ভোর ৫টা ৪০ মিনিট। দিনমজুর নন্দরানী দাঁড়িয়ে ছিলেন সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উল্টো দিকে সড়কে পাশে। কাজের জন্য গাইবান্ধা থেকে সাভারে এসেছেন তিনি। কথা বলার একপর্যায়ে নন্দরানী বলেন, ‘যা আয় করি; ঋণ শোধ করি, খাই। গরিব মানুষের কত জ্বালা, বুঝেন না? অন্য দেশ (অন্য জেলা) থিকা এখানে আইসা কাজ করি। কাজ না পাইলে চলুম কেমনে।’

নন্দরানীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও আট থেকে দশজন। তাঁদের সঙ্গে মাটি কাটার কোদাল, ঝুড়ি। সবাই যাবেন স্মৃতিসৌধসংলগ্ন পদচারী–সেতুর (ফুটওভার) নিচে। অনেকের কাছে এটি মানুষের শ্রম বেচাকেনার হাট হিসেবে পরিচিত। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুসারে কেউ চুক্তি করে কাজে নিয়ে গেলেই আজকের জন্য আয়ের পথ খুলবে তাঁদের।

ওই শ্রমিকদের একজন নীলমণি। তিনিও এসেছেন গাইবান্ধা থেকে। নীলমণি বলেন, ‘চার বছর ধইরা কাজ করি। কেউ ১০ বছর, কেউ ২০ বছর ধইরা কাজ করে। এমনিতে দিনে ৬০০ টাকা হয়। ঈদ বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাও পাওয়া যায়। এই দিয়া চলি।’

ওই শ্রমজীবীরা জানান, সাধারণত ছয়টার সময় পদচারী–সেতুর নিচে কাজ খোঁজার স্থানে যান তাঁরা। কোনো কোনো সময় সাতটা–আটটার দিকেও যান। কথার এক পর্যায়ে স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন কি না, জানতে চাওয়া হয় তাঁদের কাছে। তখন রওশন নামের একজন বলেন, ‘ফুল আপনেরা দিবেন। গরিব মাইনসের জন্য এটা না। যারা রাজনীতি করে তারা দিবো ফুল। আমাগো এক দিন বইয়া থাকলেই লস।’

একই এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যাপ প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া থেকে ম্যাক্সিতে করে নবীনগরে ক্যাপ তৈরির একটি কারখানার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। ভোর পাঁচটার দিকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিরাপত্তার স্বার্থে আটকে দেওয়া হয় তাঁদের। গাড়ি থেকে নেমে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। সময় ভোর ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে পুলিশ সদস্যরা ওই শ্রমিকদের যেতে দিলে হেঁটে তাঁরা কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘মালিকের অনেক টাকা লস হইয়া যায়। এইটা তো আমাগোও দেখা লাগে। সারা বছর কর্ম কইরা খাই। সামনে শিপমেন্টও আছে। মালিক জোর করে নাই। আমরা যদি কাজে না যাইতাম, মালিক কিছুই কইত না। কাজ না থাকলে অবশ্যই স্মৃতিসৌধে যাইতাম।’

সকাল ৬টা ৪৬ মিনিট। ইতিমধ্যে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলে গেছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। ওই সময়ে স্মৃতিসৌধের ফটকের পাশে পদচারী–সেতুর নিচে মাটি কাটার কোদাল, ঝুড়ি পাশে রেখে আজকের দিনের আয়ের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় নন্দরানী-নীলমণিদের।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা

বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। অভিনয়ে তাকে দেখা না গেলেও নিজের ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে তাকে প্রায়ই দেয়া যায়। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তিন। অবশ্য এবিষয়ে টুঁশব্দও করেননি এই অভিনেত্রী।

এদিকে মাস তিনেক আগে কংগ্রেসের পক্ষ অভিযোগ তোলা হয়েছিল, প্রীতি জিনতার ১৮ কোটি টাকার ঋণ নাকি মকুফ করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শুধু তাই নয়, প্রীতি নাকি তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপির হাতে সঁপে দিয়েছেন- এমন অভিযোগও ওঠে। এরপর বলিউড নায়িকার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়।

সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে প্রীতি জিনতাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দেবেন? আপনার গত কয়েক মাসের টুইট দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের এটাই একটা সমস্যা। সবাই এত বিচার করতে বসে যান সবকিছু নিয়ে। আমি যেমনটা আগে বলেছি, মন্দিরে, মহাকুম্ভে যাওয়া কিংবা নিজের পরিচয় নিয়ে আমি গর্বিত। তার মানে এই নয় যে এসমস্ত কারণে আমি বিজেপিতে যোগ দেব।’

প্রীতি বলেন, ‘ভারতের বাইরে থাকার ফলে আমি দেশের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং আর পাঁচজন ভারতীয়র মতোই গর্ববোধ করি আমার দেশকে নিয়ে।’

রাজনীতিতে না আসার কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জানিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা। সেসময় তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল আমাকে টিকিট দিতে চেয়েছে। এমনকি রাজ্যসভার আসনের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে আমি বিনম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার ইচ্ছে নেই। আর আমাকে ‘সৈনিক’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। কারণ, আমি একজন আর্মি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সৈনিক এবং আমার দাদাও। আর্মি পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমাদের মানসিকতা খানিক আলাদা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় কিংবা হিমাচলী বা বাঙালি বলে ভাবি না, আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ভারতীয়। আর হ্যাঁ, দেশভক্তি আমাদের রক্তে।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
  • একাধিক সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • সুযোগ পেয়েও কেন রাজনীতিতে জাড়াননি প্রীতি জিনতা
  • রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা