ময়মনসিংহের ব্যস্ততম এলাকায় যেভাবে বাস করতেন আরসা সদস্যরা
Published: 19th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানসহ ১০ জনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর মধ্যে ময়মনসিংহ নগরের ব্যস্ততম এলাকা নতুনবাজার মোড়ের একটি ভবন থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরসা সদস্যরা বাসাটি কীভাবে ভাড়া নিয়েছিলেন, কীভাবে সেখানে থাকতেন, তা নিয়ে কথা বলেছেন ভবনটির বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত রোববার দিবাগত রাত একটা থেকে পৌনে তিনটা পর্যন্ত নতুনবাজার মোড়ের বহুতল ভবন গার্ডেন সিটিতে অভিযান চালান র্যাবের সদস্যরা। ভবনটির ১০তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুজন নারী ও দুজন পুরুষকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের সঙ্গে দুটি শিশুও ছিল।
ময়মনসিংহ নগরের ব্যস্ততম এলাকা নতুনবাজার মোড়। এই মোড়ে ১৫তলা গার্ডেন সিটি ভবনের ১০তলার যে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন আরসা সদস্যরা। ভবনটির মালিক মাজহারুল ইমলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি নরসিংদীর পলাশে থাকেন। বাসাটি ভাড়া দিয়েছিলেন ভবনের দারোয়ান নিজাম উদ্দিন। আরসা সদস্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাসাটি ভাড়া নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ভাড়ার নোটিশ দেখে চার মাস আগে দুই ব্যক্তি বাসাটি ভাড়া নিতে চান। তাঁরা নিজেদের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের তারুন্দিয়া ইউনিয়নে বলে পরিচয় দেন। একজনের নাম বলেন মনিরুজ্জামান। দারোয়ানের বাড়িও ঈশ্বরগঞ্জ। তাঁদের বিশ্বাস করে মালিকের সঙ্গে কথা বলিয়ে ২০ হাজার টাকায় ভাড়া দেন তিনি। ভাড়া দেওয়ার সময় তাঁদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চান তিনি, তবে তাঁরা ‘দিব, দিচ্ছি’ করে অনেক দিন কাটিয়ে দেন। পরে মনিরুজ্জামান একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন, যেখানে বাড়ি উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী লেখা। বাবার নাম লেখা ছিল মো.
দারোয়ান নিজাম উদ্দিন বলেন, দুই ব্যক্তি যখন ভাড়া নিতে আসেন, তখন নিজেদের ভাই বলে পরিচয় দেন। তাঁরা বলেন, তাঁদের মা–বাবা এই ফ্ল্যাটে থাকবেন। তাঁদের বাবা গাজীপুরে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করেন। একজন প্রবীণ ব্যক্তি এই বাসায় থাকতেন। ভবন থেকে মাঝেমাঝে নামার সময় খুব ধীরগতিতে হাঁটতেন। বাসার নারীরা পর্দা করায় দারোয়ান কখনো বাসার ভেতরে যাননি। বাসা থেকে বাইরে খুব একটা যাওয়া-আসা করতেন না এই বাসার বাসিন্দারা। শুধু মনিরুজ্জামান পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি বাজার করে ওপরে চলে যেতেন। চার মাস ধরে এভাবেই বসবাস করছিলেন তাঁরা।
ভবনের আরেক দারোয়ান রফিকুল ইসলাম বলেন, মনিরুজ্জামান নামের লোকটি ভাগনে পরিচয় দেওয়া ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরকে নিয়ে ভবনে ওঠানামা করতেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছবি দেখানো হলে দুই দারোয়ানই বলেন, এই চারজনের মধ্যে মনিরুজ্জামান নেই। আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ছবি দেখানো হলে তাঁরা দাবি করেন, তাঁকে এই ভবনে আসা-যাওয়া করতে দেখেননি তাঁরা।
দারোয়ান রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের পর বাসাটি থেকে দুজন পুরুষকে বের করা হলেও একজনকে তাঁরা দেখতেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে সামুদ্রিক মাছ আনিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতেন, এমনটাই তাঁরা জানতেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় যে ব্যক্তি মনিরুজ্জামান পরিচয় দিয়েছেন, তাঁকে তাঁরা ভালো করে চেনেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি নেই। তাঁর বাবা পরিচয় দেওয়া ও ভাগনে পরিচয় দেওয়া কিশোরও নেই।
ভবনটির ১১তলার বাসিন্দা আনিসুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, এই ফ্ল্যাটে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজাও খুলতেন না।
ময়মনসিংহে দুই মামলা
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। র্যাব-১১-এর নায়েক সুবেদার হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এতে আসামি করা হয়েছে আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী (৪৮), মোস্তাক আহাম্মদ (৬৬), মনিরুজ্জামান (২৪), সলিমুল্লাহ (২৭) ও তাঁর স্ত্রী মোসা. আসমাউল হোসনা (২৩), ১৫ বছর বয়সী কিশোর, আসমত উল্লাহ (২৪), মো. হাসান (৪৩), মোছা. শাহীনা (২২) ও ১৭ বছর বয়সী এক তরুণীকে।
কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ জানিয়েছে, ময়মনসিংহ নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজন ভাইবোন। আসমত উল্লাহ, শাহিনা আক্তার ও ১৭ বছর বয়সী তরুণী ভাইবোন। তাঁরা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের কাউনিয়া বিল এলাকার বাসিন্দা হলেও উখিয়ার থ্যাংকালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের থাকতেন। গ্রেপ্তার অপরজন মো. হাসান। তিনি আরাকানের খুনকুন এলাকার বাসিন্দা হলেও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। মামলায় আরসার সদস্যদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণ, বিদেশি মুদ্রা, আরসা আর্মি লেখা ১৫টি নেমপ্লেট, মিলিটারি শার্টসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ দেখানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অবস্থান করায় ১০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। যেহেতু তাঁদের নারায়ণগঞ্জের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে, ময়মনসিংহের পুলিশ আজ গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করবে। তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র জ জ ম ন ক ল ইসল ম বছর বয়স ভবনট র থ কত ন উল ল হ ভবন র র সময় করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক উচ্ছেদ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালায়।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজীদ বলেন, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ, অর্থ পরিশোধ না করায় মিনি চিড়িয়াখানা ও পাশের জমিতে করা শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল করে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থানে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইব্রেরি, খেলনা ও কিছু রাইড থাকবে এবং বাগান করে দেওয়া হবে। শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল আবেদিন উদ্যানে মিনি চিড়িয়াখানা ও চিড়িয়াখানাসংলগ্ন শিশুপার্কের ভূমি ইজারার চুক্তিপত্র বাতিল করে গত ২৬ জুন ইজারাগ্রহীতা মো. সেলিম মিয়াকে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। চিঠি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সেখানকার অবকাঠামো ও পশুপাখি নিজ হেফাজতে সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। ইজারাগ্রহীতা সেলিম মিয়া হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমানের শ্যালক। চলতি বছরের ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মাহবুবুর রহমান।
তবে সেলিম মিয়ার নামে পার্ক ইজারা নেওয়া হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। ২০১৪ সালের ৩০ জুন তৎকালীন পৌরসভা মিনি চিড়িয়াখানাটি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন ইজারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ৬ লাখ টাকায় চিড়িয়াখানাটি ইজারা দিলেও মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। মিনি চিড়িয়াখানার পাশের জমিটি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মাসিক ১ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এটিও ইজারা দেওয়া হয় সেলিম এন্টারপ্রাইজকে। দুই শতক জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও চুক্তিপত্রে শিশুপার্কের কথা সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় বলে সিটি করপোরেশনের চুক্তি বাতিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলামসহ তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে অভিযান চালান। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, বন বিভাগের সদস্যরা এতে অংশ নেন। এক্সকাভেটর দিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জয়নুল উদ্যান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও উচ্ছেদ করা হয়েছে। বেলা তিনটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কে অভিযান চলছিল।
মিনি চিড়িয়াখানায় প্রাণীগুলোকে হেফাজতে নিয়েছেন বন বিভাগের কর্মীরা