যশোরের মনিরামপুরে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার উপজেলা বিএনপির জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বুধবার বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টুর পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল বারী রবু।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমান, গাজী আব্দুস সাত্তার, যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল হক লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক খান শফিয়ার রহমান, ভোজগাতী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার দফাদার, খেদাপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজিবর রহমান, কাশিমনগর ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, নেহালপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, মনোহরপুর ইউনিয়নের সভাপতি আক্তার ফারুক মিন্টু, কুলটিয়া ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল ইসলাম, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, শ্যামকুড় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ। 

শহিদুল বারী রবু জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এখন থেকে দলীয় কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজিসহ যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠলেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে সুসংগঠিত করে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। 

উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন ও সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু জানান, তারেক রহমানের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জরুরি সভায় উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটির নেতাদের শেষবারের মতো হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র ব এনপ র স র রহম ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার ও দল কেউ দায় এড়াতে পারে না

রাজনৈতিক দল—ডান–বাম ও মধ্যপন্থী যা–ই হোক না কেন, সেটা পরিচালিত হয় নির্দিষ্ট নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। যাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে দাবি করেন, তাঁদের সেই নীতি–আদর্শও ধারণ করতে হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যখন সরাসরি চাঁদাবাজি, দখলবাজির অভিযোগ আসে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে চাঁদাবাজ-দখলবাজ পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরের চাঁদাবাজদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের পরিচয়ধারী ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ নাম রয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডার, সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম–পরিচয় আছে। একইভাবে পতিত আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে।

তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে। কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে। এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না, সেই তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে এতে। তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ১২টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে। তালিকাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

কেবল রাজশাহী নয়, দেশের প্রতিটি জেলায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি মহামারি আকার নিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এসব ঘটনায় পতিত সরকারি দলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত। গণ–অভ্যুত্থানের পর সেই দলটির নেতা–কর্মীরা হয় আত্মগোপনে, নয় কারাগারে। তাহলে এসব চাঁদাবাজির ঘটনা কে বা কারা ঘটাচ্ছেন? একশ্রেণির পেশাদার চাঁদাবাজ আছে, যারা সব সরকারের আমলেই তাদের পেশাদারত্ব দেখিয়ে থাকে। রাজনৈতিক মামলার দোহাই দিয়ে আগের সরকারের আমলে কারাগারে আটক থাকা বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসীও জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন করে অপকর্ম শুরু করেছেন।

আগে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায় থাকা চাঁদাবাজেরা রং বদল করে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতেন। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ভাবতে পছন্দ করতেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটি এতটাই বিধ্বস্ত যে তাঁদের নেতা–কর্মীদের পক্ষে পোশাক বদল করে মাঠে থাকা অসম্ভব। ফলে তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন ভবিষ্যতে ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশ্রয় পাওয়া দলের নেতা–কর্মীরা।

যেসব রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দল থেকে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অপকর্মের কারণে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটছে। এ ক্ষেত্রে ‘বড় দল’ এগিয়ে থাকলেও ছোটরাও খুব পিছিয়ে নেই। রাজশাহীর তালিকায় তিনটি দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়েছে। যেসব দলের নেতা–কর্মীদের নাম ছাপা হয়নি, তাঁরাও যে চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে মুক্ত নন, সেটা হলফ করে বলা যায়। অতি সম্প্রতি একটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা গুলশানের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়েন। এসব ঘটনা কোনোভাবে নতুন বন্দোবস্তের নমুনা নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে না পারুন, অন্তত চাঁদাবাজির মতো অপরাধ থেকে সংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরত রাখুন।

কেবল রাজশাহী নয়, দেশের অন্যান্য স্থানে চাঁদাবাজির তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি। আর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অঘটন ঘটলে বহিষ্কারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অঘটনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বিলম্বে হলেও তাদের বোধোদয় হোক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকার ও দল কেউ দায় এড়াতে পারে না