রাজেন্দ্র কলেজের নজরুল হল: ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি, খসে পড়ে পলেস্তারা
Published: 17th, March 2025 GMT
ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। কলেজটিরই দীর্ঘদিনের পুরোনো হল কবি নজরুল ইসলাম হল। হলে সিট সংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। বর্তমানে ছাত্র আছে ৪৩ জন। জীর্ণ-শীর্ণ এই হলটির জানালাগুলোতে নেই গ্লাস। গেল কনকনে শীতে ছাত্রাবাসে নাজুক পরিস্থিতিতে রাত পার করলেও আসছে গ্রীষ্ম ও বর্ষায় এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের জন্য। বর্ষাকালে বৃষ্টি নামলে ছাদ চুইয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে পানি। মেঝেতে পানি জমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে হলটি।
হলের ছাত্রদের অভিযোগ, হলটি আর বসবাসের উপযোগী নয়। দৈনন্দিন জীবনযাপনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এখানে। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে গায়ের ওপর। ছাদ ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে হলটি। এ অবস্থায় এখানে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র এ বি এম সাদ রাজ সিদ্দিকী বলেন, এখানে থাকতে গিয়ে কষ্টের সীমা নেই।
গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২য় তলার যে হলরুমটি আছে, সেখানে গত বছর ছাদের একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে ছাদ ফুটো হয়ে আছে। হলরুম হওয়ায় সেখানে কেউ থাকে না। রুমটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মো.
সরেজমিনে হলটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, হলের অবস্থা জীর্ণ-শীর্ণ। বেশিরভাগ জানালার গ্লাস নেই, বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা রয়েছে, পানির সরবরাহও পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া ছাদ চুইয়ে পানি ঝরে, বৈদ্যুতিক বাল্ব নষ্ট, বাথরুমের অবস্থা নাজুক, হলের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, হলের একমাত্র টেলিভিশন নষ্ট এবং হল সুপারের বাসভবনটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে এখানে থাকা সম্ভব হবে না। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে আছে হল সুপারের বাসভবনটি।
হল সুপার মো. ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, নজরুল হলের অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টির দিনে তিনতলায় ছাত্ররা থাকতে পারে না। শীতের সময় বেশিরভাগ জানালার গ্লাস ভাঙা থাকায় শীতে তাদের থাকতে কষ্ট হয়। ভবনটির ছাদের অবস্থাও নাজুক। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ভবনটির মেরামত জরুরি।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ ছাত্র দরিদ্র পরিবারের। হলটি ছাড়া তাদের পক্ষে মেস ভাড়া করে থাকাও সম্ভব নয়। যদি দ্রুত সংস্কার না করা হয়, তাহলে ছাত্ররা বিপদে পড়বে। হল সুপারের বাসভবনটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে।
তিনি বলেন, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনটি মেরামতের জন্য আবেদনও করেছে। ছাত্রদের জীবনের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির বিবেচনায় দ্রুত মেরামত করা জরুরি।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক এস. এম. আব্দুল হালিম বলেন, ২০২৩ সালে এ হলটির একবার সংস্কার করা হয়েছিলে। আবারও সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশলে আবেদন করা হয়েছে। এ হলটির দ্রুত সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমি চেষ্টা করছি। শিক্ষা প্রকৌশলকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে যাতে তারা দ্রুত এ হলের সংস্কার কাজটির অনুমোদন দেয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হল স প র র অবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে চট্টগ্রামের ‘হাতির বাংলো’–এর কথা এখন সারা দেশের মানুষ কমবেশি জানেন। ইউটিউবে ‘হাতির বাংলো’ লিখে সার্চ দিলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। ভ্রমণবিষয়ক ভ্লগার আর কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছে এটি এখন রীতিমতো ট্রেন্ড। এর মধ্যেই ভবনটি যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থানের তালিকায়। কিন্তু শতবর্ষী এই স্থাপনা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কী? এর উত্তর পাওয়া গেল হাতির বাংলোর সম্মুখ দর্শনের পর।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির বিপরীতে রেলওয়ের ছোট টিলা ধরে উঠতেই চোখে পড়ল ভবনটি। কাউকে চিনিয়ে দিতে হলো না। একটা আস্ত হাতির মাথা যেন কেউ বসিয়ে দিয়েছেন। বোঝা গেল লোকমুখে এমন নামকরণের কারণও। এমন একটি ভবন নিয়ে মাতামাতি না হওয়াটাই তো অস্বাভাবিক।
যাঁরা জে আর আর টলকিয়েনের ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই হবিটদের কথা মনে আছে। খর্বকায় হবিটদের বাড়ির মতোই অনেকটা রূপকথার আদল আছে এতে। আর পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে এশিয়ান হাতির আকৃতি। রূপকথার আবেশে মিশেছে প্রকৃতির মূর্ত প্রতিকৃতি। সব মিলিয়ে ভবনটি অনন্য। ডুপ্লেক্স এই বাড়ি নিয়ে মানুষের কৌতূহল দীর্ঘদিনের। প্রতিদিনই বাংলোটি দেখতে আসেন অনেকেই। ছবি ও ভিডিও তুলে রাখেন। আবার কেউ কেউ ফেসবুক, ইউটিউবে তা ছড়িয়েও দেন। এভাবে হাতির বাংলো নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল বেড়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার আর সিআরবির মাঝের পাহাড়ে অবস্থিত রেলওয়ের হাতির বাংলো। যেতে হয় নগরের শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়কের পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও লেডিস ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে।
এই বাংলো ঠিক কবে নির্মিত হয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই রেলওয়ের কাছে। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৮৯৮ সালের দিকে এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে। ওই সময় চট্টগ্রামে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। তখন নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের থাকার জন্য এই বাংলো নির্মাণ করা হতে পারে।
ব্যতিক্রমী স্থাপত্য
এখন যেমন পাহাড় কেটে, গাছপাল কেটে ভবন নির্মাণ করা হয়, হাতির বাংলো নির্মাণে তার কিছুই হয়নি। চারপাশের সৌন্দর্যকে এতটুকুও ব্যাহত করা হয়নি, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেছে এই স্থাপনা।
পাহাড়ি এলাকায় পিচঢালা সড়কের পাশে খোলা প্রাঙ্গণ। তা পেরিয়ে হাতির বাংলো। হাতির বাংলোর প্রবেশফটকে রয়েছে হাতির মুখ, শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে। শুঁড় যেমন ঢেউয়ের মতো, ঠিক তেমনই ডুপ্লেক্স বাড়ির ওপরের অংশটিও। এর খোলা অংশটি দোতলার ব্যালকনি। এরপর রয়েছে বড় একটি কক্ষ, যা প্রায় হলরুমের সমান। কেউ থাকেন না এই কক্ষে। সামনে, পেছনে ও পাশে ছোট-বড় আটটি জানালা রয়েছে। বাংলোর নিচতলায় দুটি আলাদা বড় কক্ষ।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ডেপুটি চেয়ারম্যান আদর ইউসুফ জানান, বাংলোটি নির্মিত হয়েছে হাতির আদলে, যা দেশের স্থাপত্য ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। বাহ্যিক কাঠামোটি ত্রিমাত্রিকভাবে হাতির মতোই—মাথা, শুঁড়, কানের পরিণত অংশ, শরীরের বর্ধিত কায়া ইত্যাদি রূপে গঠিত। ভবনটির মূল কাঠামো নির্মিত হয়েছে ইট ও পাথরের গাঁথুনির ওপর। তবে এর হাতির রূপ ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহৃত হয়েছে ফেরো সিমেন্ট, যা উনিশ শতকে উন্নত নির্মাণপ্রযুক্তির নির্দেশক। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কাঠ ব্যবহার করে নির্মিত দরজা ও জানালাগুলোতে কারিগরি দক্ষতার পরিচয় রয়েছে। প্রচলিত ঔপনিবেশিক বাংলোর গঠন থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। স্থাপত্যশৈলীতে কোনো সুপরিকল্পিত আদর্শ অনুসরণ না করলেও একে ঘিরে আছে একধরনের আভিজাত্য ও প্রকৌশলগত সৃজনশীলতা।
এক সময় ডুপ্লেক্স এই ভবনটিতে থাকতেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। সস্প্রতি তোলা