রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর খাবার গ্রহণে সতর্কতা
Published: 17th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাসে খাদ্যসংস্কৃতি অনেকটাই বদলে যায়। প্লেটে উঠে আসে রকমারি মজাদার খাবার। ভাজাপোড়া, তেল জবজবে খাবার থেকে শুরু করে ফিরনি, পায়েস, শাহি জিলাপি, পুডিং আরও কত কী! খাদ্যের ধরন ও খাদ্যগ্রহণ সময়সূচি বদলে যাওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীর বিপাক প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিপত্তি ঘটে।
দীর্ঘ সময় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকায় যেমন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক নিচে নামে, তেমন ইফতার ও সাহ্রির পর গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক বাড়তে পারে। এ জন্য সতর্ক থাকা দরকার।
রোজায় প্রায়ই যা ঘটে
ইফতারে বেশি খাবার গ্রহণ। কখনো এক বৈঠকে ১৫০০ কিলোক্যালরির ওপরে খাদ্য গ্রহণ।
অঢেল শর্করাজাতীয় খাদ্য ইফতার ও এর পরবর্তী সময়ে গ্রহণ।
হালুয়া, জিলাপি, পুডিংসহ হরেক মিষ্টান্নের সমাহার।
বিরিয়ানি, হালিমসহ বিভিন্ন স্ন্যাকস খাদ্য টেবিলে চলে আসা।
ইফতারে প্রায়ই দ্রুত খাদ্য গ্রহণের ফলে বেশি খাওয়া।
সাহ্রি না খাওয়া অথবা অনেক আগে সাহ্রি গ্রহণ করার প্রবণতা থাকে কারও মাঝে।
ভাজাপোড়া খাওয়ার আধিক্য।
কাজকর্ম কমিয়ে দেওয়া ও ঘুমের রুটিন বদলে যাওয়ায় ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা।
যেসব বিষয়ে গুরুত্ব
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্যতালিকায় নজর দিতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিচের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে:
ইফতারে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ; যাতে পানিশূন্যতা দূর হয়।
মিষ্টিজাতীয় খাবার, যেমন জিলাপি, চিনির শরবত, মিষ্টান্ন এবং ভাজাপোড়া খাবার, কাবাব, পাকোড়া, পরোটা; এগুলো ইফতারে পরিহার করা।
অতিরিক্ত মিষ্টি ফল গ্রহণ না করা।
শসা, খিরা, পেয়ারা, নাশপাতি, বরই, আমড়া, ডাবের পানি, লেবুর পানি অন্যান্য টকজাতীয় ফল ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে।
সাহ্রি অবশ্যই বাদ দেওয়া যাবে না। সাহ্রিতে দুপুরের আহারের সমান খাবার খাওয়া।
সাহ্রি যতটা দেরিতে সম্ভব গ্রহণ করা।
সাহ্রিতে শর্করার পাশাপাশি আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাদ্য গ্রহণ।
পর্যাপ্ত ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ; যাতে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়।
চা-কফি-কোলা পান করলে পানিশূন্যতা বাড়তে পারে। এগুলো কমানো।
রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্যতালিকায় শতকরা ৪০-৫০ ভাগ শর্করা, ২০-৩০ ভাগ আমিষ, ৩০-৩৫ ভাগ চর্বি যাতে স্থান পায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। তবে সম্পৃক্ত চর্বি থাকবে শতকরা ১০–এর নিচে।
কর্নেল ডা.
নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, বরিশাল
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ দ য গ রহণ খ ব র গ রহণ ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’
যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ
তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।
এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”
ঢাকা/এনটি/এসবি