Samakal:
2025-11-02@21:46:37 GMT

তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে...

Published: 26th, March 2025 GMT

তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে...

বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে শ্রদ্ধা ও সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম সন্‌জীদা খাতুন। দেশের এই অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ ও ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন কয়েকজন গুণী তারকাশিল্পী।

ফেরদৌস আরা

‘সন্‌জীদা খাতুন, যাঁকে আমরা চিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে প্রিয় সেই মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই।’ গতকাল বিকেলে এই দুঃসংবাদ কানে আসতেই পুরোপুরি থমকে গিয়েছি। প্রকৃতি নিয়মে আমরা সবাই চলে যাব, চলে যেতে হয়, তারপরও এই বিদায়-সংবাদ ছিল অবিশ্বাস্য। এও সত্যি, মৃত্যু চিরন্তন জেনেও কারও চলে যাওয়া কেন জানি মেনে নিতে পারি না। সন্‌জীদা খাতুন যে কত বড় মাপের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, তা আসলে স্বল্প কথায় বোঝানো যাবে না। এটি ঠিকই উপলব্ধি করা যাবে যে, তিনি শূন্যতা তৈরি করে গেলেন। রবীন্দ্রসংগীত তো অনেকে গান, যাদের গায়কী শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। আমার জীবদ্দশায় এখানে আর কোনো রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর দেখা পাইনি, যার সঙ্গে সন্‌জীদা খাতুনের তুলনা করা যায়। নিজেও যেমন অসাধারণ শিল্পী ছিলেন, তেমনি যারা ভালো গায় তাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করতেন। আমিও সেই ভাগ্যবানদের একজন, যে সন্‌জীদা খাতুনের স্নেহের ছায়াতলে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম। এখনও মনে পড়ে কলেজজীবনের সেই অনুষ্ঠানটির কথা, যেদিন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। হেসে বলেছিলেন, ‘তুমি যখন এত ভালো গাও, তাহলে নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত গাইলেই তো পারো।’ তাঁর এ কথাটাই শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে দারুণভাবে প্রেরণা জুগিয়েছিল। তারপরও কেন জানি রবীন্দ্রসংগীতটা নিয়মিত গাওয়া হয়ে ওঠেনি। পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহী কবির সৃষ্টির প্রেমে পড়ে নজরুলসংগীতের সাধনাই করে গেছি। 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

সন্জীদা খাতুন আমাদের সংস্কৃতি জগতের মহিরুহ ছিলেন। এখন ক্রান্তিকাল চলছে। এই সময়ে তাঁর চলে যাওয়ায় হতাশার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা। তাঁর থাকাটা আমাদের জন্য একটি জোরের জায়গা ছিল। যে কোনো পরামর্শে এ মানুষটিকে আমরা কাছে পেতাম। তিনি ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁকে যারা অনুসরণ করতেন, তাদের কাছে তিনি ব্যক্তি নন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। সবদিক থেকেই অনুসরণীয় একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর আত্মা শান্তি পাক– এটাই চাওয়া। 

মামুনুর রশীদ

বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন সন্‌জীদা খাতুন। এ মানুষটিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম একটি যুগলবন্দি হিসেবে– ওয়াহিদুল হক এবং সন্জীদা খাতুন। তারা ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছায়ানটের প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল সবসময়ই। ১৯৬৬ সাল থেকে তারা রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন। শুধু রবীন্দ্রসংগীত চর্চা নয়, রবীন্দ্রচর্চাও করে গেছেন আজীবন। এ দেশে রবীন্দ্রচর্চায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা আপা। দেশের সংস্কৃতিতে যে ধরনের প্রগতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে, তার মধ্যে সন্জীদা আপা সবসময় থাকতেন। কাজী মোতাহার হোসেনের যোগ্য কন্যা তিনি। সন্জীদা আপার বাবা নজরুলের বন্ধু ছিলেন। ছোটবেলা থেকে যে আবহে তিনি বড় হয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেটা অক্ষুণ্ন ছিল। সন্জীদা খাতুনের মতো এ ধরনের একজন মানুষের আবার জন্ম নেওয়া শতবর্ষের ব্যাপার। যখনই কোনো প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম, তিনি খুব ইতিবাচকভাবে দেখতেন। কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হতো। আবার পরক্ষণেই তা ঠিক হয়ে যেত। তিনি রেখে গেলেন অনেক কিছু। তাঁর সৃষ্টিকর্ম তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে আজীবন। একজন সন্জীদা খাতুনের চিরবিদায় মানেই উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্কের নিভে যাওয়া। এই মহারথীর জীবনের সমাপ্তি প্রশান্তির হোক– এটাই আমার চাওয়া।

রামেন্দু মজুমদার

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন অর্থাৎ ১৯৬১ সাল থেকে সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে আমার পরিচয়। দীর্ঘদিন তিনি বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা চালিয়ে গেছেন। তৈরি করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো ‘ছায়ানট’। এসবের মধ্য দিয়ে শুদ্ধসংগীতের প্রচার এবং আমাদের প্রগতিশীল ধ্যানধারণা, মুক্তিযুদ্ধ সময়কার ভূমিকা– সব মিলিয়ে তিনি আমাদের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর শূন্যতা দীর্ঘদিন অনুভূত হবে। সব কাজেই তিনি গম্ভীর এবং দৃঢ়চেতা ছিলেন। তিনি কোনো রকম আপস করতেন না। যাই করা হোক না কেন, তিনি চাইতেন সবচেয়ে ভালো কাজ।

আতাউর রহমান

আমি তাকে মিনু আপা বলে ডাকতাম। মিনু আপা নেই– ভাবতেই পারছি না। রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন আমাকে। তখন আমি বললাম, আমি তো গানের লোক নই, আমাকে কেন এর সাধারণ সম্পাদক বানানো হলো। মজা করে তাঁকে বললাম, আমাকে কী ভাড়াটিয়া হিসেবে বানানো হলো? সন্জীদা খাতুন একজন জ্ঞানী, সুগায়িকা ও সংগঠক ছিলেন। এই তিনটি গুণকে তিনি সমন্বিত করেছিলেন। এই মানুষটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই পরিচয়। তিনি খুব কঠোর ছিলেন। কাজের বিচ্যুতি পছন্দ করতেন না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত হয় ছ ল আম দ র ছ য় নট করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির