মাদারীপুরে ভূমি জটিলতায় হয়নি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর
Published: 26th, March 2025 GMT
মাদারীপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করলেই এ আর হাওলাদার জুট মিলের কথা উঠে আসে। কারখানাটির ভেতরে জেলার বৃহৎ বধ্যভূমি বা গণকবর। একাত্তরে প্রায় ৭০০ নারী-পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। এক দশক আগে এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ভূমি জটিলতায় কাজটি বাতিল হয়ে যায়। এখন স্থানটি গবাদিপশুর চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে সুনসান নীরবতা। বেশির ভাগ ঝোপঝাড়ে ভরা। বড় বড় কিছু খেজুর ও নারকেলগাছ দেখা যায়। কারখানার বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। গণকবরের স্থানটির চারপাশ অরক্ষিত। গরু-ছাগলের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাদারীপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাদারীপুরের বৃহৎ বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত এ আর হাওলাদার জুট মিলে জাদুঘর নির্মাণের স্থান নির্বাচন করে কর্তৃপক্ষ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ‘এ আর হাওলাদার জুট মিল জেনোসাইড এবং টর্চার সেল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় মেসার্স জনি আলম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু স্থানটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হওয়ায় জাদুঘরের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেননি ঠিকাদার। পরে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।
এলজিইডির মাদারীপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো.
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার কুকরাইল মৌজার এ আর হাওলাদার জুট মিলের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় অগণিত নারীকে। কারখানার ভেতরে তাঁদের গণকবর দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মূলত কারখানায় বাহিনীটির ঘাঁটি ছিল। এখানে তারা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করত। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হলে সেখানে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়।
মাদারীপুর সদরে সাতটি ও রাজৈরে আটটি গণকবর বা বধ্যভূমি আছে। এর মধ্যে হাওলাদার জুট মিলের বধ্যভূমিটি সবচেয়ে বড়। কারখানার ডি-টাইপ ভবনের টর্চার সেলে অসংখ্য নারীকে মাসের পর মাস আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শহীদ সুফিয়ার পরিবার অন্যতম। এ ছাড়া হাজারো বাঙালিকে কারখানার উত্তর পাশে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে দাঁড় করে ব্রাশফায়ার করে নদে ফেলে দেওয়া হয়। তাঁদের অধিকাংশই পূর্ব মাদারীপুরের (শরীয়তপুর) বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন।
কুকরাইল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিল ১২ বছর। কারখানার ভেতরের অনেক কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। কারখানার ভেতরে বসে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধের সময় মিলটিই পাক বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এখানে বহু মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধের পরেও বহু বছর ভয়ে এখানে কেউ আসত না। এখন মিলের বেশির ভাগ জায়গা ঝোপঝাড়ে ভরা জঙ্গল। যুদ্ধের কোনো স্মৃতিই এখন এখানে নাই। যেখানে গণকবর ছিল, সেই জায়গাটির বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সংস্কার না হলে যা আছে, তা-ও ভবিষ্যতে থাকবে না।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারের অবহেলাকে দায়ী করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ আর হাওলাদার জুট মিলের বধ্যভূমিটি দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। কয়েক বছর ধরে সেখানে জাদুঘর করার কথা বললেও বাস্তবে করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ আছে। তবে এবার তাঁরা ওখানে নতুন করে স্মৃতি জাদুঘর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ভূমি জটিলতা থাকলেও সমাধান করে জাদুঘর করা হবে। বিষয়টি প্রশাসনের লোকজন নিশ্চিত করেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ দ ঘর ন র ম ণ র প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এলএনজি আমদানি: ব্যয় হবে ১৬২০ কোটি ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা
দেশের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে গত কয়েক বছর ধরে স্পট মার্কেট থেকে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে পৃথক তিনটি কোটেশনের মাধ্যমে আগামী মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য এই তিন কার্গো এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৬২০ কোটি ৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় প্রস্তাব তিনটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল
নতুন বছরের আগ মুহূর্তে কেরোসিন-ডিজেলের দাম কমল
সভা সূত্রে জানা গেছে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট হতে ১ কার্গো (২২-২৩ মে ২০২৫ সময়ে ২০তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদনের জন্য সভায় উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলার মে মাসের জন্য ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তব আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দাখিলকৃত ৫টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ভিত্তিক আরামকো ট্রেডিং সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি এই এক কার্গো এলএনজি সংগ্রহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১১.১৫ মার্কিন ডলার হিসেবে এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৫৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ১১ হাজার ৩৬০ টাকা।
সূত্র জানায়, একই প্রক্রিয়ায় জুন মাসের অন্য এক কার্গো এলএনজির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে এবং প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এই ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১১.২৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৫৪০ কোটি ৫১ লাখ ৬৪ হাজার ১২৮ টাকা।
সভায় জুলাই মাসের জন্য ও এক কার্গো এলএনজি আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দাখিলকৃত ৬টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নির্বাচিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এমবিটিইউ প্রতি এমবিবিইটএইউ ১১.৩৫৮৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৫৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ