ভারত-শাসিত কাশ্মীরের গুলমার্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি ফ্যাশন শো ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত শুক্রবার বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড শিভান এবং নরেশ তাদের স্কিওয়্যার প্রদর্শনের জন্য এই শো আয়োজন করে। এটি ছিল কাশ্মীরে আয়োজিত প্রথম বড় ফ্যাশন শো যেখানে কোনো অ-স্থানীয় বিখ্যাত ব্র্যান্ড অংশ নেয়।

তবে, ফ্যাশন প্রকাশক এল ইন্ডিয়া যখন শো-এর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে, তখনই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মডেল অন্তর্বাস বা বিকিনি পরে রয়েছেন। এছাড়া লাইফস্টাইল এশিয়া ম্যাগাজিনের আরেকটি ভিডিওতে শো-এর পর একটি পার্টির দৃশ্য দেখানো হয়, যেখানে প্রকাশ্যে মদ্যপানের চিত্র ধরা পড়ে।

কাশ্মীরের মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার অনেকে রমজান মাসে এমন আয়োজনকে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে করছেন। অনেক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাও এই আয়োজনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিছু ধর্মীয় নেতা এটিকে “অশ্লীল” এবং “সফট পর্ন” বলে অভিহিত করেছেন।

তবে শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, অনেক স্থানীয় মানুষ মনে করছেন এটি কাশ্মীরের সংস্কৃতি ধ্বংস করার একটি বহিরাগত প্রয়াস। কাশ্মীর ১৯৮০-এর দশক থেকে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন এবং সহিংসতার সাক্ষী হয়ে আসছে, ফলে অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, বাইরের প্রভাব তাদের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করছে।

বিতর্ক বাড়তে থাকায় এল ইন্ডিয়া এবং লাইফস্টাইল এশিয়া তাদের ভিডিও মুছে ফেলেছে। এছাড়া, শো-এর ডিজাইনার শিভান ভাটিয়া ও নরেশ কুকরেজা এক যৌথ বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সৃজনশীলতাকে উদযাপন করা, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া নয়।”

বিতর্ক কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভাতেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিরোধী দল সরকারকে দায়ী করে বলে, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতির কথা জেনেও কেন এই শো-এর অনুমতি দেওয়া হলো?

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ অবশ্য সরকারকে এর দায় থেকে মুক্ত করেছেন। তিনি জানান, শো-এর আয়োজন সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে করা হয়েছে, সরকার এতে জড়িত নয়। তবে, স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আইন লঙ্ঘন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ শেফালি বসুদেব বলেন, দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক স্থানে ফ্যাশন শো আয়োজন নতুন কিছু নয়। বিশ্ববিখ্যাত ডিজাইনার আলেকজান্ডার ম্যাককুইন এবং কার্ল ল্যাগারফেল্ডও তাদের নাটকীয় ও ব্যতিক্রমী ফ্যাশন শো-এর জন্য পরিচিত। তবে, তিনি উল্লেখ করেন, যে কোনো স্থানে এমন আয়োজনের আগে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাধারণত রক্ষণশীল। স্থানীয় পুরুষ ও নারীরা প্রায়ই ফেরান নামে পরিচিত ঢিলেঢালা পোশাক পরেন। তাই এই ফ্যাশন শো-তে বিকিনি ও অন্তর্বাস প্রদর্শন কাশ্মীরি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান বলে মনে করছেন অনেকে। 

সরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটায় কাশ্মীরে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। তবে, অনেক কাশ্মীরি মনে করেন, বহিরাগতরা তাদের সংস্কৃতিকে যথাযথ সম্মান দেখাচ্ছে না। এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো যে, কাশ্মীরে যেকোনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৭ থেকে ৩১ জুলাই) পর্যন্ত সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। আলোচ্য এ সময়ে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ।

শনিবার (২ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১০.৩১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৫১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.২০ পয়েন্ট বা ১.৯৪ শতাংশ।

এর আগের সপ্তাহের (২৪ থেকে ২৮ জুলাই) শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৭১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা অবস্থান করছে ১০.৩১ পয়েন্টে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর পিই রেশিও বেড়েছে ০.৬০ পয়েন্ট বা ৬.১৮ শতাংশ।

খাতভিত্তিক পিই রেশিওগুলোর মধ্যে- জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৬.১০ পয়েন্টে, ব্যাংক খাতে ৭.১৯ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতে ৯.৮৯ পয়েন্ট, টেক্সটাইল খাতে ১০.৭০ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ১১.০৮ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতে ১১.৩৫ পয়েন্টে, আর্থিক খাতে ১২.৬০ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১২.৭৭ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতে ১৪.১০ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৪.৯৪ পয়েন্টে, আইটি খাতে ১৬.৩১ পয়েন্টে, বিবিধ খাতে ১৬.৬৫ পয়েন্টে, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ১৭.৯৬ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১৮.৪৩ পয়েন্টে, পেপার ও প্রিন্টিং খাতে ২১.৮১ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে ২১.৯৩ পয়েন্টে, পাট খাতে ২৬.১৯ পয়েন্টে, ট্যানারি খাতে ২৬.৭৭ পয়েন্টে,   এবং সিরামিক খাতে ৫৭.৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ