ক. শূন্যস্থান পূরণ করো।

প্রশ্ন: মানবদেহের শতকরা -ভাগ পানি।

উত্তর: ৬০-৭০

প্রশ্ন: উদ্ভিদের দেহের প্রায় শতকরা - ভাগ পানি।

উত্তর: ৯০

প্রশ্ন: বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়াকে - বলে।

উত্তর: ঘনীভবন

প্রশ্ন: পানিকে তাপ দিলে –পরিণত হয়।

উত্তর: জলীয় বাষ্পে

প্রশ্ন: পানিচক্রের মাধ্যমে সর্বদাই পানির অবস্থার - ঘটছে।

উত্তর: পরিবর্তন

প্রশ্ন: সাগর ও নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়ে – পরিণত হয়।

উত্তর: জলীয় বাষ্পে

প্রশ্ন: জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য পানিকে – বেশি সময় ধরে ফুটাতে হবে।

উত্তর: ২০ মিনিটের

প্রশ্ন: আর্সেনিকমুক্ত পানি ফিটকিরি বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে – করা যায় না।

উত্তর: নিরাপদ

খ.

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ।

প্রশ্ন:পানিচক্র কী?

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাকেই পানিচক্র বলে।

প্রশ্ন: পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।

উত্তর: পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো—

১. কৃষির ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে ফেলা।

২. পানিতে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য না ফেলা।

৩. মরা জীবজন্তু পানিতে না ফেলা।

প্রশ্ন: অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার ৪টি উপায় লেখো।

উত্তর: অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার ৪টি উপায় নিচে দেওয়া হলো—

১. ছাঁকন

২. থিতানো

৩. ফোটানো ও

৪. রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধকরণ।

প্রশ্ন: বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই পানি কোথায় যায়?

উত্তর: বৃষ্টির পর মাটিতে যে পানি জমা হয় তা সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। ওই জলীয় বাষ্প ওপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানি বিন্দুতে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: পানির ৩টি অবস্থা কী কী?

উত্তর: পানির ৩টি অবস্থা হলো—

১.কঠিন (বরফ),

২.তরল ( পানি) ও

৩.বায়বীয়( বাষ্প)।

প্রশ্ন: বৃষ্টি কী?

উত্তর: সূর্যতাপ পুকুর, খালবিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। জলীয় বাষ্পের ক্ষুদ্র পানি কণা মিশে মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের পানি কণাগুলো একত্র হয়ে আরও বড় হয়ে বৃষ্টি হিসেবে মাটিতে পড়ে।

প্রশ্ন: ছাঁকন কী?

উত্তর: ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াই হলো ছাঁকন।

প্রশ্ন: আর্সেনিক দূষণের কারণ কী?

উত্তর: আর্সেনিক একপ্রকার বিষাক্ত পদার্থ, যা কিছু কিছু এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতে দেখা যায়। নলকূপের পানির সঙ্গে মিশে এটি ওপরে আসে এবং এ পানি ব্যবহারের ফলে মানুষের মারাত্মক অসুখ হয়। প্রাকৃতিক কারণেই আর্সেনিক দূষণ হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: দূষিত পানি পান করলে কী কী রোগ হতে পারে?

উত্তর: দূষিত পানি পান করলে— কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

প্রশ্ন: মেঘ কী?

উত্তর: সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয় বাষ্প হয়ে ওপরে উঠতে থাকে। একসময় ওপরের ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে জলকণায় পরিণত হয়ে আকাশে ভাসতে থাকে, এটিকে মেঘ বলে।

আরও পড়ুনআইডিবি দেবে ৭২০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ, মিলবে হাতখরচের অর্থ৮ ঘণ্টা আগে

প্রশ্ন: পানি দেহের কী কাজ করে?

উত্তর: আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি, তখন পানি সেই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান শোষণ করে দেহের প্রতিটি অঙ্গে তা পরিবহনে সাহায্য করে। এ ছাড়া দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতেও পানি সহায়তা করে থাকে।

প্রশ্ন: পানি শোধনের ২টি উপায় লেখো।

উত্তর: পানি শোধনের ২টি উপায় হলো—

১. থিতানো ও

২. ফুটানো।

প্রশ্ন: পানির দুটি উৎসের নাম লেখো।

উত্তর: পানির দুটি উৎসের নাম হলো—

১. বৃষ্টি ও

২. নদী-নালা।

প্রশ্ন: পানি বিশুদ্ধকরণের দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো।

উত্তর: পানি বিশুদ্ধকরণের দুটি রাসায়নিক পদার্থ হলো—

১. ফিটকিরি ও

২. ব্লিচিং পাউডার।

প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও মানবদেহের মধ্যে কত ভাগ পানি রয়েছে?

উত্তর: উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগ এবং মানবদেহের ৬০-৭০ ভাগ পানি রয়েছে।

প্রশ্ন: পানিকে শীতল করলে কী হয়?

উত্তর: যখন পানিকে শীতল করা হয়, তখন তা জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: পানি এক অবস্থা থেকে কীভাবে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়?

উত্তর: তাপ প্রয়োগ ও ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে পানি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানি কী?

উত্তর: মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পানিই হলো নিরাপদ পানি ।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানির প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: আমাদের দেহের খাদ্য পরিপাকে এবং সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে নিরাপদ পানির প্রয়োজন।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানির প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: আমাদের দেহের খাদ্য পরিপাকে এবং সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে নিরাপদ পানির প্রয়োজন।

প্রশ্ন: খাদ্য পরিপাকে পানি কী হিসেবে কাজ করে?

উত্তর: খাদ্য পরিপাকে পানি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

প্রশ্ন: পানিকে তাপ দিলে কী ঘটে?

উত্তর: পানিকে যখন তাপ দেওয়া হয়, তখন তা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর ।

প্রশ্ন: বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের অংশ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: একটি কাচের পানির গ্লাস নিই ।

এখন গ্লাসে এক টুকরো বরফ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দেখা যাবে যে, গ্লাসের বাইরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। হাত দিয়ে গ্লাসটি ধরে নিশ্চিত হই। এ পানি গ্লাসের ভেতরের বরফ থেকে আসেনি। কারণ, গ্লাসের ভেতর থেকে কাচ ভেদ করে পানি বাইরে আসতে পারে না। বরফের ঠান্ডায় গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে, আর সে ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গ্লাসের গায়ে জমেছে।

এভাবেই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি প্রমাণ করা যায় এবং এ জন্য গ্লাসের বাইরের অংশ ভিজে যায়।

প্রশ্ন: পানিচক্র ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাকেই পানিচক্র বলে।

সূর্যতাপ ভূপৃষ্ঠের অর্থাৎ পুকুর, খাল বিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে ঠান্ডা হয়ে ক্ষুদ্র পানি কণায় পরিণত হয়।

ক্ষুদ্র পানি কণা একত্র হয়ে আকাশে মেঘরূপে ঘুরে বেড়ায়। মেঘের পানি কণাগুলো একত্র হয়ে আকারে বড় হয়ে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে। আবার বায়ুপ্রবাহের কারণে জলীয় বাষ্প মেঘরূপে উড়ে গিয়ে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছায়। সেখানে মেঘের পানি কণা ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয়। এ বরফ গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে গলে পানি হয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট পাহাড়ি নদীর উত্পত্তি হয়। এই নদীর পানি সবশেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এভাবে পানির চক্রাকারে ঘুরে আসাকে পানিচক্র বলে।

প্রশ্ন: জীবের কেন পানি প্রয়োজন?

উত্তর: পানি ছাড়া জীব তথা উদ্ভিদ ও প্রাণী বাঁচতে পারে না।

উদ্ভিদের জন্য পানি প্রয়োজন তা হলো—

১. উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে পানি ব্যবহার করে।

২. সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরিতে উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন।

৩. গরমে পানি উদ্ভিদের দেহকে শীতল রাখে ।

প্রাণীর জন্য পানি প্রয়োজন তা হলো—

১. পানি খাদ্য পরিপাক করে।

২. পানি জীবদেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে।

৩. পানি প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ।

প্রশ্ন: বাতাসে যে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?

উত্তর: বাতাসে যে পানি আছে তা আমরা নিচের পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারি।

পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন একটি কাচের গ্লাস ও কয়েক টুকরো বরফ । পরীক্ষার শুরুতে একটি কাচের গ্লাসে কয়েক টুকরো বরফ রাখি। কিছুক্ষণ রেখে দিই এবং গ্লাসের বাইরের দিক পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যাবে যে, গ্লাসের বাইরে পানি জমা হয়েছে। বরফের ঠান্ডার কারণে গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে। আর সে ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, বায়ুতে সব সময় কিছু পানি জলীয় বাষ্প আকারে থাকে।

আরও পড়ুনপঞ্চম শ্রেণি-বাংলা : ‘এই দেশ এই মানুষ’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর১১ মার্চ ২০২৫

প্রশ্ন: পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?

উত্তর: পুকুরের পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার উপায়গুলো হলো—

ছাঁকন:

পুকুরের পানিতে মিশে থাকা কাদা ও ময়লা পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দ্বারা ছেঁকে পরিষ্কার করা যায়।

থিতানো:

পুকুরের পানি কলস বা অন্য কোনো পাত্রে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় তলানি জমে। অতঃপর পাত্রটিকে কাত করে ওপর থেকে পরিষ্কার পানি সংগ্রহ করা যায়।

ফোটানো:

পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে শোধন করা যায়। অন্তত ২০ মিনিট ফোটালে জীবাণু থাকলে মারা যায়।

রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বিশুদ্ধকরণ:

পুকুরের পানিতে ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যায়।

প্রশ্ন: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো লেখো।

উত্তর: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো—

১. পুকুর বা নদীর পানিতে বাসনকোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করানো, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা।

২. রোগীর মলমূত্র, বিছানাপত্র ও জামাকাপড় পুকুর, খালবিলে ধোয়া।

৩. কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে ফেলা।

৪. কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে খাল-বিল-নদীর পানি দূষিত করে।

৫. বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় গ্রাম ও শহর অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এতে মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।

এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে আর্সেনিক দূষণ হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: পানিদূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?

উত্তর: যেসব কারণে পানি দূষিত হয় সেসব কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকলে পানিদূষণ রোধ করা অনেকটা সহজ হয়।

১. পুকুরের পাড়ে বা খোলা জায়গায় মলমূত্রে ত্যাগ বন্ধ করতে হবে।

২. ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে গর্ত করে মাটিচাপা দিতে হবে।

৩. অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৪. যেকোনো রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড় পুকুরের পানিতে না ধোয়া।

৫. পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

৬. কলকারখানার বর্জ্য পরিকল্পিত উপায়ে পরিশোধিত করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ য পর প ক ব শ দ ধকরণ র জন য প ন নদ র প ন আর স ন ক ব যবহ র পদ র থ ভ ত হয়

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে

দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্‌-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।

ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে