পশ্চিমা নেতাদের জন্য এই যুদ্ধ থেকে একটি বড় শিক্ষা নেওয়ার আছে। গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে, এমন কোনো পরমাণু শক্তিধর দেশকে সামরিকভাবে পরাজিত করা সম্ভব নয়। রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ‘সফট পাওয়ার’ বা কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব। এই হাতিয়ার পশ্চিমারা শীতল যুদ্ধের সময় অনেক সফলভাবে ব্যবহার করেছিল।

ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়ার সংস্কৃতি ও অর্থনীতি ইউরোপের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তা ভবিষ্যতেও থাকবে। ইউরোপ মেনে নিক বা না নিক, রাশিয়া নিজেকে ইউরোপীয় সমাজের অংশ বলেই মনে করে। এই বাস্তবতা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এক কৌশলগত সুযোগ তৈরি করে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে রাশিয়াকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাবিত করলে বরং লাভ বেশি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুমকি কমানোর জন্য তা পশ্চিমাদের প্রক্সি যুদ্ধের চেয়ে ভালো হবে বলেই মনে হয়।

এ ছাড়া ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোতেও পরিবর্তন চাইবেন পুতিন। বিশেষ করে, ইউক্রেনের প্রধান গোয়েন্দা দপ্তর ও নিরাপত্তা সংস্থার কিছু শাখা থেকে পশ্চিমা প্রভাব কমানোর দাবি তিনি তুলতে পারেন।

রাশিয়াও ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছে। তবে তারা পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার আগে আরও আলোচনার পক্ষে। মস্কো আগেই বলেছে, যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন ও লঙ্ঘন ঠেকানোর নিশ্চয়তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।

যুদ্ধের ময়দানে এখন রাশিয়া আছে সুবিধাজনক অবস্থানে। তাই তারা চূড়ান্ত চুক্তির কাঠামো ঠিক না করে কোনো সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। তবে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পর রাশিয়ান কর্মকর্তারা শান্তিচুক্তি নিয়ে আশাবাদী।

যদি যুদ্ধবিরতি এগিয়ে যায়, প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন কি তাঁর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের সময় করা সব দাবি আদায় করতে পারবেন?

পুতিন জোর দেবেন যে কিয়েভ ও ন্যাটোকে ২০০৮ সালের বুখারেস্ট সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে হবে। সেই সম্মেলনে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং পরে জর্জিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতের পথ তৈরি হয়।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোন বিপদ না আসা ও ন্যাটোকে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে দূরে রাখা ছাড়াও পুতিনের আরেকটি লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো রাশিয়াকে আবারও বিশ্বমঞ্চে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

এখন সব পক্ষই মোটামুটি বোঝে, বাস্তবসম্মত শান্তিচুক্তির কাঠামো কী হতে পারে। রাশিয়া বারবার বলেছে, এটি হবে ২০২২ সালের বসন্তে ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে। সেখানে ছিল ইউক্রেনের সামরিক নিরপেক্ষতা, সেনাবাহিনীর আকার সীমিত রাখা এবং ইউক্রেনে বসবাসরত রুশভাষীদের অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা। তবে তখন ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইউক্রেন চুক্তি থেকে সরে এসেছিল।

এর মধ্যে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলেছে। মস্কো এখন চায় যে কিয়েভ স্বীকার করুক, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলগুলো রাশিয়ার অংশ। যদিও রাশিয়া এখনো পুরোপুরি এসব অঞ্চল দখল করতে পারেনি। তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করেছে। তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান কিছুটা শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আলোচনায় জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎও স্থান পাবে। এটি বর্তমানে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যদি রাশিয়া এই আলোচনার অংশ হয়, তাহলে এর মানে দাঁড়াবে যে তারা দখল করা অঞ্চলের অংশগুলো নিজেদের দাবি থেকে সরতে পারে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘ টেলিফোন আলাপের পর মনে হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের দিকে যাচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে জেদ্দায় আলোচনা হয়েছিল।

ট্রাম্প শান্তিচুক্তির পক্ষে কাজ করছেন। মস্কো ও কিয়েভ দুই পক্ষই তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে তাদের অবস্থান এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

ওয়াশিংটনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেন ৩০ দিনের জন্য শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এরপর শান্তি আলোচনা হবে। ইউক্রেন আগে থেকেই যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় যেতে চায়নি। তবে আরও ভূখণ্ড হারানোর আশঙ্কা, ক্ষয়ক্ষতি ও সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারানোর ভয়ে তারা এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে।

পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক সংকেত দিচ্ছে যে পশ্চিমা দেশগুলো ও ইউক্রেন এখন বাস্তবসম্মত সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে। আগে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স শান্তিরক্ষার নামে ন্যাটোর সেনা মোতায়েনের অবাস্তব দাবি করছিল।

পুতিনের যুক্তি বোঝার জন্য এটা জানা দরকার যে তিনি মূলত ভূখণ্ড দখলের জন্য লড়ছেন না। তাঁর কাছে ইউক্রেনে এই পূর্ণাঙ্গ হামলা এলে এক শাস্তি। ২০১৫-১৬ সালের মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলগুলো ইউক্রেনের অধীনে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ইউক্রেন সেটি বাস্তবায়ন করেনি। পুতিন মনে করেন, ইউক্রেন যখন ২০২২ সালের ইস্তাম্বুল চুক্তি থেকেও সরে আসে, তখন রাশিয়া এই চার অঞ্চলকে নিজের সঙ্গে সংযুক্ত করে ইউক্রেনকে শাস্তি দিয়েছে।

আরও পড়ুনপুতিন এবার ট্রাম্পকে লেনিন পদক দেবেন!১০ মার্চ ২০২৫

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিনিময়ে অন্য কোনো ভূখণ্ড বা রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। বিশেষ করে, রুশভাষী জনগণের অধিকার বা মস্কো-সমর্থিত ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স চার্চের স্বীকৃতি–সংক্রান্ত কোনো চুক্তি হতে পারে। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা কাঠামোয় ন্যাটোর স্থাপনা বা প্রভাব রাখা নিয়ে পুতিন কোনো রকম ছাড় দেবেন না।

এই সংঘাতের একটা মূল কারণ আছে। পশ্চিমা বিশ্ব ১৯৯০-এর দশকে নতুন গঠিত গণতান্ত্রিক রাশিয়াকে গ্রহণ না করে মোকাবিলা করার পথ বেছে নিয়েছিল। তবে আপাতত, পুতিন শুধু ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে সন্তুষ্ট হবেন না। তিনি চাইবেন, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে থাকা সব ন্যাটো স্থাপনা যেন সরিয়ে ফেলা হয়। এর মধ্যে আছে সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র, সরবরাহ সুবিধা এবং সিআইএর নজরদারি কেন্দ্রগুলো।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসা বার্তা বিশ্লেষণ করলে মনে হচ্ছে, রাশিয়ার এই চাওয়াগুলো বাস্তবায়িত হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়েও রাজি হতে পারে। অন্যদিকে ইউক্রেন ইঙ্গিত দিয়েছে যে পশ্চিমা দেশগুলোতে আটকে রাখা রাশিয়ার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ইউক্রেনের যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। রাশিয়া এই অর্থ ইতিমধ্যেই আর ফেরত পাবে না বলে ধরে নিয়েছে। সম্ভবত এই পদক্ষেপকে তারা সদিচ্ছার নিদর্শন হিসেবে দেখাতে চায়, যাতে ইউক্রেনের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক কিছুটা হলেও মেরামত করা সম্ভব হয়।

এসব আদায় করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই পুতিনের মনে হবে যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সহিংস যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত ছিল। ইউক্রেন সামাজিক, জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা করে তিনি যে যুদ্ধাপরাধী হয়েছেন, তখন তিনি তা অগ্রাহ্য করতে পারবেন।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোন বিপদ না আসা ও ন্যাটোকে রাশিয়ার সীমান্ত থেকে দূরে রাখা ছাড়াও পুতিনের আরেকটি লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো রাশিয়াকে আবারও বিশ্বমঞ্চে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

পশ্চিমা নেতাদের জন্য এই যুদ্ধ থেকে একটি বড় শিক্ষা নেওয়ার আছে। গোটা মানবজাতিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে, এমন কোনো পরমাণু শক্তিধর দেশকে সামরিকভাবে পরাজিত করা সম্ভব নয়। রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ‘সফট পাওয়ার’ বা কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব। এই হাতিয়ার পশ্চিমারা শীতল যুদ্ধের সময় অনেক সফলভাবে ব্যবহার করেছিল।

ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়ার সংস্কৃতি ও অর্থনীতি ইউরোপের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তা ভবিষ্যতেও থাকবে। ইউরোপ মেনে নিক বা না নিক, রাশিয়া নিজেকে ইউরোপীয় সমাজের অংশ বলেই মনে করে। এই বাস্তবতা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এক কৌশলগত সুযোগ তৈরি করে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে রাশিয়াকে দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাবিত করলে বরং লাভ বেশি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুমকি কমানোর জন্য তা পশ্চিমাদের প্রক্সি যুদ্ধের চেয়ে ভালো হবে বলেই মনে হয়।

লেওনিদ রাগোজিন লাটভিয়ার সাংবাদিক

আল জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ন র জন য র ওপর ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে

দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে