Samakal:
2025-07-31@22:02:11 GMT

তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে...

Published: 26th, March 2025 GMT

তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে...

বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে শ্রদ্ধা ও সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম সন্‌জীদা খাতুন। দেশের এই অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন কয়েকজন গুণী তারকাশিল্পী।

ফেরদৌস আরা

‘সন্‌জীদা খাতুন, যাঁকে আমরা চিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে প্রিয় সেই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই।’ গতকাল বিকেলে এই দুঃসংবাদ কানে আসতেই পুরোপুরি থমকে গিয়েছি। প্রকৃতি নিয়মে আমরা সবাই চলে যাব, চলে যেতে হয়, তারপরও এই বিদায়-সংবাদ ছিল অবিশ্বাস্য। এও সত্যি, মৃত্যু চিরন্তন জেনেও কারও চলে যাওয়া কেন জানি মেনে নিতে পারি না। সন্‌জীদা খাতুন যে কত বড় মাপের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, তা আসলে স্বল্প কথায় বোঝানো যাবে না। এটি ঠিকই উপলব্ধি করা যাবে যে, তিনি শূন্যতা তৈরি করে গেলেন। রবীন্দ্রসংগীত তো অনেকে গান, যাদের গায়কী শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। আমার জীবদ্দশায় এখানে আর কোনো রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর দেখা পাইনি, যার সঙ্গে সন্‌জীদা খাতুনের তুলনা করা যায়। নিজেও যেমন অসাধারণ শিল্পী ছিলেন, তেমনি যারা ভালো গায় তাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করতেন। আমিও সেই ভাগ্যবানদের একজন, যে সন্‌জীদা খাতুনের স্নেহের ছায়াতলে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম। এখনও মনে পড়ে কলেজজীবনের সেই অনুষ্ঠানটির কথা, যেদিন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। হেসে বলেছিলেন, ‘তুমি যখন এত ভালো গাও, তাহলে নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত গাইলেই তো পারো।’ তাঁর এ কথাটাই শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে দারুণভাবে প্রেরণা জুগিয়েছিল। তারপরও কেন জানি রবীন্দ্রসংগীতটা নিয়মিত গাওয়া হয়ে ওঠেনি। পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহী কবির সৃষ্টির প্রেমে পড়ে নজরুলসংগীতের সাধনাই করে গেছি। 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

সন্জীদা খাতুন আমাদের সংস্কৃতি জগতের মহিরুহ ছিলেন। এখন ক্রান্তিকাল চলছে। এই সময়ে তাঁর চলে যাওয়ায় হতাশার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা। তাঁর থাকাটা আমাদের জন্য একটি জোরের জায়গা ছিল। যে কোনো পরামর্শে এ মানুষটিকে আমরা কাছে পেতাম। তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁকে যারা অনুসরণ করতেন, তাদের কাছে তিনি ব্যক্তি নন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। সবদিক থেকেই অনুসরণীয় একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর আত্মা শান্তি পাক– এটাই চাওয়া। 

মামুনুর রশীদ

বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। এ মানুষটিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম একটি যুগলবন্দি হিসেবে– ওয়াহিদুল হক এবং সন্জীদা খাতুন। তারা ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছায়ানটের প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল সবসময়ই। ১৯৬৬ সাল থেকে তারা রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন। শুধু রবীন্দ্রসংগীত চর্চা নয়, রবীন্দ্রচর্চাও করে গেছেন আজীবন। এ দেশে রবীন্দ্রচর্চায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা আপা। দেশের সংস্কৃতিতে যে ধরনের প্রগতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে, তার মধ্যে সন্জীদা আপা সবসময় থাকতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের যোগ্য কন্যা তিনি। সন্জীদা আপার বাবা নজরুলের বন্ধু ছিলেন। ছোটবেলা থেকে যে আবহে তিনি বড় হয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটা অক্ষুণ্ন ছিল। সন্জীদা খাতুনের মতো এ ধরনের একজন মানুষের আবার জন্ম নেওয়া শতবর্ষের ব্যাপার। যখনই কোনো প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম, তিনি খুব ইতিবাচকভাবে দেখতেন। কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হতো। আবার পরক্ষণেই তা ঠিক হয়ে যেত। তিনি রেখে গেলেন অনেক কিছু। তাঁর সৃষ্টিকর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন। একজন সন্জীদা খাতুনের চিরবিদায় মানেই উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্কের নিভে যাওয়া। এই মহারথীর জীবনের সমাপ্তি প্রশান্তির হোক– এটাই আমার চাওয়া।

রামেন্দু মজুমদার

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন অর্থাৎ ১৯৬১ সাল থেকে সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে আমার পরিচয়। দীর্ঘদিন তিনি বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে গেছেন। তৈরি করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো ‘ছায়ানট’। এসবের মধ্য দিয়ে শুদ্ধসংগীতের প্রচার এবং আমাদের প্রগতিশীল ধ্যানধারণা, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার ভূমিকা– সব মিলিয়ে তিনি আমাদের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর শূন্যতা দীর্ঘদিন অনুভূত হবে। সব কাজেই তিনি গম্ভীর এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন। তিনি কোনো রকম আপস করতেন না। যাই করা হোক না কেন, তিনি চাইতেন সবচেয়ে ভালো কাজ।

আতাউর রহমান

আমি তাকে মিনু আপা বলে ডাকতাম। মিনু আপা নেই– ভাবতেই পারছি না। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন আমাকে। তখন আমি বললাম, আমি তো গানের লোক নই, আমাকে কেন এর সাধারণ সম্পাদক বানানো হলো। মজা করে তাঁকে বললাম, আমাকে কী ভাড়াটিয়া হিসেবে বানানো হলো? সন্জীদা খাতুন একজন জ্ঞানী, সুগায়িকা ও সংগঠক ছিলেন। এই তিনটি গুণকে তিনি সমন্বিত করেছিলেন। এই মানুষটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পরিচয়। তিনি খুব কঠোর ছিলেন। কাজের বিচ্যুতি পছন্দ করতেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত হয় ছ ল আম দ র ছ য় নট করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও