সৌদির নতুন হজ ব্যবস্থাপনা কতটা কার্যকর
Published: 25th, March 2025 GMT
হজ খুব ব্যয়বহুল ইবাদত। হজে প্রচণ্ড ভিড় হয় এবং সেখানে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ফলে অনেকেই অভিযোগ করেন যে, সৌদি সরকার হজের অভিভাবক হিসেবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে কোরআন ও ইসলামি শিক্ষা অনুসারে মুসলমানদের ধৈর্য ধারণ করার বিকল্প নাই। একই সঙ্গে হজ পালনের সময় আসা অনিবার্য চ্যালেঞ্জ ও কষ্ট সম্পর্কে অভিযোগ না করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন
হজ এমন একটি ইবাদত, যা প্রত্যেক সক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জীবনে একবার করা ফরজ। এটা যেমন অনন্য ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, একই সঙ্গে মানসিক, আবেগীয় ও শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জিং একটি ইবাদত। ফলে নানান দিকে বিবেচনা করে সৌদি আরব হজের নিয়মে নতুন কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যদিও নতুন এই নিয়ম দেশের ভ্রমণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে তারা ২০২৫ সালের হজের জন্য নতুন বুকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করছে, যা আগামী জুনের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। এসব পরিবর্তন প্রথমদিকে কিছুটা বিভ্রান্তিকর মনে হলেও, বাস্তবতা হলো—এগুলো শুধু যৌক্তিকই নয়, বরং ২০২৪ সালের ব্যাপক প্রাণহানির পর অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
২০২৪ সালের হজের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল তীব্র গরম, তবে অনুমতি ছাড়া বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীর উপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছিল। মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, সৌদি সরকার এখন নতুন নীতিমালা কার্যকর করছে, যার অধীনে ১৪টি এশীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মুসলমানদের জন্য ভ্রমণের সময়সীমা এক বছর থেকে কমিয়ে ৩০ দিনে সীমিত করা হয়েছে, যাতে অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারের পরিমাণ হ্রাস পায়।
আরও পড়ুনহজ করতে গিয়ে মক্কা মদিনায় হারিয়ে গেলে কী করবেন০৮ মে ২০২৪নিরাপত্তা বেড়েছে, চ্যালেঞ্জ আছে
সৌদি ভিসা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, অতীতে বহু মানুষ একাধিক ভিসা ব্যবহার করে সৌদি আরবে প্রবেশ করতেন এবং পরে অবৈধভাবে হজ পালন করতেন। ফলস্বরূপ, এটি ব্যাপক ভিড় ও নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করত বলে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে জানানো হয়।
এই বছর আরেকটি নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, যেখানে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের হজে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি ভিড় কমানোর পাশাপাশি শিশুদের এমন পরিবেশ থেকে দূরে রাখার জন্য যেখানে বিপুল জনসমাগমের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট বিধি মেনে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে হয়।
পরিবর্তন কতটা যৌক্তিক
ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা সাবা তারিক জানান, তার স্বামী ও উভয় পরিবারের বোনদের নিয়ে হজ সম্পন্ন করেন। তবে তারিক তার কিশোর সন্তানদের বাড়িতেই রেখে যান। তিনি বলেন, ‘হজ শিশুদের এবং বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত কঠিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে এক পরিবার ছিল, যেখানে দাদা-দাদি ও ৮-১০ বছর বয়সী শিশুরা ছিল। মুজদালিফা, প্রচণ্ড গরমের কারণে সেই পরিবারের দাদা মারা যান। বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য চরম গরম ছিল ভয়ানক কষ্টকর।’
তবে সবাই এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকে না। অনেক বাবা-মা চাইলেও তাদের সন্তানদের রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না, আবার কেউ কেউ চান পরিবারসহ হজ পালন করতে।
নিঃসন্দেহে এই নতুন নিয়মকানুন কিছুটা কষ্টকর। তবে হজ এমন একটি ইবাদত, যা কখনোই সহজ ছিল না। সৌদি সরকার ক্রমাগত হজের বিভিন্ন অংশের লজিস্টিকস উন্নত করার চেষ্টা করছে এবং নতুন নিয়ম চালু করছে, যাতে এটি আরও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ হয়। একদিকে এটি মুসলিমদের জন্য একটি অনন্য, আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ, অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে এটি অত্যন্ত ক্লান্তিকর এবং চ্যালেঞ্জিং এক ধর্মীয় দায়িত্ব।
সূত্র: রিলিজিওন নিউজ
আরও পড়ুনহজ ২০২৫: কোন প্যাকেজে কত খরচ৩০ অক্টোবর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য পর ব র নত ন ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।