ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। কলেজটিরই দীর্ঘদিনের পুরোনো হল কবি নজরুল ইসলাম হল। হলে সিট সংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। বর্তমানে ছাত্র আছে ৪৩ জন। জীর্ণ-শীর্ণ এই হলটির জানালাগুলোতে নেই গ্লাস। গেল কনকনে শীতে ছাত্রাবাসে নাজুক পরিস্থিতিতে রাত পার করলেও আসছে গ্রীষ্ম ও বর্ষায় এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের জন্য। বর্ষাকালে বৃষ্টি নামলে ছাদ চুইয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে পানি। মেঝেতে পানি জমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে হলটি।

হলের ছাত্রদের অভিযোগ, হলটি আর বসবাসের উপযোগী নয়। দৈনন্দিন জীবনযাপনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এখানে।  ছাদ থেকে পলেস্তা‌রা খসে পড়ে গায়ের ওপর। ছাদ ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে হলটি। এ অবস্থায় এখানে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র এ বি এম সাদ রাজ সিদ্দিকী বলেন, এখানে থাকতে গিয়ে কষ্টের সীমা নেই। 

গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২য় তলার যে হলরুমটি আছে, সেখানে গত বছর ছাদের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে ছাদ ফুটো হয়ে আছে। হলরুম হওয়ায় সেখানে কেউ থাকে না। রুমটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

সমাজকল্যাণ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মো.

শাকিল শেখ বলেন, কখন জানি জীবনটাই চলে যায় আমাদের। এখানে আমরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দিনাতিপাত করছি।

সরেজমিনে হলটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, হলের অবস্থা জীর্ণ-শীর্ণ। বেশিরভাগ জানালার গ্লাস নেই, বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা রয়েছে, পানির সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া ছাদ চুইয়ে পানি ঝরে, বৈদ্যুতিক বাল্ব নষ্ট, বাথরুমের অবস্থা নাজুক, হলের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, হলের একমাত্র টেলিভিশন নষ্ট এবং হল সুপারের বাসভবনটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, হলটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে এখানে থাকা সম্ভব হবে না। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে আছে হল সুপারের বাসভবনটি।

হল সুপার মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, নজরুল হলের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টির দিনে তিনতলায় ছাত্ররা থাকতে পারে না। শীতের সময় বেশিরভাগ জানালার গ্লাস ভাঙা থাকায় শীতে তাদের থাকতে কষ্ট হয়। ভবনটির ছাদের অবস্থাও নাজুক। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ভবনটির মেরামত জরুরি। 

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ছাত্র দরিদ্র পরিবারের। হলটি ছাড়া তাদের পক্ষে মেস ভাড়া করে থাকাও সম্ভব নয়। যদি দ্রুত সংস্কার না করা হয়, তাহলে ছাত্ররা বিপদে পড়বে। হল সুপারের বাসভবনটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।

তিনি বলেন, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনটি মেরামতের জন্য আবেদনও করেছে। ছাত্রদের জীবনের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির বিবেচনায় দ্রুত মেরামত করা জরুরি।

কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক এস. এম. আব্দুল হালিম বলেন, ২০২৩ সালে এ হলটির একবার সংস্কার করা হয়েছিলে। আবারও সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশলে আবেদন করা হয়েছে। এ হলটির দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমি চেষ্টা করছি। শিক্ষা প্রকৌশলকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে যাতে তারা দ্রুত এ হলের সংস্কার কাজটির অনুমোদন দেয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হল স প র র অবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।

আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগে

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
  • তিন ভবনেই ১৫টি, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় কেন পল্টনকেন্দ্রিক