মৌলভীবাজার পৌরসভা প্রাঙ্গণে পুকুরপাড়ে ২০২৩ সালে এই কদমফুল প্রথম দেখি। কানাডাপ্রবাসী বৃক্ষপ্রেমী নুরুর রহমান গাছটি সেখানে লাগিয়েছিলেন। ছোট গাছেই ফুল দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম। ২০২৪ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষাকৃত বড় গাছে ফুল দেখি। সেখানে এই কদমের কয়েকটি গাছ আছে। গাছগুলো রোপণ করেন ক্রপ বোটানি বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি থাইল্যান্ড থেকে এ গাছ সংগ্রহ করলেও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ গ্রন্থের তথ্যমতে, গাছটি পার্বত্য চট্টগ্রামে আগেই রেকর্ডকৃত। তবে গ্রন্থে মুদ্রিত ছবিটি বিভ্রান্তিকর এবং অস্পষ্ট। তাতে কোনো স্থানীয় নামও উল্লেখ নেই। অগত্যা গাছটিকে ‘গিরিকদম’ বা ‘পাহাড়ি কদম’ নামে সম্বোধন করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে গত তিন দশকেও পাহাড়ে গাছটি চোখে পড়েনি।
সাধারণ কদমের মতো গিরিকদমও (Nauclea orientalis) মূলত ফুলের জন্যই বিখ্যাত। এই কদমের ফুল-ফল-পাতা সাধারণ কদম থেকে কিছুটা আলাদা। সামগ্রিক আকৃতি ও আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এই গাছ কোথাও কোথাও ‘লেইচহার্ড পাইন’ নামে পরিচিত। পত্রমোচি এই গাছ সর্বোচ্চ ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা, পুরু, চওড়া ও ঘনবদ্ধ। বিন্যাস বিপরীত, প্রায় ৭ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৪ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার চওড়া। ওপরের পিঠ চকচকে সবুজ। নিচের দিকে সুস্পষ্ট হলুদ শিরা আছে। বাকল ধূসর থেকে লালচে বাদামি এবং মসৃণ বা ফাটলযুক্ত। ফল দেখতে অনেকটা গাছ–আলুর মতো, গা অমসৃণ, এবড়োখেবড়ো।
ছোট ছোট সুগন্ধি ফুলগুলো নলাকার, হলুদ থেকে কমলা রঙের এবং সাদা পুংকেশরযুক্ত। অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে একাধিকবার এই ফুল ফোটে। অস্ট্রেলিয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং ফিলিপাইনে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ফুল ফোটে। সাধারণ কদমের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোটো এই ফুল। তবে গড়নের দিক থেকে অভিন্ন ও সুগন্ধি। অসংখ্য ফুলের সমারোহে গিরিকদম দেখতে সোনালি রঙের টেনিস বলের মতো।
ফুল ফোটার তিন মাস পর ফুলের মাথাগুলো একটি মাংসল গোলাকার ও একই সঙ্গে বহুবিধ বীজযুক্ত ফলে পরিণত হয়। এগুলোর ব্যাস প্রায় দেড় থেকে দুই ইঞ্চি, রুক্ষ, কুঁচকানো, বাদামি এবং তীব্র সুগন্ধযুক্ত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিরিকদম ফল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তার কাজে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বাঁশের বেড়া দিয়ে আধা কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছেন জহিরাবাদ ইউনিয়নের নেদামদী মাথাভাঙ্গাসহ ১০ গ্রামের মানুষ।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান, ৫০ বছর পর উপজেলা প্রশাসন থেকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জামতলা মজুমদার বাড়ি হতে তপাদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য এক লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
রাস্তাটির কাজ শুরু হওয়ার পর গত শনিবার (১৪ জুন) মজুমদার বাড়ির ইব্রাহীম মজুমদার, রফিক মুন্সী, ওচমান ও ওমর মজুমার গংরা বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে রাস্তাটি সংস্কার কাজ অব্যাহত রাখার দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মানববন্ধন করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, মজুমদার বাড়ির ইব্রাহীম মজুমদার, রফিক মুন্সী, ওচমান ও ওমর মজুমার গংরা শনিবার রাস্তার কাজ শুরু হওয়া দেখে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে চলে যায়।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, আধা কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় দশ গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে নেদামদী-মাথাভাঙ্গা গ্রামের বাহিরে ইউনিয়নের দক্ষিণ এখলাছপুর, বরইকান্দী, বালুয়াকান্দি, কাজিকান্দি, আমিনপুর, হাশেমপুর, নয়াকান্দি গ্রামে বাসিন্দারা ব্যবহার করে আসছে। জহিরাবাদ ইউনিয়নের বরইকান্দি থেকে পাঁচানি সড়ক প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। অথচ এই রাস্তাটির দুই পাশে পাকা সড়ক ও আধা কিলো মিটার কাঁচা।
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সিকদার বলেন, “৫০ বছর আগ থেকে রাস্তাটা চালু। ১৭/১৮ বছর ধরে রাস্তার বরাদ্দ পায়। আক্কাছ চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে শুধু বলে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দটা কোনদিকে যায় বুঝতে পারি না। এখন বরাদ্দ এসেছে আস্তে আস্তে কাজ শুরু হলো। আমরা এতোগুলো পরিবার একটা গাড়ি নিয়ে যেতে পারি না। এখন রাস্তাটা বেড়া দিয়ে রেখেছে। আমরা চাই রাস্তাটা হোক।”
প্রবাসী ফয়েজ আহমেদ বলেন, “মালয়েশিয়া থাকি। তিনমাস পর পর আসি। রাস্তাটাকে সরকারিভাবে সংস্কার করতে চাচ্ছে। বিশেষ করে মজুমদার বাড়ির ওরা ষড়যন্ত্র করে রাস্তাটি করতে দিচ্ছে না। বিদেশ থেকে এলে মালামাল কাঁধে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হয়।”
ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে জহিরুল ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের পর উপজেলা প্রশাসনের কাছে একটি আবেদন করেছি। বরাদ্দ পেয়ে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছি। রাস্তা হওয়ার খবরে সবার মাঝে খুশির বার্তা বয়ে যায়। অথচ কাজের তিন দিন না যেতেই মজুমদার বাড়ির লোকজন রাস্তাটিতে বেড়া দিয়ে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করেছে।”
মজুমদার বাড়ির ইব্রাহীম মজুমদার বলেন, “আমরা ঢাকায় থাকি। হাঁটাচলার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকু রাস্তা সেখানে রয়েছে। কিন্তু ওনারা সেখান দিয়ে হাতি-ঘোড়ার মত গাড়ি ঘোড়া নিতে চায়। এটা হতে দেওয়া যায় না। তাই আমাদের পৈতৃক জমিতে যেন বেশি ঘেঁষতে না পারে, সেজন্যই আমরা বেড়া দিয়েছি।”
ইউপি সদস্য ও প্রকল্পের সভাপতি রোকেয়া বেগম জোসনা বলেন, “মজুদার বাড়ি থেকে তপাদার বাড়ির রাস্তাটি নির্মাণাধীন। হঠাৎ করে দুই দিন ধরে একটা পরিবার বেড়া দিয়ে রেখেছে। এখন তাদেরকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাস্তাটি করতে হবে।”
মতলব উত্তরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজটি শেষ করতে স্থানীয়দের নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়া ফৌজদারী অপরাধ।”
ঢাকা/অমরেশ/এস