আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। অসংখ্য মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
স্বাধীনতার এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই বীর সন্তানদের, যাঁরা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ধীরে ধীরে একটি জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের সংবিধানেও সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও যে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, সে কথা মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও স্বীকার করেছেন। এর পেছনে আর্থসামাজিক বৈষম্য ও সুশাসনের ঘাটতি যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাও। স্বাধীনতার পর থেকে যেসব রাজনৈতিক দল দেশশাসনের ভার নিয়েছে, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, পূর্বাপর সরকার জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছে। নিকট অতীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণের পাশাপাশি দেশে দুর্নীতি ও লুটপাটের শাসন কায়েম করেছিল। এর পরিণতি হলো ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানেরও মূল লক্ষ্য ছিল দেশে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা। কিন্তু গত সাড়ে সাত মাসে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। যেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, তা থেকে এর অংশীজনেরা ক্রমেই দূরে সরে গেছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে বিভেদ প্রকট হয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক শাসনকে মজবুত করতে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। বেশির ভাগই জাতীয় স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখছে।
এরপরও আমরা আশা করতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা চলছে, তা দূর করার ক্ষেত্রে অবিলম্বে নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। গণতন্ত্রে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত কথা। এ ক্ষেত্রে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বাক্স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ করার ক্ষেত্রে যেসব আইনি বাধা আছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। একটি কার্যকর ও টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইলে সংবিধানে বর্ণিত প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার হোক বিভেদ নয়, ঐক্য; বিদ্বেষ নয়, সম্প্রীতিই হোক বাংলাদেশের মানুষের সামনে চলার সোপান। স্বাধীনতা দিবস সবার জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক স ব ধ নত র জন ত ক দ র জন ত ক জনগণ র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।
সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।
সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।