মানহীন পাতা সংগ্রহ, চা কারখানাকে জরিমানা
Published: 19th, March 2025 GMT
পঞ্চগড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা তৈরি এবং মানহীন পাতা সংগ্রহের অভিযোগে মলি টি ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামে একটি কারখানার মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইমরানুজ্জামানের ভ্রম্যামাণ আদালত এই জরিমানা করেন।
চা বোর্ড জানায়, একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল এলাকার ওই চা কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কারখানাটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চা তৈরি, মানহীন পাতা সংগ্রহ এবং সংগৃহীত পাতায় ফরেন পার্টিকেলের উপস্থিতি খুঁজে পায় চা বোর্ডের কর্মকর্তারা। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানার মালিক মখলেছার রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে মুচলেকা নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
শক্ত অবস্থানে বিএসটিআই
আমদানি করা অর্ধেক কসমেটিকস পণ্যই ভেজাল ও মানহীন
অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ৮ লাখ টাকা জরিমানা
অভিযানের সময় অন্যদের মধ্যে চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ইনচার্জ আরিফ খান, উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেনসহ পুলিশ ও চা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, “কারখানাটিতে অনেক শ্রমিক কাজ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। চা বোর্ড নির্ধারিত মান অনুযায়ী পাতা সংগ্রহ করেনি তারা। এতে জেলায় তৈরিকৃত চায়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এজন্য জরিমানা আদায়ের সাথে কারখানা মালিকের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণা
দেশের নারী ফুটবল দলের একের পর এক সাফল্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের স্বপ্ন জুগিয়ে যাচ্ছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায়। সেখানকার ছোট্ট গ্রাম রাঙাটুঙ্গীর মেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম এখন ফুটবল। গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলছে একদল অদম্য নারী ফুটবলার। আর তাদের এগিয়ে নিতে আছেন কোচ তাজুল ইসলাম। রোদ, বৃষ্টি, সামাজিক কটূক্তি—সবকিছু উপেক্ষা করে গ্রামের মাঠে প্রতিদিন বিকেলের নিয়মিত অনুশীলনে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।
২০১৪ সালে স্থানীয় টুর্নামেন্টে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কিছু মেয়ের ফুটবলপ্রেম দেখে তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন ‘রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমি’। সে সময় তাঁর এই উদ্যোগের জন্য তিরস্কার ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন তিনি; কিন্তু তাজুল ইসলাম, কোচ সুগা মুর্মু ও সাবেক স্থানীয় ফুটবলার জয়নুলের অবিরাম প্রচেষ্টায় সেই তিরস্কার ও সমালোচনা আজ গর্বে পরিণত হয়েছে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই একাডেমি থেকে উঠে আসেন মুন্নি আক্তার, সোহাগী, স্বপ্না রানী, সাগরিকা, কোহাতির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়। বর্তমানে এই একাডেমি থেকে ২৩ জনের বেশি তরুণী জাতীয় দলসহ বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ও লিগে খেলছেন। তাঁদের এই সাফল্য দেখে এখন গ্রামের মানুষ, এমনকি একসময়কার সমালোচকেরাও তাঁদের নিয়ে গর্ব করেন। রাঙাটুঙ্গীর মানুষের কাছে ফুটবল এখন শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা গ্রামের মেয়েদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় কোহাতি কিসকু জানান, এ অবস্থানে আসা সহজ ছিল না। মাঠে আসার পথে তাঁদের অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে; কিন্তু কোচ ও প্রশিক্ষকদের উৎসাহ এবং নিজেদের দৃঢ় মনোবল তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁদের এই সাফল্য প্রমাণ করে, মেধা ও ইচ্ছাশক্তি সব ধরনের সামাজিক বাধা ভেঙে দিতে পারে।
তবে এই সাফল্যের পেছনেও রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা। তাঁদের অনুশীলনের মাঠটি এবড়োখেবড়ো, অনুশীলনের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম বা পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। অনেক খেলোয়াড়ের পরিবারের তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন। তাজুল ইসলাম নিজের অর্থায়নে একাডেমি চালালেও একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া এ আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
রাঙাটুঙ্গীর ফুটবল আন্দোলন প্রমাণ করে, একটি স্বপ্ন আর কিছু মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। মাঠের সংস্কার, খেলার সরঞ্জাম এবং খেলোয়াড়দের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমাদের সবার প্রত্যাশা, রাঙাটুঙ্গীর মেয়েরা একদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেশের সম্মান বাড়াবে। ক্লাবটির পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে, সেটিই কাম্য।