গোবিপ্রবি ছাত্রদলের কমিটির শীর্ষ পদগুলো ছাত্রলীগের ১৫ জন
Published: 18th, March 2025 GMT
গত ৫ আগস্টের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না। তবে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন অনেকেই। যাদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে যুক্ত ছিলেন নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে।
ছাত্রদলের কার্যক্রমকে গতিশীল কারার অংশ হিসেবে গত ১৪ মার্চ রাতে প্রথমবারের মতো গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) ছাত্রদলের ৫৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সদ্য ঘোষিত এই কমিটিতে সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি সহ পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১৫ জন নেতাকর্মী।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী দুর্জয় শুভ। তিনি ইতিপূর্বে ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের অনুসারী ছিলেন।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিভিন্ন ছবি প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে একটি ছবিতে তাকে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।
একইভাবে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে পদ পাওয়া মাহমুদুল হাসান রাকিবকে সাম্প্রতিক একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রলীগের ব্যানার ধরে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে। এছাড়াও তাকে ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে চিনে আসছেন সবাই। সে সময় তাকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শাহরিয়ার গালিবকে ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করা ও নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করতে দেখা গেছে। একইভাবে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেও কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মো.
কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া শফিকুল ইসলামকে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল ও কর্মসূচিতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, টুঙ্গিপাড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনান আগমন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটির দাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আরেক নেতা শাহজাহানকে ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যায়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের কর্মী থেকেও ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন। কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে পদ পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম জহির, শেখ মেহেদী হাসান সাকিব ও আনোয়ার হোসেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন মো. সাইফুল্লাহ, মো. তৌফিক রহমান আকাশ, মো. সাব্বির আহম্মেদ শুভ, কৌশিক মো. রাজেল প্রামাণিক, সজীব ঘোষ,অপি সরকার। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা নাহিদুর রহমান সাকিব পেয়েছেন প্রচার সম্পাদকের পদ (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা)।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা চন্দ্রনাথ মজুমদারের ডান হাত খ্যাত মো. জুয়েল হোসেন ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এমনকি দেখা করছেন ছাত্রদল ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও।
ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি ছাত্রদলের সদস্য হওয়ার ফরম পূরণ করেছি। আমি ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিথ্যা লেখালেখি হচ্ছে।”
পূর্বে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ছাত্রদলের সিনিয়র সভাপতি মাহমুদুল হাসান রাকিব বলেন, “আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই। তখন আমাদের ময়মনসিং বিভাগীয় ছাত্র ছাত্র সংসদ এই ক্যাম্পাসে ভালো একটা অবস্থান ছিল। সে সময় আমি ময়মনসিংহ ছাত্র সংসদের সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিলাম। তখন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কিছু বড় ভাই ছিল যারা অত্যান্ত প্রভাবশালী এবং ছাত্রলীগের নেতা ছিল।”
তিনি বলেন, “বিভাগীয় সংগঠনে আমার একটি বড় সার্কেল ছিল। প্রথম বর্ষের হওয়ায় বড় ভাইরা মাদকবিরোধী মিছিল বলে আমাদের নিয়ে যায়। মিছিলে এক পর্যায়ে তারা আমাকে সামনে দিয়ে দেয়। আর আমি যদি অরিজিনাল ভাবে ছাত্রলীগ করতাম তাহলে জীবনের রিস্ক নিয়ে গোপালগঞ্জের মতো যায়গায় আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদল করতাম? আমি তো নতুন ছাত্রদল করি না। আমি আওয়ামী লীগের আমল থেকে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত আছি।”
ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে সভাপতি দুর্জয় শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভি করেননি।
সদ্য কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আমিনুল বিদ্যুৎ বলেন, “আমি কি বলব। আমার বলার মতো কিছু নেই। আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের পদ পাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রিয়াজ বলেন, “গোপালগঞ্জ জেলা একটি আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। এখানে আওয়ামী লীগের আমলে কাজ করাই অসম্ভব ছিল। আর আমাদের কর্মীরা সবাই তো অর্থনৈতিকভাবে সামর্থ্যবান না। তাই তাদের হলে থাকতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে হলগুলোতে থাকতে হলে বাধ্যতামূলক অনেক সময় ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে হয়েছে। এখানে প্রকাশ্যে কাজ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তারপরও অনেকেই চেষ্টা করেছে কাজ করার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সদস্যের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছি। আমরা যখন ভোট নিয়েছি, তখন কেউ এমন অভিযোগ করেনি। কারোর থেকে কারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। ভোটের ফলাফল অনুযায়ি আমরা প্রতিনিধি দল ঘোষণা করে আসছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক চীন সফর শেষ করে যাচাই বাছাই শেষে কমিটি ঘোষণা করেন।”
এ ছাত্রদল নেতা বলেন, “এখন যে অভিযোগগুলো উঠছে, সে বিষয়গুলো যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ আকারে দেয়, তাহলে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যাচাই করে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র ক পদ প য় ছ ন গ প লগঞ জ ল গ র আমল র র জন ত ল ইসল ম র পদ প র কর ম আম দ র কম ট ত প রথম আওয় ম স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালনের দাবি ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এরই মধ্যে তিনবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চলতি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ দাবি করেন। তাঁর দাবি, ২০২০ সালের নির্বাচনেও তিনি জিতেছিলেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি এই দাবি করেছেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলায়, ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করে আসছেন ট্রাম্প। ওই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার মিশিগানের সমাবেশে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, বাইডেনের আমলেও তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মঙ্গলবার সমাবেশে কিছু সমর্থক ট্রাম্পকে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানান। তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা যদি ধরেন, আমরা আসলে এরই মধ্যে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছি। মনে রাখবেন, আমি কিন্তু জয় পছন্দ করি। আমি সেই তিনটি জয়ই পছন্দ করি, যা আমরা নিঃসন্দেহে পেয়েছিলাম। তবে, শুধু মাঝের মেয়াদের ফলাফলটা আমি পছন্দ করি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী কেউ দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন না। ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভ করেন। পরে ২০২০ সালের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ওই নির্বাচনের বাইডেনের কাছে পরাজিত হন। পরে ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প।ট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ মার্কিন, অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে
আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্ট বেশির ভাগ মার্কিন, অর্থনীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে১৩ ঘণ্টা আগেচলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কীভাবে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, সে বিষয়ে ট্রাম্প গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, ‘এটা করার কিছু উপায় আছে।’ মঙ্গলবারের বক্তৃতার শুরুতে ট্রাম্প ঠিকঠাকই বলেন, আমি মিশিগানে দুইবার জিতেছি। কিন্তু পরেই তিনি যুক্ত করেন, ‘আসলে আমরা তিনবার জিতেছি।’ ট্রাম্প মিশিগানে ২০১৬ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে বাইডেনের কাছে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে দেড় লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।
আরও পড়ুনট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় কতটা বাড়ল১২ ঘণ্টা আগে