৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গত সাত মাসে বান্দরবানে বড় কোন অঘটন ঘটেনি, আইনশৃঙ্খলাও রয়েছে নিয়ন্ত্রেণ। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে বেশ কয়েকটি গায়েবি মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রায় ৬০০ নেতাকর্মী ঘরছাড়া।
৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় বান্দরবানেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল দাশের বাসভবন। তিনি সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বীর বাহাদুরের বাসভবনেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতা জানান, মন্ত্রীর বাসায় হামলার পেছনে শীর্ষস্থানীয় নেতারা জড়িত ছিলেন না। কয়েক ধাপ নিচের সারির নেতাদের ইন্ধনে পাশের সাতকানিয়া ও কেরানিহাট থেকে লোক এনে হামলা চালানো হয়েছে। কথিত আছে, দুই দফা মন্ত্রী থাকাকালীন বীর বাহাদুর স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। এ কারণে মন্ত্রীর বাসায় হামলায় তাদের কোন ইন্ধন ছিলগত সেপ্টেম্বরে পার্বত্য খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হলেও বান্দরবানে তেমনটি ঘটেনি। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরেও বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে দলটির বড় কোন সংঘর্ষ হয়নি। বলা যায় এক ধরনের সম্প্রীতির পরিবেশ ছিল জেলাজুড়ে।
জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, ‘বান্দরবানে সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। তবে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার কারণে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে ধরপাকড় করা হয়েছে। নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেকে রাত ঘরে ঘুমাতে পারেননি। বিভিন্ন গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।’
৬০০ জনের নামে করা মামলায় আসামি করা হয়েছে জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদ সদস্য লক্ষিপদ দাশ, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদ সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর অজিত দাশ, প্রচার সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রীর পিএস সাদেক হোসেনকে। এই মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাশ আদালতে আত্বসমর্পণ করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। তবে তারা ১০-১৫ দিন পর জামিন পান। তবে আত্মসমর্পণ করা জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক সাদেক হোসেন এখনো কারাগারে রযেছেন।
জেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী মো.
জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চলে, কারো ইশারায় নয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, সেটা যে দলেরই লোক হোক না কেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন ব ন দরব ন মন ত র আওয় ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।