উৎসব এলেই একদিকে যেমন ডিজিটাল বিকিকিনি বাড়ে, অন্যদিকে তেমনি প্রতারণার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হুটহাট অজানা কলে বিভ্রান্ত করে তৈরি করা হয় ডিজিটাল ফাঁদ। উদ্দেশ্য, কীভাবে ডিজিটাল তথ্য হাতিয়ে টার্গেটকে ক্ষতির দিকে টেনে নেওয়া যায়। এমন স্পুফিং কল নিয়ে লিখেছেন সাব্বিন হাসান
বিদেশি বা অচেনা কোনো নম্বর থেকে ফোনকল দৃশ্যমান হলে কলার আইডিতে নিজ দেশের বাইরে সাধারণত (+) সাইন ও বিশেষ কোড সামনে আসে। অনেকের কাছেই আজকাল এমন ফোনকল আসার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
দেশের বাইরের কোনো কোড, যা থেকে বোঝা যায়, ওই নম্বর কোন দেশের, অনেক সময়ে বিশেষ ক্যাটেগরির আইপি নম্বর থেকেও ফোন আসে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদেশি কোনো জায়গা থেকে ফোন করে প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলার কৌশল নেয়। আবার কখনও অনলাইন গেম, কখনও লটারি জয়ের প্রতিশ্রুতি, অযাচিত ভুয়া হুমকি বা কোনো না কোনো অজুহাতে ফোনকল করা হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কয়েকটি দেশের সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি হলে আদৌ কী করা উচিত, তা জানা থাকা জরুরি।
বিদেশি নম্বর
কললিস্টে +৮৮ নম্বরের বদলে + ১, + ৮৭, + ৯৭ এমন নম্বর থেকে মোবাইলে কল আসতে পারে। এমন কল স্ক্রিনে দৃশ্যমান হলে প্রথমে তা রিসিভ না করার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। সতর্কতা হিসেবে কলার আইডি অ্যাপ থেকে আগন্তুক নম্বরটি যাচাই করে নিতে হবে। ধারণা পেতে হবে কলটি কোন দেশের কোড নম্বর। ঠিকঠাক বুঝে নিতে হবে নিজের পরিচিত বা দূরের আত্মীয়ের কাছ থেকে এমন নম্বরে ফোনকল আসতে পারে কিনা। অর্থাৎ সন্দেহ হলে কল না ধরাই উত্তম।
অনেক সময় এমন সন্দেহজনক কোনো নম্বর থেকে মিসড কলের আশ্রয় নিতে পারে প্রতারক চক্র। উদ্দেশ্য যেন ফিরতি কল ব্যাক করা হয়। এমন নম্বরে ফোনকল করলে দেখবেন, নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অজান্তেই নিয়ম ব্যতিরেকে বাড়তি টাকা চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হয়েছে। কারণ, ওই সব নম্বর প্রিমিয়াম ক্যাটেগরিভুক্ত। তাই সন্দেহ হয় এমন নম্বরে ফিরতি কল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কল স্পুফিং কী
বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র হয়তো দেশে বসেই ‘কল স্পুফিং’ পদ্ধতিতে বোকা বানানোর কৌশল করে। অর্থাৎ প্রতারক হয়তো রাজধানী বা দেশের কোথাও বসে টার্গেটকে ফোন করছে। কিন্তু নিজের কাছে এমন ফোনকল এলে তাৎক্ষণিক ধারণা হওয়াটা স্বাভাবিক যে কলটি বিদেশি কোনো নম্বর থেকে আসছে। প্রতারক চক্র টার্গেটকে ধরাশায়ী করতে বহুমুখী আর ছদ্মবেশী কৌশলের আশ্রয় নেয়।
সন্দেহজনক নম্বর থেকে ফোন করে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে লটারি জিতেছেন বা বিদেশ থেকে কোনো বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে দামি উপহার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথা বলা হতে পারে। খেয়াল রাখবেন, লোভের ফাঁদে পা না দেওয়াই উত্তম। কারণ, বিষয়টি পুরোপুরি ফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়।
ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে আজকাল যেসব প্রতারণা চলছে, বিশেষ ক্ষেত্রে কল স্পুফিং পদ্ধতির ব্যবহার এখন লক্ষণীয়। ওপাশ থেকে বলবে, আপনার নামের পার্সেল বিদেশে আটকে দেওয়া হয়েছে। ঠিক সে কারণেই অনলাইনে তাৎক্ষণিক প্রশ্নোত্তর করতে হবে। আগন্তুক সেসব নম্বর থেকে এমন ফোনকল আসতে পারে। ভয় না পেয়ে তখন ঠান্ডা মাথায় ভেবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
আবার সেক্সটরশনের মতো প্রতারণার উদ্দেশ্যে চক্রটি বিদেশি কোড নম্বরের আশ্রয় নিতে পারে। খটকা লাগলে বা উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরে www.
কলের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া চক্র সাধারণত উৎসবকে লক্ষ্য করে বিশেষ পরিকল্পনা করে।
কারণ, ওই সময়ে ক্রেতাদের নানামুখী ব্যস্ততা থাকে। তাই সব কলকে ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। সুতরাং উৎসবের সময় ডিজিটাল গ্রাহকদের সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।