ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
Published: 18th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ফক্স নিউজের হ্যানিটি’ শোতে এ কথা জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র। খবর রয়টার্সের।
খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, হামলার আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে ইসরায়েল।
এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর করার জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই এমন ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যা সুস্পষ্ট যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে হামাস।
সংগঠনটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করেছে ইসরায়েল। এছাড়া হোয়াইট হাউসের ওই বিবৃতি থেকে বুঝা যায় যে, ইসরায়েলের হামলার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন- হামাস, হুথি, ইরান; এরা কেবল ইসরায়েলকে নয় যুক্তরাষ্ট্রকেও টেরোরাইজ করতে চায়। তাদের সকলকে এর মূল্য দিতে হবে। সবাইকে ভেঙে দেওয়া হবে। এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছেন, হামাসকে গাজায় আটক সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। নইলে তাদের ভেঙে দেওয়া হবে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে অনলাইন বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, উপত্যকাটির একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে দুই শতাধিক মানুষ নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের এই হামলায় এটা স্পষ্ট যে তারা যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
তারা বলেছে, হামলা যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণই চলবে। গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমান হামলার চালিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহতদের অনেকেই শিশু।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা
দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।
২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।
তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।