দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, সাইবার সহিংসতার পাশাপাশি বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়
সমকাল সুহৃদ সমাবেশ। এর ধারাবাহিকতায় বগুড়া, পাবনার ঈশ্বরদীসহ কয়েকটি ইউনিটের সুহৃদরা কর্মসূচি পালন করেন
বগুড়ায় মানববন্ধন
আসলাম হোসাইন
দেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন নতুন নির্যাতনের খবর উঠে আসছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, যা সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বগুড়ায় ১৭ মার্চ সমকাল সুহৃদ সমাবেশের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেসায় এই মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী ও সচেতন মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের মতো অপরাধ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব অপরাধের যথাযথ বিচার না হলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
বগুড়া সুহৃদ সহসভাপতি সাজিয়া আফরিন সোমা বলেন, ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা শুধু একজন ভুক্তভোগীর জীবনে নয়, বরং পুরো পরিবার ও সমাজে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। একজন নারী বা শিশু যখন ধর্ষণের শিকার হয়, তখন সে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরিবার সামাজিক অসম্মানের ভয়ে অনেক সময় আইনি ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়। ফলে অপরাধীরা আরও বেশি সাহসী হয়ে ওঠে। মানববন্ধনে বক্তারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, আইনের দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ।
উপস্থিত বক্তারা আরও বলেন, শুধু শাস্তি নিশ্চিত করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও গণমাধ্যমকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীদের যথাযথ সম্মান ও সুরক্ষা দিতে হলে পরিবার থেকেই শিশুদের সঠিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শেখাতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ব্যানার হাতে নিয়ে ‘ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই’, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করো’, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। তারা বলেন, এ ধরনের মানববন্ধন শুধু একটি প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার একটি মাধ্যম।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে এবং ন্যায়বিচারের পথ সুগম করতে হবে। সবাইকে নারী ও শিশুর নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এমন প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে শেষ হয় কর্মসূচি।
সাধারণ সম্পাদক সুহৃদ সমাবেশ, বগুড়া
ঈশ্বরদীতে প্রতিবাদ সভা
সেলিম সরদার
বড় বোন হামিদা আক্তারের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল শিশু আছিয়ার। মায়ের মতো আছিয়াকে খাবার মুখে তুলে দিতেন। বিয়ের পর সেই আদরের বোনটির ওপর নির্মম ও পাষণ্ড আচরণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না হামিদা। স্বামী, শ্বশুরসহ অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন তিনি। হামিদার মতো ঈশ্বরদীর সুহৃদরাও সমভাবে ব্যথিত। মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ধিক্কার ও প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান সুহৃদরা।
নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়ে সুহৃদরা প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল শহরের রেলগেট জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে পথসভায় সভাপতিত্ব করেন ঈশ্বরদীর সুহৃদ সভাপতি আর.
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র স হ দর ইসল ম অপর ধ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫