নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নীলাচল নামে একটি পরিবহনের বাস ডিপোকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ৮জন আহত হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলো, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব রেদোয়ান হোসেন পাপ্পু, নাসিক ২নং ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য প্রার্থী ফিরোজ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সজীব, ইসমাইল ও নীলাচল পরিবহনের কর্মকর্তা আবুল হাশেম, হাসান মাহমুদ, আবু সিদ্দিক, বিল্লাল হোসেন। সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতলে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একটি পক্ষ দাবি করছে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা, নাসিক ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এই পরিবহনের ডিপো থেকে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। ইকবালের এই চাঁদাবাজির ক্ষেত্র বহাল রাখতে ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অতর্কিতভাবে এ হামলা চালায়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়ার শেল্টারে গত কয়েক বছর ধরে নীলাচল পরিবহনের প্রায় ৩৫টি বাস মৌচাকের চিশতিয়া বেকারি সংলগ্ন একটি খালি মাঠে ভাড়ায় রাখা হয়। 

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে ওই পরিবহনের একটি বাস রাখার সময় মাঠের পাশের একটি মসজিদের কার্নিশের দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ওই এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবু ও এলাকাবাসী নীলাচল বাসের কর্তৃপক্ষকে ওই স্থান হতে বাস সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, এসব ঘটনার একপর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বাস কর্তৃপক্ষ ও সেচ্ছাসেবক দল নেতাদের মধ্যে এক মাসের ভেতর বাস গুলো সরিয়ে নেওয়া হবে মর্মে সমঝোতা হয়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মাধ্যমে নীলাচল পরিবহন বাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বসে সমাধানের আশ্বাস দেন। শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে উভয় পক্ষ আবারও বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। 

সেখানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর অনুসারীদের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব পাপ্পু ও তার লোকজনের) সাথে ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবালের অনুসারীদের সঙ্গে) বাকবিতণ্ডা হয়।

পরে রাত সাড়ে সাতটা থেকে এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা ও ইট পাটকেল ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব রেদোয়ান হোসেন পাপ্পু বলেন, সম্প্রতি নীলাচল পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় মুক্তাঝিল আবাসিক এলাকার একটি মসজিদের কার্নিশের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এনিয়ে এলাকাবাসী ও আমরা প্রতিবাদ জানাই এবং তাদেরকে বাস সরিয়ে নিতে বলি। বাস কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে সমঝোতা করে দুই মাসের সময় নেয়। 

এরপর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ইকবাল হোসেনের (সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক) অনুসারী ও ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। 
এ সময় ফিরোজ নামে যুবদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে এবং ইসমাইল নামে আরেক জন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে মারধর করে। তারা দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া আরো ৩-৪ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়াও পাপ্পু বলেন, বহিষ্কৃত নেতা ইকবাল এই পরিবহনের ডিপো থেকে প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন। আমরা এই পরিবহনের বাস সরাতে বলায় তার বাহিনীর লোকজন ও অনুসারী দিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে মন্তব্যর জন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মমিনুর রহমান বাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সিদ্ধিগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.

ইকবাল হোসেন বলেন, আমি গতকাল থেকে অসুস্থ। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। তবে আমার লোকজন কাউকে হামলা করেনি। শুনেছি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা নীলাচল বাসের কর্তৃপক্ষের কাছে মসজিদের ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা চেয়েছে।

নীলাচল পরিবহনের কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, আমাদের একটি বাস আসার সময় পাশের মসজিদের লাইট ও কার্নিশ ভেঙে যায়। আমরা মিস্ত্রি নিয়ে সেসব মেরামত করতে গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান পাটোয়ারীর সাথে বাক বিতন্ডা হয়। 

একপর্যায়ে তার পক্ষ হয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বাবুর লোকজন আমাদের উপর অতির্কত হামলা করে। এসময় আমি সহ হাসান মাহমুদ, আবু সিদ্দিক, বিল্লাল হোসেন নামে চার জন আহত হই। তবে আমরা কাউকে মারধর করিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, নীলাচল পরিবহনের বাস রাখাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে বিএনপির উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন আহত হয়েছে। এলাকাবাসী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ স ঘর ষ ব এনপ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন স ঘর ষ র ঘটন ব এনপ র স মসজ দ র র ল কজন অন স র আম দ র ইকব ল র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ খাতে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি হয়েছে: পর্যালোচনা কমিটি

বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির নামে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ অর্থ নিয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেয়ে দুর্নীতিই মুখ্য ছিল বলে অভিমত দিয়েছে সরকার গঠিত চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। তারা বলেছে, চুক্তিতে ব‍্যবসায়ীদের কোনো ঝুঁকি নেই, সব ঝুঁকি সরকারের। এটি সরকারের অদক্ষতাজনিত ব‍্যর্থতা নয়, দুর্নীতি জড়িত। তাই চুক্তি বাতিল করা সম্ভব।

বিদ্যুৎ খাতের চুক্তি পর্যালোচনা কমিটির তিন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, গত সরকারের দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, খরচ বেড়েছে ১১ গুণ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনটি করাই হয়েছে দুর্নীতির জন্য। এখানে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলো ভাড়া আদায়ের নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি আমদানি করেছে নিজেরা। এতেও দুর্নীতি হয়েছে।

তবে এখন এসব চুক্তি বাতিল করতে হলে অনুসন্ধান করে দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে বের করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করতে পারে। গত সরকারের সময় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একের পর এক একতরফা চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তিতে সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে, রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করা হয়নি। একটি চুক্তি যেন আরেকটির প্রতিলিপি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো এতে জড়িত ছিল। গ্যাস পাওয়া যাবে না, চুক্তি করা হোক—এমন সুপারিশও দেখা গেছে মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে।

পর্যালোচনা কমিটির তিনজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, শুধু চুক্তি নয়, চুক্তির আগের পুরো প্রক্রিয়া যাচাই করে দেখা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপের নমুনা পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সাবেক দুই বিদ্যুৎসচিব, যাঁরা পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হয়েছিলেন; তাঁদের সংশ্লিষ্টতা আছে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিতে। এই দুজন হলেন আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউস।

# চুক্তি পর্যালোচনা কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন
# দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, খরচ বেড়েছে ১১ গুণ
# ব্যবসায়ী, আমলা, সরকারের শীর্ষ পর্যায় মিলে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি
# চুক্তি বাতিল সম্ভব, দুদকের তদন্ত করতে হবে
# আদানির চুক্তিতে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে

দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনটি বাতিল করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। এর আগেই এ আইনের অধীনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গত সরকারের করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সহ-উপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আলী আশফাক, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক।

জানুয়ারিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন

আজ রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে চুক্তি পর্যালোচনা কমিটি। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তারা। এ ছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে করা চুক্তির অনিয়ম নিয়েও একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তারা। প্রতিবেদন জমার পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কমিটির সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, কারণ ছাড়া চুক্তি বাতিল করলে তার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চুক্তিতেই বলা আছে। তবে প্রতিটি চুক্তিতেই স্বীকারোক্তি থাকে যে এই চুক্তিতে কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। এটা যদি লঙ্ঘিত হয়, তাহলে চুক্তি বাতিল করা যায়। কিন্তু মুখের কথা তো আদালত মানতে চাইবেন না, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে হবে আদালতে। কমিটির সহায়তায় চুক্তির অনিয়ম খুঁজে দেখা হচ্ছে। কারণ, খুঁজে পাওয়া গেলে চুক্তি বাতিলে দ্বিধা করা হবে না।

কমিটির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চুক্তি কতটা বাতিল করা যাবে, তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো পুরোপুরি কারিগরি, তাই সময় লেগেছে পর্যালোচনায়। এতে ব্যাপক দুর্নীতি পাওয়া গেছে। আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, চুক্তি–সম্পর্কিত নথি দেখা হয়েছে। পিডিবি থেকে পরিশোধ করা বিলের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে, কী কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ ছিল, মন্ত্রণালয় সব সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছিল। বিদ্যুৎ খাতে যে পরিমাণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে এবং এর বিপরীতে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে, এর হিসাব আইনস্টাইনও মেলাতে পারবেন না।

চুক্তি বাতিল করলে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, যাঁরা ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন, তাঁরা তাঁদের ক্ষতির হিসাব দেবেন। তাই ক্ষতিপূরণের বিষয়টা তো এ কমিটি বলতে পারবে না।

দুর্নীতির কারণে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য মোশতাক হোসেন খান বলেন, ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। ভর্তুকি না থাকলে ৪০ শতাংশ বেড়ে যেত। এ দামে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকতে পারবে না। এটা কমাতে হবে। যারা টাকা নিয়ে চলে গেছে, তাদের বোঝাতে হবে, তারা পার পাবে না। তাড়াতাড়ি করলে ভুল হতে পারে, তাই সময় লেগেছে। তবে রাষ্ট্রের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তিগুলো সার্বভৌম চুক্তি। চাইলেই এটা বাতিল করা যায় না। বড় জরিমানা দিতে হতে পারে।

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে মোশতাক হোসেন বলেন, আদানির চুক্তির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আদালতে রিট হয়েছে। আদালত প্রতিবেদন চেয়েছেন। মাসখানেকের মধ্যে শক্ত প্রমাণ সামনে আসবে। এসব প্রমাণ নিয়ে দেশে-বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া যাবে।

পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশে মূলত ভবিষ্যতে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যাতে এ ধরনের চুক্তি না করা হয়। চুক্তির আগে স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে যাচাই করে দেখার কথা বলা হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির পরামর্শে গত ২১ জানুয়ারি করা হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) পর্যালোচনা কমিটি। এ কমিটির কাজ চলমান।

চুক্তি অনুসারে প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে একটি সূত্র দেওয়া আছে চুক্তিতে। এ সূত্র অনুসারে দাম নির্ধারিত হয়। একেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে একেক দাম। সমঝোতার মাধ্যমে কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। দরপত্র ছাড়া বিশেষ বিধান আইনে এভাবে চুক্তি করার সুযোগ নিয়েছে গত আওয়ামী লীগ সরকার।

বিশেষ বিধান আইনটি করা হয় ২০১০ সালে। এরপর দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই আইনের অধীনে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এর কারণে এটি দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত। এ আইনের অধীনে দরপত্র ছাড়া একটার পর একটা চুক্তি করেছিল গত সরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ