নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ‘এআই কম্প্যানিয়ন’ চ্যাটবটে নতুন ফিচার যুক্ত করতে যাচ্ছে জনপ্রিয় ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ্লিকেশন জুম। নতুন এ উদ্যোগের আওতায় শিগগিরই চ্যাটবটটিতে ‘এজেন্টিক এআই’ ফিচার যুক্ত করা হবে। ব্যবহারকারীদের কাজের ধরন শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করে দেবে ফিচারটি। এর ফলে ব্যস্ত থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন জুম ব্যবহারকারীরা।

জুমের তথ্যমতে, নতুন ফিচারটি জুম ওয়ার্কপ্লেসের ‘টাস্কস’ ট্যাবে পাওয়া যাবে। এর ফলে সহজেই ফিচারটি চালু করে অনলাইন বৈঠকের সময় নির্ধারণ, আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ও ভিডিও ক্লিপ তৈরি করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। এ বিষয়ে জুমের প্রধান পণ্য কর্মকর্তা স্মিতা হাশিম বলেন, ‘এআইকে প্রতিটি পণ্য ও যোগাযোগের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও কার্যকর ও সহায়ক হয়ে ওঠে। আমাদের এআই কম্প্যানিয়ন এখন প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে, যা সহজ ও কার্যকর অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।’

আরও পড়ুনজুম সভায় স্ক্রিন শেয়ার করবেন যেভাবে০৫ নভেম্বর ২০২৩

এআই কম্প্যানিয়নের পাশাপাশি জুম ওয়ার্কপ্লেসে আরও নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে, যার মধ্যে ভয়েস রেকর্ডার অন্যতম। ফিচারটি অনলাইন বৈঠকের তথ্য ধারণ করে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করবে এবং মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপন করবে। এ ছাড়া ‘লাইভ নোটস’ নামের আরও একটি ফিচার যুক্ত হচ্ছে, যা জুম বৈঠক ও ফোনকলের রিয়েল টাইম সারসংক্ষেপ তৈরি করে দেবে।

এআই কম্প্যানিয়ন ফিচারটি আগামী মাসে চালু হবে। প্রতি মাসে ১২ ডলারের বিনিময়ে ব্যবহার করা যাবে ফিচারটি। বেশ কিছু অ্যাভাটারের টেমপ্লেট যুক্ত থাকায় ফিচারটি কাজে লাগিয়ে সহজেই নিজেদের প্রয়োজনমতো কাস্টম অ্যাভাটার তৈরি করা যাবে।

সূত্র: দ্য ভার্জ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ক ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ