আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে হওয়া দরকার বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে জনগণের অভিপ্রায় হিসেবে সংস্কারকৃত সংবিধান দেশে টেকসই হয়। আদালত সেটিকে যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারে। সেটি কত দিনে বাস্তবায়িত হবে, সে জন্য জাতীয় ঐকমত্য হওয়া দরকার।

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে গণমাধ্যমের কাছে এ মন্তব্য করেন জোনায়েদ সাকি। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বৈঠক হয়।

বাংলাদেশের সংস্কার সবার দাবি উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশকে নতুন বন্দোবস্তের দিকে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংবিধানসহ যে সংস্কারের প্রশ্ন আছে, আমরা বলেছি এ পদ্ধতি হওয়া উচিত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ঐকমত্য ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে সবাই যেটাতে ঐকমত্যে পৌঁছাব, সেগুলো জাতীয় চার্টার (সনদ) আকারে সামনে আসবে। তা বাস্তবায়নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।’ জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে জাতিসংঘ পাশে আছে বলে বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন। গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘জাতিসংঘ মনে করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যথাসম্ভব ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে আমাদের নিজেদের একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে, যাতে করে কী পদ্ধতিতে উত্তরণ পর্বটি পাড়ি দেব, তাতে একমত হতে পারি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে এটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এই ঘোষণাপত্রকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি। সেটা আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এর চেয়ে বড় জাতীয় সম্মতি আর নেই। এটা আইনের ঊর্ধ্বে। এটা জনগণের অভিপ্রায়। এটা সার্বভৌম ব্যাপারের কাছাকাছি হয়ে গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো জানান সালাহউদ্দিন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ নামে যে খসড়া বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বাক্যগত কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। সনদে প্রস্তাব আছে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারা বলেছিল এই প্রতিশ্রুতিগুলো পালনের জন্য, সংবিধানে এবং বিভিন্ন আইনে, বিধিবিধানে। সেখানে যা পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়, এটি একধরনের “লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন অব দ্য পিপল”। জনগণের এই প্রত্যাশা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার জন্য আমরা অঙ্গীকার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে এই ঘোষণাপত্র এসেছে। সেটার বৈধতা আমরা সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেব। এটাকে যদি আমরা আইনে ভিত্তি না বলি তাহলে কোনটাকে বলব?’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করেছি উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাঁদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।’

উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের যৌথভাবে পাস হওয়া আইনের মধ্য দিয়ে একটি শেয়ারড লেজিসলেটিভ প্রসেস গড়ে ওঠার প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির এই নেতা জানান। তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা করবে, সুপারিশ করতে পারবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। তবে আমরা উচ্চকক্ষের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখছি কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিনতর করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।’

সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।

এ ছাড়া মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত আলোচনাও এখনো চলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আধুনিক সময়ের আলোকে কিছু অধিকার যেমন ইন্টারনেটের অধিকার যুক্ত করা যায় কি না। তবে মৌলিক অধিকার একবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ, সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে থাকা অধিকারগুলো সেলফ এনফোর্সেবল এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকেরা তা প্রয়োগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে নতুন কোনো অধিকার সংযোজন করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসির প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকতে হবে
  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • জুলাই আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়াবেন না: টুকু
  • সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
  • সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের দাবি মহিলা পরিষদের
  • সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
  • সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
  • ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের সমর্থন ৪০ শতাংশে ঠেকেছে
  • জাতিসংঘে সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ফিলিস্তিন ইস্যুতে উদ্বেগ
  • কিছু দল পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে শপথ করেছে: ফখরুল