কি স্বাস্থ্যকর১৩ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র শত ব দ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ

এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।

আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।

বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।

বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ